![Image](https://cdn.newspost24.com/images/85cd4970d2cd5da40ccb96e6b6b30337.jpeg)
ই-কমার্সের উপর নজরদারির অংশ হিসেবে এবার
আরও সাতটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ
ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ। তবে হিসাব তলবের এই তালিকায় বিতর্কিত
ও আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির নাম নেই।
হিসাব তলবকারী সাত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে
রয়েছে আলেশা মার্ট, ধামাকা শপিং, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট
ও নিডস ডট কম এর নাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসব প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ
সংশ্নিষ্ট ব্যক্তির নামে কোনো হিসাব বর্তমানে বা এর আগে পরিচালিত হলে তা জানাতে বলা
হয়েছে। একইসঙ্গে হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণীও
পাঠাতে হবে। চিঠি পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয়
তথ্য পাঠাতে হবে।
এর আগে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক, ডাব্লিউটিও সেল) হাফিজুর রহমান জানান, ই-কমার্সের গ্রাহক
পণ্য বুঝে পাওয়ার পর ডেলিভারি মেসেজ দিলে বিক্রেতা মূল্য পাবেন। আর এ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ
করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গেটওয়ের মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন হবে। তবে
তার পরামর্শ ছিলো, গ্রাহকেরা যেন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ বা নগদের মতো মাধ্যম
ব্যবহার করে কেনাকাটা করেন। তারা যেন আগাম নগদ অর্থ পরিশোধ না করেন।
গত ২০ জুন ই-কমার্স নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের
এক প্রতিবেদনের পর এ বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ
ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দেনার পরিমাণ
৪০৩.৮০ কোটি টাকা। যেখানে কোম্পানিটির চলতি সম্পদ মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪ মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত
পণ্যমূল্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৩.৯৪ কোটি টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ করেনি
ইভ্যালি। অন্যদিকে, ইভ্যলি যেসব কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য কিনে থাকে ওই সব মার্চেন্টদের
কাছে কোম্পানিটির বকেয়া ১৮৯.৮৫ কোটি টাকা।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাক, সিটি, মিউচুয়াল
ট্রাস্ট, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ও প্রাইম ব্যাংক এরই মধ্যে তাদের ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রিপেইড
কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন আপাতত স্থগিত করেছে দেশের ১০টি ই-কমার্স সাইটের সঙ্গে। এগুলো
হলো- ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউকম,
বুম বুম, আদিয়ান মার্ট এবং নিডস।
শমী কায়সার বলেন, এক-দুটি প্রতিষ্ঠানের
জন্য ই-কমার্স খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা কারও কাম্য নয়। ভোক্তা ও বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থের
জন্য এ খাতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা পরিচালন নির্দেশিকা দরকার। এ ছাড়া
পেমেন্টের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি প্রয়োজন। নীতিমালা হওয়ার পর ডিজিটাল
কমার্স আইনের দিকেও যেতে হবে।
ই-ভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে
বলা হয়, তারা বিপুল ছাড় দিয়ে লোকসানে পণ্য বিক্রি করছে। যে কারণে দেশের ই-কমার্স ব্যবসায়
অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ভালো ও সৎ ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা
ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ভবিষ্যতে এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু এমন ই-কমার্স
সাইট তৈরি হয়েছে, যেগুলো গ্রাহকদের অবিশ্বাস্য ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। তবে কোম্পানিগুলোকে
আগে টাকা পরিশোধ করতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পণ্য সরবরাহ করে। তবে টাকা নিয়েও
পণ্য সরবরাহে বারবার সময়ক্ষেপণের অভিযোগ আছে। আবার তাদের ব্যবসার কৌশলটিও স্পষ্ট নয়।
এ কারণে নানা সন্দেহ-সংশয় আছে জনগণের মধ্যে।
এর মধ্যেই ই-কমার্স সাইট ইভ্যালিকে নিয়ে
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি তদন্ত চালিয়েছে। এতে বলা হয়েছে কোম্পানিটি এক টাকা আয়
করতে সাড়ে তিন টাকার বেশি ব্যয় করে। আবার তাদের সম্পদের তুলনায় দেনা ছয় গুণ। ফলে তারা
এই টাকা আদৌ পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
মূলত বিভিন্ন অফারের নামে বাজার মূল্যের
চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি, পণ্য দেয়ার অনেক আগেই টাকা নেয়া এবং সময় মতো পণ্য সরবরাহ
না করার অভিযোগ রয়েছে এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য হাতে না পাওয়া
পর্যন্ত ওই পণ্যের পেমেন্ট সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে
না। এ জন্য পণ্য অর্ডারের বিপরীতে পরিশোধিত টাকা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত
এবং সরকার অনুমোদিত মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা থাকবে।