Logo
শিরোনাম

বন্যাকবলিত নলকূপ জীবাণুমুক্ত না করেই পানি ব্যবহার

প্রকাশিত:সোমবার ০৪ জুলাই ২০২২ | হালনাগাদ:বুধবার ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১৫৪৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। ভেসে উঠছে সুপেয় পানি সংগ্রহের মাধ্যম টিউবওয়েল। সেই টিউবওয়েল জীবাণুমুক্ত না করেই চলছে পানি সংগ্রহ। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর চিত্র একই রকম। এতে বাড়ছে বানভাসিদের স্বাস্থ্যঝুঁকি। টিউবওয়েল জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহারের কথা থাকলেও বাস্তবে ঘটছে এর উল্টো। এজন্য জনসচেতনতার সৃষ্টির তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।

বন্যায় সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। ঘরবাড়ির পাশাপাশি কয়েক লক্ষাধিক নলকূপ চলে যায় বন্যার পানির নিচে। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, সিলেট ও সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে স্থাপিত টিউবওয়েলের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। বেসরকারিভাবে ব্যক্তি পর্যায়ে স্থাপিত নলকূপ এর সঙ্গে যুক্ত করলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে কয়েকগুণ। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে নলকূপের সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। তবে দুই জেলার ৯০ ভাগ এলাকার নলকূপ পানির নিচে চলে গিয়েছিল। সেসব নলকূপ জীবাণুমুক্ত না করেই পানি সংগ্রহ করে চলছে ব্যবহার। এতে গ্রামে গ্রামে বাড়ছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা।

গত জুনের মাঝামাঝি সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে সিলেট বিভাগের সবকটি জেলা বন্যাকবলিত হলেও দফায় দফায় শিকার হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার মানুষ। দুটি জেলায় বন্যায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এসব অঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র অভাব দেখা দেয়। ভারি বর্ষণ ও বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোয় পানি ওঠায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সিলেট নগরীর মানুষও পানি সংকটে পড়ে। আর বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। স্বেচ্ছাসেবী লোকজন ও সামাজিক সংগঠনগুলো ত্রাণের সঙ্গে সুপেয় পানি সরবরাহ করলেও তা ছিল একেবারেই অপ্রতুল। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সুপেয় পানি সরবরাহও পর্যাপ্ত নয়। এরই মধ্যে নিজেদের বাড়ির আঙ্গিনার নলকূপ ভেসে উঠলে অনেকে সেখান থেকেই পানি সংগ্রহ করছেন।

অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়গুলো থেকে জানানো হয়, উপজেলা পর্যায়ে প্রকৌশলীদের ডুবে যাওয়া নলকূপ জীবাণুমুক্তকরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় পাঁচ সদস্যের একটি টিম কাজ করছে। তবে বাস্তবে এ কার্যক্রমের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ফুড়ারপার গ্রামের আলিম উদ্দিন বলেন, বাড়ির আঙ্গিনার টিউবওয়েল ভেসে উঠেছে। এ টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করে তারা পান করছেন। তিনি বলেন, এত বিশুদ্ধ পানি পাব কোথায়? এজন্য নিজের টিউবওয়েলই ভরসা।

সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের জইনকার কান্দি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট আমরা কখনো চোখে দেখিনি। তিনি বলেন, অনেকেই ত্রাণ দিচ্ছে কিন্তু পানি বিশুদ্ধ করে খেতে হবে এমন ট্যাবলেট দেয়নি। সরকারিভাবে কাউকে পাওয়া তো বহু দূর।

জনস্বাস্থ্যের সিলেট সদর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. লায়েছ মিয়া তালুকদার জানান, তারা সরকারি ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে বন্যার্তদের কাছে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করছেন। মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে করে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। একটি বেসরকারি এনজিওর সহযোগিতায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট পয়েন্টে পানি সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,  এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় ২৬ লাখ ৬ হাজার ৪০০ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১১ লাখ ৭৮ হাজার, সুনামগঞ্জে ১৩ লাখ, হবিগঞ্জে ১ লাখ ১ হাজার এবং মৌলভীবাজারে ৮৫ হাজার। ১৩টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সরবরাহ করা হয়েছে। এর মাঝে সিলেট জেলায় পাঁচ ও সুনামগঞ্জে পাঁচটি রয়েছে। এছাড়া নগরীর জন্য একটি আরো দুটি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি মজুত রাখতে ১২ হাজার ১৫১টি জারিকেন বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৭১টি, সুনামগঞ্জে ৫ হাজার, হবিগঞ্জে ১১২ ও মৌলভীবাজারে ৮০টি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সিলেট জেলায় ৩৫-৪০ হাজার ও  ব্যক্তিগতভাবেও কয়েক লক্ষাধিক নলকূপ থাকতে পারে। তিনি বলেন, চলমান বন্যায় ৮০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায়। কীভাবে ডুবে যাওয়া নলকূপ জীবাণুমুক্ত করতে হয় সে বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের অবহিত করা হচ্ছে। তারা সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন। তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান।

সরকারিভাবে স্থাপিত টিউবওয়েলের তথ্য থাকলেও ব্যক্তিগত টিউবওয়েলে তথ্য তাদের কাছে নেই বলে জানান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি উপজেলায় পাঁচজনের একটি টিম প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টিউবওয়েল জীবাণুমুক্তকরণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে। জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।

সিলেট বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, বন্যা-পরবর্তী দূষিত পানি পানের কারণে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তলিয়ে যাওয়া নলকূপ জেগে ওঠার পরপরই জীবাণুমুক্ত করে নেয়া উচিত। এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সচেতন না হলে আমাদের রোগবালাই দেখা দেবে। তিনি জানান, মেডিকেল টিম প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করছে। তাদের সাধারণ মানুষকে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারে সচেতন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


আরও খবর

আতশবাজির আলোতে ঝলমলে রাজধানী

রবিবার ০১ জানুয়ারী ২০২৩

রসগোল্লার জন্মদিন আজ

মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর ২০২২