Logo
শিরোনাম

বোতলজাত পানিনির্ভরতায় বাড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্য

প্রকাশিত:রবিবার ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৬২০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

প্রকৃতিকে দূষিত করে তোলার পেছনে প্লাস্টিকের ব্যবহার বড় অনুঘটক। বিভিন্ন প্রয়োজনে তৈরি হওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রতিনিয়ত বিষাক্ত করে তুলছে সমুদ্রের পানি। অনিরাপদ হয়ে উঠছে বায়ুমণ্ডল। পরিবেশের জন্য সৃষ্ট এ ক্ষতি মেরামত সম্ভব নয়। বর্জ্যের ভারে ক্লান্ত পৃথিবী। অথচ পরিবেশবাদীদের সতর্কতা সত্ত্বেও বেড়ে যাচ্ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। প্রকৃতিতে আসা সে প্লাস্টিকের প্রধান উৎসগুলোর একটি বোতলজাত পানি। সম্প্রতি বোতলজাত পানির ব্যবহারের এ বৃদ্ধি নিয়ে সরব বিশ্লেষক ও পরিবেশবাদীরা।

ইন্টারন্যাশনাল বোটল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, উৎপাদিত বোতলজাত পানির মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ সরবরাহ করা হয় কাঁচের বোতলে। সে তুলনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ বিপুল। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই পাঁচ হাজার কোটি বোতলজাত পানি বিক্রি হয় প্রতি বছর। আর পানির সঙ্গে বিক্রি হওয়া প্লাস্টিকের বোতলের মাত্র ৯ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা হয়। বাকি অংশ রূপান্তরিত হয় বর্জ্যে। সূচকটি হতাশাজনক। যদিও শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভিমত এর বিপরীত। বলা হয়েছে, বর্তমানে পলিথিলিন টেরেফথালেট (পিইটি) থেকে তৈরি করা হয় বোতল। আর উৎপন্ন বোতলগুলো শতভাগ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব। এর মধ্যে পিইটিকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বোতলজাত পানিকে বাজারে প্রচলিত প্রাকৃতিক পানীয়ের চেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বলে দাবি করেছেন। তার ওপর আছে ২০১৪ সালের খোদ আমেরিকায় ঘটিত দূষণের ঘটনা। মিশিগানের ডেট্রয়েটে পানি দূষণের সে ভয়াবহ ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু ঘটে, যার রায় প্রকাশিত হয় ২০২১ সালে। স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃতিক পানির সরবরাহ নিয়ে জনমনে শঙ্কা রয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে বাড়ছে বোতলজাত পানির ব্যবসা। এ বছর শুধু খাতটি থেকেই ৩২ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার মুনাফা আসবে বলে দাবি বিশ্লেষকদের। সংখ্যাটা দ্রুতবর্ধনশীল। ২০২৯ সালে আয় গিয়ে দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারে।

কার্বোনেটেড পানি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে সম্প্রতি। করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী ভোক্তারা অ্যালকোহল মুক্ত পানীয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পরিস্থিতির সুযোগে দ্রুত বাড়তে থাকে কার্বোনেটেড পানির বিক্রয় সূচক। এছাড়া স্বাস্থ্য সচেতনতার অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালানো হয়েছে অ্যালকোহল ও কোমল পানীয়ের বিরুদ্ধে। তার প্রভাব পড়েছে ভোক্তার মনস্তত্ত্ব গঠনে। বিকল্প হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে বোতলজাত পানি। যদি উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বৃদ্ধির পেছনে নিয়ামক এক রকম নয়। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র কিংবা স্বল্পোন্নত দেশে বোতলজাত পানির ব্যবহার বাড়ছে মূলত নিরাপদ পানির নিশ্চয়তার অভাবে। অনেক দেশই পানির সুষম সরবরাহের কার্যকর কোনো পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ফলে পানির জন্য ভোক্তারা ছুটছে বোতলের পেছনে। কিছু দেশে তো নিরাপদ পানি বলতে বোতলজাত পানিকেই বোঝানো হচ্ছে।

বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগে বছরজুড়ে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে বোতলজাত পানি। জরুরি অবস্থায়ও পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে। বিপরীত দিক থেকে প্রাকৃতিক পানি ক্রমেই কঠিন ও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রাকৃতিক পানির সরবরাহের সীমাবদ্ধতা ও তা নিয়ে জনসচেতনতার অভাবই বোতলজাত পানীয়ের ব্যবসা বিস্তারের বড় কারণ। আর বোতলজাত পানির বিস্তার মানে প্লাস্টিকের বিস্তার। যেহেতু ইউরোপীয় শহরগুলোয় পাইপগুলোর গড় বয়স ৭৫ বছর বয়সের বেশি। ফলে গ্লাসের পানিতে পৌঁছানোর আগেই যেকোনো সময় দূষণ ঘটার আশঙ্কা থেকেই যায়। স্কটল্যান্ডের মতো দেশে সারা বছর বৃষ্টি থাকে। পানি সংগ্রহ করা সেখানে বেশ সহজ। তার পরও সেখানে বোতলজাত পানিরই প্রসার ঘটেছে দৈনন্দিন কাজে। বৈশ্বিক খাত হিসেবেও বোতলজাত পানির বাজার ঊর্ধ্বমুখী। গত বছর ২ হাজার ২৬০ কোটি ডলারের ব্যবসা ছিল এ খাতে। ফরচুন বিজনেস ইনসাইটসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৯ সালে পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ হাজার ৭০ ডলারে, যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।

বর্তমানে ইসরায়েলের প্রয়োজনীয় পানির তিন-চতুর্থাংশই আসে ভূমধ্যসাগরের পানিকে লবণমুক্ত করার মাধ্যমে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সামুদ্রিক পানিকে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও পানির জন্য অনেকাংশে লবণমুক্ত করণের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ধরনের পানি বিস্বাদ ও নীরস। এ রকম পানিতে সত্যিকার পানির স্বাদ যুক্ত ও ক্লোরিন দূর করতে বিশেষ ধরনের জগের প্রচলন করেছে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান ‌মাউ। ব্যবহার করা হচ্ছে কাচ ও পোর্সেলিন। কিন্তু এটা সত্যিকারের কোনো সমাধান না। স্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। দরকার জনসম্পৃক্ততা। প্লাস্টিকের বোতল বৃদ্ধি দিনশেষে শুভ ফলাফল বয়ে আনবে না পৃথিবী নামক গ্রহের জন্য।


আরও খবর

রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন এরদোয়ান

মঙ্গলবার ২৯ আগস্ট ২০২৩