Logo
শিরোনাম

দুশ্চিন্তায় দৌলতদিয়া ঘাটের হকার-ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত:রবিবার ১৯ জুন ২০২২ | হালনাগাদ:বুধবার ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১২৮০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সব বাধাবিপত্তি ও ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে। পরদিন ২৬ জুন থেকে সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের অনেক চাওয়া-পাওয়া। এই সেতুর মাধ্যমেই দক্ষিণবঙ্গ অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হবে। তবে সেতু উদ্বোধন ঘিরে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের মাঝে যতটা খুশির আমেজ রয়েছে তার থেকে বেশি কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দৌলতদিয়া ঘাটের খেটে খাওয়া মানুষ, হকার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে।

কারণ পদ্মা সেতু চালু হলে চাপ কমবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে। তখন আর আগের মতো রমরমা অবস্থায় থাকবে না ঘাট এলাকা। ফলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আগের মতো থাকবে না। এতে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তায় পড়বে। তাই তাদের দাবি- দ্রুত দৌলতদিয়া ঘাটকে আধুনিক নৌবন্দর করা হোক এবং তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জায়গা করে দেওয়া হোক।

স্থানীয় কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় চা-পান, ও টংয়ের দোকান রয়েছে শতাধিকের মতো। দুই থেকে তিন শতাধিক মানুষের আয়ের উৎস এই সব দোকান। এছাড়াও এই ঘাট এলাকার আশপাশে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত খাবার হোটেল রয়েছে। সেখানেও প্রায় শতাধিকের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাছাড়াও ঘাট এলাকায় ও ফেরিতে পেয়ারা, ডাব, আনারস, ডিম, বাদাম, ঝালমুড়ি, শরবত বিক্রি করেন শতাধিক ভ্রাম্যমাণ ব্যক্তি। পদ্মা সেতু চালু হলে এই রুটে যাত্রী ও যানবহন কমে যাবে, তখন তাদের বেচা-বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে ঘাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ভ্রাম্যমাণ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল মালিক ও হকাররা তাদের ব্যবসা নিয়ে যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা বোঝা যাবে সেতু চালুর এক-দুই সপ্তাহ পর। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের গুরুত্ব কমে যাবে এমনটি ভাবা যাবে না। কারণ যারা গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ, ঢাকার গাবতলী যাবেন তারা তাদের সুবিধার জন্য এই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহার করবেন। এছাড়াও ছোট পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান পদ্মা সেতু দিয়ে পার হলেও ভারী পণ্যবাহী ট্রাকগুলো এই রুট ব্যবহার করবে। এছাড়াও রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে কাঁচামালের ট্রাকগুলোও দৌলতদিয়া দিয়ে পার হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে তখন দৌলতদিয়ায় বাড়তি চাপ পড়বে না। তখন ভোগান্তি ছাড়াই সবাই নদী পার হতে পারবে।

দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার পেয়ারা বিক্রেতা আকমল শেখ বলেন, গত ১৪-১৫ দিন ধরে বেচাকেনা একদমই কম। ঘাট এলাকায় আর আগের মতো চাপ নেই। ঘাট এলাকা রমরমা থাকলে বেচাকেনা ভালো হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে তখন দৌলতদিয়া ঘাট যাত্রীশূন্য হয়ে যাবে। বেশিরভাগ দক্ষিণবঙ্গের পরিবহনগুলো সেতু ব্যবহার করবে। তখন আমরা কীভাবে সংসার চালাব? আমি ঘাট এলাকায় পেয়ারা বিক্রি করেই সংসার চালাই।

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী আহম্মদ খান। তিনি ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত এই দৌলতদিয়া ঘাটে হোটেল ব্যবসা করে আসছেন। তার হোটেলে গিয়ে দেখা যায়,  তিনি অলস সময় পার করছেন। আর তার কর্মচারীরাও ভেতরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। আহম্মদ খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার একমাত্র আয়ের উৎস এই খাবার হোটেল। আগে প্রতিদিন যেখানে ২০-৩০ হাজার টাকা বেচাকেনা হতো, এখন সেখানে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা হওয়াই কষ্টকর। নিজে খাব কী, আর কর্মচারীদের দেব কী। আমার এখন খরচই উঠছে না। পদ্মা সেতু চালু হলে তখন এই রুটের যাত্রীর চাপ কমে যাবে। তখন আমার হোটেল ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তবে এই ঘাট আধুনিক নৌবন্দর হলে তখন আমাদের ব্যবসা আবার রমরমা হবে। দ্রুতই এই ঘাটের আধুনিকায়ন করার দাবি জানান তিনি।

দৌলতদিয়া ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী টিটু শেখ, লোকমান ফকিরসহ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এই ঘাট এলাকায় অর্ধশতাধিক খাবারের হোটেল রয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় অর্ধেক হোটেলের বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ না আসলে আমাদের হোটেল চলার কোনো সম্ভাবনা নেই। দৌলতদিয়া ঘাটের হকার সুরুজ, উজ্জ্বল, শহিদুল, সাঈদসহ অনেকই বলেন, ঘাট এলাকায় যানজট থাকলে আমাদের ব্যবসা ভালো হয়। দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ির সিরিয়াল থাকলে বিক্রি ভালো হয়। কিন্তু গত ১৪-১৫ দিন হলো ঘাট ফাঁকা। আবার পদ্মা সেতু চালু হলে এই রুটে যানবাহন কমে যাবে। তখন আমরা কি করে খাব?

রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সহসভাপতি অরূপ দত্ত হলি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতিতে সাফল্য বয়ে আসবে। এই অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। গ্যাস আসবে। আমাদের দাবি দৌলতদিয়া নদী বন্দর আধুনিকায়ন করা হোক। এই বন্দর দিয়ে যদি নদী পথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয় তবে ব্যাপক সাফল্য আসবে। সেটির মূল ভিত্তি হতে পারে পদ্মা বহুমুখী সেতু।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও এর পশ্চিমে দেবগ্রাম প্রান্তে ৬ কিলোমিটার এবং পাটুরিয়া ঘাটে ২ কিলোমিটার স্থায়ীভাবে আধুনিকায়ন করতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক গত বছরের জানুয়ারিতে ৬৮০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করতে না পারা ও দ্রব্যমূল্যের দম বৃদ্ধি পাওয়াতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে আমরা নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় ধরেছি ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়াও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। বুয়েট থেকে নকশার চূড়ান্ত অনুমোদন আসেনি। যে কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, দৌলতদিয়া নদী বন্দর আধুনিকায়নের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে একটু জটিলতা তৈরি হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলেই আশা রাখি কাজ শুরু হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। তখন ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে ঘাট এলাকায় চাপ কমে যাবে। তখন সাধারণ মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই এই নৌরুট ব্যবহার করে তাদের গন্তব্যে যেতে পারবে।

রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে যানবাহন পারাপার কমে আসবে। আমরা আগামী এক মাস পর্যবেক্ষণ করব। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। তবে কোনো মানুষ কর্মহীন হবেন না। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি।


আরও খবর

আতশবাজির আলোতে ঝলমলে রাজধানী

রবিবার ০১ জানুয়ারী ২০২৩

রসগোল্লার জন্মদিন আজ

মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর ২০২২