Logo
শিরোনাম

ফেনীতে বাঁধ ভেঙে প্লাবন, কুমিল্লায় বন্যার আশঙ্কা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২১ জুন ২০২২ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১১৩৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

ফেনীতে টানা তিনদিনের প্রবল বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নতুন করে একটি স্থানে ভেঙে আরও দুই গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোমবার রাত ১২টার দিকে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকা স্থানে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর আগে সোমবার সকালে দুই ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফুলগাজী বাজার থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।

সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফুলগাজী উপজেলায় তিনটি স্থানে (উত্তর দৌলতপুর, বরইয়া ও দেড়পাড়া) ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয় বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন।

আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যায় ফুলগাজী বাজারের প্রধান সড়ক ও নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় চার শতাধিক পরিবারের সহস্রাধিক মানুষ। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুর ও মাছের ঘের। ফসলি জমিসহ ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ সবজির মাঠ।

ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম জানান, পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানির চাপে সোমবার সকালে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বরইয়া রতন মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন স্থানে, ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর সেকান্তর মাস্টার বাড়ি সংলগ্ন স্থানে ও একই ইউনিয়নের দেড়পাড়া নামক স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সদর ইউনিয়নের দেড়পাড়া, নিলক্ষী, উত্তর নিলখী, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, গাবতলা, মনতলা, গোসাইপুর, দরবারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বরইয়া ও বসন্ত পুরসহ অন্তত ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানে ভারতের পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলাকে সম্ভাব্য দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবল থেকে রক্ষার খুলে দেওয়া হয়েছে সোনাগাজীর মুহুরী রেগুলেটরের সব গেট (৪০ গেট)।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নুর নবী বলেন, সোমবার সারাদিনে মুহুরী নদীর ১২২ কিলোমিটার বাঁধের চারটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরামের কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুই উপজেলা যাতে বন্যার কবলে না পড়ে সেই বিবেচনায় অতিরিক্ত পানি সরে যেতে রেগুলেটরের সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

হঠাৎ করে সব গেট খুলে দেওয়ার বিষয়ে নুর নবী আরও বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এক দিনে মুহুরী নদীতে ১২৩ সেন্টিমিটার (১.২৩ মিটার) পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মুহুরী রেগুলেটরে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ২ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার হলেও বর্তমানে সেই প্রবাহ ৩ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার ঠেকেছে।

পানির প্রবাহ ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার হলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য অতিরিক্ত পানি সরে যেতে মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি গেট খুলে দেওয়া হয়।

ফুলগাজীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশ্রাফুন নাহার বলেন, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধে ভেঙ্গে যাওয়া স্থানগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। যেস্থানে পানি কমে গেছে সে স্থান দ্রুত মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে পাঁচশত প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার বলেন, প্রতিবছর বন্যায় এ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্থরা ত্রাণ চায় না। তারা বেড়িবাঁধে স্থায়ী মেরামত চায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান, মুহুরী নদীতে পানির ল্যাবেল ১৩ মিটার পর্যন্ত স্বাভাবিক। এর উপরে গেলে নদীর উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে। সোমবার রাতে মুহুরী নদীতে ১৪ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার (১.২৩ মিটার বৃদ্ধি) উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। বাঁধ ভাঙার খবর শুনে আমাদের লোকজন ঘটনাস্থলে যেয়ে বিষয়টি নিয়মিত মনিটর করছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে ও বাঁধের ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আরও বলেন, ইতোপূর্বে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে মেরামতের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিলো। তবে এখনও তা পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছরই প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১২২ কিলোমিটার অংশে বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে পরশুরাম ও ফুলগাজীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বিগত দেড় দশক ধরে দুই উপজেলার বাসিন্দারা স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবি জানালেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় থমকে রয়েছে নতুন বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প।


আরও খবর