Logo
শিরোনাম

মূল্যস্ফীতির চাপে কষ্টে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত

প্রকাশিত:সোমবার ১৫ আগস্ট ২০২২ | হালনাগাদ:বুধবার ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১১৬০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্য। চাল, ডাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম ও পেঁয়াজের মতো ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি নিত্যব্যবহার্য সাবান, সোডা ও টুথপেস্টের মতো পণ্যসামগ্রীর দামও বাড়ছে। ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বৃদ্ধির পথে। ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। জুনেই বেড়েছে গ্যাসের দাম। বিদ্যুতের দামও বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে একের পর এক সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে দিশাহারা সীমিত আয়ের মানুষ। আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। যার সঞ্চয় নেই, জীবননির্বাহ করতে গিয়ে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। দুর্বিষহ হয়ে উঠছে জনজীবন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ, যে কোনো জ্বালানির দাম বাড়লে সেই প্রভাব সামষ্টিক অর্থনীতিতে ৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। এ সময় দেশে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটবে। এর পর পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্যে। সংস্থাটির হালনাগাদ তথ্যমতে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে ৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এই তিন মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছিল ৭ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২২ সালের একই সময়ে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। গত মার্চে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার, আগের বছরের একই সময়ে নিট বিক্রি ছিল ৩ হাজার ৮৯১ কোটি টাকার। এপ্রিলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে ৫১১ কোটি টাকা। মে মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ৬৩৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরে একই মাসে ছিল ২ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। মে মাসে সঞ্চয় কমেছে ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছেন। নতুন করে সঞ্চয় করতে পারেননি।

করোনার ধাক্কা পুরোপুরি সামাল দেওয়ার আগেই এখন মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় নতুন লড়াই শুরু করেছেন দেশের মানুষ। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর পরিবহন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে। যাত্রীবাহী বাসের নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। কৃষি ও শিল্পপণ্যের উৎপাদনখরচ বেড়ে যাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর শতভাগ ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অর্থমন্ত্রীও দ্রব্যমূল্য বাড়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ: দ্রব্যমূল্য কমাতে এ মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে দিশাহারা মানুষ। এ কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়েও এ মুহূর্তে ভাবা হচ্ছে না। যদিও চলতি বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এ হার গত ৮-৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যসূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। খাদ্যসূচকে গত বছরের একই মাসের চেয়ে বেড়েছে ৩ দশমিক ১১ শতাংশীয় পয়েন্ট। আর জুলাইয়ে খাদ্যবহির্ভূত সূচকে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এ সূচকে এক বছরে বেড়েছে মাত্র ৪৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। জ্বালানি তেল ও পরিবহন ভাড়া খাদ্যবহির্ভূত সূচকের মধ্যে পড়ে। ফলে এখন এ সূচকে বাড়তি চাপ তৈরি হবে, পাশাপাশি খাদ্যের দামও বাড়বে জ্বালানি তেলের কারণে। ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ৯ মাসের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে স্বল্পমেয়াদি বেশকিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, করোনার পর অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। ইদানীংকালে এমন কিছু ঘটেনি যে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমবে। এতে বোঝা যায় মানুষের আয় কমেছে মূল্যস্ফীতির কারণে। আর মানুষ ঋণ করছে ঘাটতির কারণে। গত এক বছরে যা ঘটেছে সব মূল্যস্ফীতির কারণে। ফলে সঞ্চয় কমে যাওয়া এবং ঋণ বৃদ্ধি পাওয়া দুটো সূচকই মূল্যস্ফীতির কারণে হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, কোভিডের কারণে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। এর সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ঘটছে। জিডিপির অনুপাতে গত কয়েক বছরে সঞ্চয়ের পরিমাণ কমেছে। আর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ দীর্ঘদিন ধরেই স্থবির ছিল। সঞ্চয় কমে যাওয়ায় বিনিয়োগের ওপরও বড় ধরনের চাপ পড়বে। তা হলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে। প্রাক-কভিডকালে আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান ঋণাত্মক ছিল। করোনার আগেই শিল্প খাতে কর্মসংস্থান ঋণাত্মক ছিল। অর্থাৎ একধরনের বিশিল্পায়ন হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষি খাতে জনসংখ্যার তুলনায় চাল ও গমের উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় বড় রকমের চাপ তৈরি হচ্ছে। কোভিডকালে দেখা গেছে বাইরের ধাক্কা সহ্য করার ক্ষমতা কম। ফলে করোনাকালে এ অভিঘাতে দেশে নতুন করে দারিদ্র্য তৈরি হয়েছে। সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি না থাকায়, প্রকৃত মজুরি না বাড়ায় এবং অধিকাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত হওয়ায় দ্রব্য মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয়নির্বাহের সংকট চলছে।

নিউজ ট্যাগ: মূল্যস্ফীতি

আরও খবর

আতশবাজির আলোতে ঝলমলে রাজধানী

রবিবার ০১ জানুয়ারী ২০২৩

রসগোল্লার জন্মদিন আজ

মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর ২০২২