Logo
শিরোনাম

পর্যটকের অপেক্ষায় থাকেন মায়ালেকের নুরুল হক

প্রকাশিত:শনিবার ২৫ জুন ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৯১৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

চারপাশে পাহাড়। মাঝখানে একটি লেক, নাম মায়ালেক। লেকের ওপরে পাহাড়ি বাগান। লেক ও বাগানের মালিক হেডম্যান মং কিয়া মং। আশপাশে কেউ নেই। শুধু পাহাড়। সেই পাহাড়ের চড়াই-উতরাই ধরে আছে নানা ধরনের গাছের সমারোহ। শুধু সবুজ। আর আছে একটি ঘর। একেবারে হঠাৎ পাহাড়ের গায়ে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এক ঘর যেন। প্রথম দেখায় চমকে উঠতে হয়। আশপাশে আর কিছু নেই, কেউ নেই। সেই ঘর নুরুল হকের, যিনি পর্যটকের পদধ্বনীর অপেক্ষায় বসে থাকেন। নুরুল হক হেডম্যান মং কিয়া মংয়ের লেক ও বাগানের দেখাশোনা করেন। লেকের পাড়ে ছোট্ট একটি বাড়িতে নুরুল হক তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। আশপাশে আর কোনো বাড়ি-ঘর নেই; শুধু পাহাড়।

নরুল হককে মাসিক ভিত্তিতে টাকা দেন মং কিয়া মং। ছোট্ট বাড়িটিও করে দিয়েছেন হেডম্যানই। স্ত্রীকে নিয়ে সেই বাড়িতে কাটে নুরুলের জীবন। বাড়িতে দুটি ঘর। আসলে বাড়ি বললে ভুল হবে। এটা এতই ছোট যে, একটি ঘরই বলা যায়। বাড়ির সামনে ছোট বারান্দা। বারান্দার কোনে একটি হেঁশেল। সেখানেই রান্না করেন নুরুল হকের স্ত্রী। পেছনের ছাউনিটা ছোট। সেখানে থাকে তাঁর পালিত গরু। তাঁর স্ত্রী বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছেন, অভাবের সংসারে যা তাঁদের খাবারের অভাব কিছুটা দূর করে।  বাড়ির চারপাশে তাকালে বোঝা যায়, খুব যত্ন করে স্বামী-স্ত্রী এই গাছ লাগিয়েছেন। পাহাড়ি শিম, পেঁপে, কলা, বেগুন, মরিচ গাছ দিয়ে বাড়িটি ঘিরে রেখেছেন নুরুল হক।

কথা হয় নুরুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, পাঁচ বছর হলো তিনি মায়ালেক ও বাগানের দেখাশোনা করছেন। এখন তাঁকে না বলে কেউ বাগান থেকে কাঠ বা পাতা নিতে পারেন না। তাঁকে যে সম্মানী দেওয়া হয়, তা দিয়ে তাঁর সংসার চলে যায়। নুরুল হকের সংসারে তাঁর স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে পাঁচ সন্তান। তিন ছেলে, দুই মেয়ে। তাঁরা থাকেন থানচি বাজারের দিকে। বাগান ও লেক পাহারা দিয়ে যে টাকা পান, তা দিয়েই সন্তানদের নানা চাহিদা মেটান তিনি। জন্মেছিলেন কক্সবাজারের চকোরিয়ায়। সেখান থেকে চলে আসেন বান্দরবান। সেই হট্টগোলের দুনিয়া থেকে এই নীরব, শান্ত পাহাড়ের গায়ে একটি ছোট্ট ঘর তুলে নুরুল কী করে পার করছেন জীবন? মায়া লেকের মায়ায় কি তবে বাঁধা পড়লেন? নাকি অন্য কিছু?

নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলে অবশ্য এমন প্রশ্নকে অহেতুকই মনে হলো। তাঁর কাছে এখানে একটা জীবন কাটানো কোনো সমস্যাই নয়। একা থাকার ভয়ের প্রশ্ন উঠতেই উড়িয়ে দিলেন ভয়-ডর করি না বলে। বললেন, মায়া লেকের মায়ার টানে যারা আসেন, তাঁদের দেখতে ভালো লাগে তাঁর। কোনো সমস্যা হয় না। উপার্জন নিয়েও নেই কোনো অভিযোগ। হেডম্যান তাঁকে একটা নৌকা গড়ে দিয়েছেন। পর্যটকেরা সেখানে গিয়ে নৌকা নিয়ে ঘুরে ফিরে আসার সময় যে যা ইচ্ছে দেন। সেটা ২০/৫০/১০০যা-ই হোক। কখনো কারও কাছ থেকে চেয়ে নেন না তিনি। আবার এই আয়ে ভাগ বসান না হেডম্যানও।

মায়ালেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকেরা তাই নুরুল হকের কাছে শুধু পর্যটক নন। তিনি তাঁদের গণ্য করেন নিজের কথা বলার সঙ্গী হিসেবে। বাড়তি উপার্জনের একটা বিষয় তো আছেই। তার চেয়েও বেশি সম্ভবত, এই বিস্তীর্ণ পাহাড়ের মাঝখানে একাকী একজন নুরুল হক ও তাঁর স্ত্রীর দুটি কথা বলার তৃষ্ণা। সে তৃষ্ণা মেটাতে পারে শুধু পাহাড়ের টানে মায়ালেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকেরাই। তাই নুরুল হক নিজের অজান্তেই বসে পর্যটকদের পদশব্দের প্রতীক্ষা করেন।

নিউজ ট্যাগ: মায়ালেক

আরও খবর

অরণ্যযাপনের আগে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন

বৃহস্পতিবার ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩