Logo
শিরোনাম

রায়গঞ্জে চারশত বছরের পুরাতন বটগাছটি হারায়নি তার যৌবন

প্রকাশিত:রবিবার ০৮ আগস্ট ২০২১ | হালনাগাদ:রবিবার ২৬ নভেম্বর ২০২৩ | ৪৬৪৫জন দেখেছেন
Image

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

চারদিকে সবুজের সমারোহ, বাতাসে ভেসে আসে পাখির কলকাকলি ডাক। গাছের পাতার শীতল বাতাস আর ডালে ডালে বসা পাখির ডাক, সব মিলে তৈরি হয়েছে প্রশান্তির এক আবহ। প্রায় চার বিঘা জমিতে বিস্তৃত এক বট গাছের ডাল পালা ছড়িয়ে আছে চারদিকে। চারদিকে ছড়িয়ে থাকা একেকটা ডালপালা, শাখা-প্রশাখাকে দেখে মনে হয় পরম মমতায় বাড়িয়ে দেওয়া হাত। গাছের নিচে বসলে শীতল সমীরণ হাওয়ায় যেন উঠতে মন চায় না। করতোয়া নদীর শাখা খালের ধারে চারদিকে জাল/বও ছড়ানো এ বটগাছটির নিচে বসলে প্রকৃতির মায়ায় পড়ে যায় পথচারীরা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মিলবে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সরাইদহ বট ভূমিতে। সরাইদহ-চরপাড়া গ্রামে রয়েছে হৃদয় ছুয়ে যাওয়া এই চারশত বছর বয়সী একটি বট গাছ। তবে এখনও হারায়নি তার পুরানো যৌবন। প্রায় ৪ শত বছরের বটগাছ হলেও রয়েছে তার জৌলুষ। দেখে মনে হয় তরুতাজা পাতায় ঢাঁকা নতুন বটগাছ।

চার বিঘা জমির উপর প্রায় চার শত বছর ধরে (গাছের বয়স কেউ বলতে পারে না) দাঁড়িয়ে আছে এই বট গাছটি। গাছের শাখা-প্রশাখা ডাল পালা মাটির সঙ্গে তৈরি করেছে আত্মিক সম্পর্ক।  গাছটির চারদিকে বও নেমে দেখে বোঝাই মুশকিল তার আসল গুড়ি কোনটি। গাছটির চারদিকে প্রায় শতাধিক বও নেমে একেকটি গাছে পরিণত হয়েছে।  প্রবীণ মুরুব্বিদের মতে, বহু পুরোনো বট তলাটিতে সাধু ঋষিদের ধ্যান ধারণার জায়গা ছিলো। এক সময় এখানে বিভিন্ন দেব-দেবীর পুজা অর্চণা করা হত। বর্তমানে এখানে আর সাধু সন্যাসীদের দেখা না পেলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থীতে ভরপুর থাকে। চড়পাড়া নামে খ্যাত এই বট তলায় প্রতিবছর চৈত্র মাসে বারুণী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় হিন্দু, মুসলিম সহ সকল শ্রেণি, পেশার মানুষ অংশ নেয়।  বিভিন্ন স্থান থেকে এ মেলা দেখতে লোকজন আসে ।

চারপাশে গ্রাম, মাঝখানে নদীর ধারে এ বটগাছটি। চারদিকের জমির মালিকসহ স্থানীয় লোকজন আপন মমতায় টিকে রেখেছে বটগাছটি। ডালপালা, বও যেন না ভাঙ্গে সে জন্য রয়েছে তাদের কঠোর নজর। এতে গাছের সৌন্দর্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এলাকার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে সরাইদহ-চরপাড়া গ্রামের এ বটগাছটি। শীতল ছায়া, পাখির কলকাকলি, সবুজ শ্যামল এ স্থানটিতে অবসরে বসে থাকলে মনের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায় । পথচারী, দর্শনার্থীদের আকর্ষণীয় করে তোলে এ অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য মমতাময়ী বটগাছ।

বট তলার দোকানী আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারী ছুটির দিনে এখানে অনেক দুর দুরান্ত থেকে মানুষ আসে পুরানো বটগাছটি দেখতে । ঈদ,পূজা অথবা অন্যান্য উৎসবে এখানে অনেক দর্শনার্থীর ভীড় হয়। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বটগাছের ইতিহাস শুনে স্বচক্ষে দেখতে আসে এখানে। বিশেষ করে চৈত্র মাসে বিশাল এ বট গাছের নিচে মেলা বসে। এ এলাকার ঝি- জামাইরা ঈদে শ্বশুর বাড়িতে না আসলেও বছরের মেলা উপলক্ষ্যে তারা স্বপরিবারে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসে। মেলায় সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতি যেন মনে হয় এক মিলন মেলা।

আঁশি বছর বয়সী ছোরহাব আলী বলেন, আমি জন্মের পর থেকে এ গাছটি এমনই দেখতেছি। গাছের সঠিক বয়স কেউ বলতে পারে না। আমাদের ধারণা এ গাছের বয়স চারশত বছরের মতো।

হাফিজুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ বলেন, এ এলাকার সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি ছিলেন বিশু হাজী। সে এক শত বিশ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে বলেছেন, তার দাদাও নাকি বটগাছটি এমনই দেখেছেন। আমরাও জন্মের পর থেকে এমনই দেখতেছি । গাছের সঠিক বয়স আমরা জানি না। তবে সবারই ধারণা গাছটির বয়স চারশত বছরের মতো।

বেড়াতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, জায়গাটি অনেক নিরিবিলি এবং খুবই সুন্দর হওয়ায় মাঝে মাঝে এখানে বেড়াতে আসি। এখানে আসলে প্রকৃতির ছোয়া পাওয়া যায়। শীতল বাতাস পাখির কলকাকলিতে মন সতেজ হয়।

রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান খান বলেন, বটগাছটি অনেক পুরাতন। গাছের সঠিক বয়স কেউ বলতে পারে না। বাবা দাদাদের মুখে বটগাছটির অনেক গল্পও শুনেছি। বয়সের ক্রমানুসারে বিশ্লেষণ করলে বটগাছটির বয়স আনুমানিক বয়স চারশত বছর হতে পারে। বয়সের সাথে গাছের বও, ডাল পালা চারপাশে ছেয়ে একেকটি গাছ হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ বটগাছটি দেখতে লোকজন এখনও আসে। এলাকাবাসী জানায়, প্রাচীন এ বটগাছটি আমাদের এলাকার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তবে মহাসড়ক থেকে বটগাছ এলাকা সরাইদহ-চরপাড়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় এখানে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের যাতায়াতে চরম নাজেহাল হতে হয়। বৃষ্টি কাঁদার দিনে তাদের যানবাহন অনেক দুরে রেখে আসতে হয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসীর জোর দাবী, জরুরী রাস্তাটি পাকা করণ করা হোক।

নিউজ ট্যাগ: সিরাজগঞ্জ

আরও খবর

অরণ্যযাপনের আগে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন

বৃহস্পতিবার ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩