Logo
শিরোনাম

শিক্ষার্থীদের জন্য সেরা ডিভাইস কোনটি

প্রকাশিত:রবিবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৩ নভেম্বর 20২৩ | ৭৪০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

শিক্ষাজীবনে কম্পিউটার এখন অন্যতম অনুষঙ্গ। তবে ব্যক্তিগত কম্পিউটার বহন করার সুযোগ না থাকায় অনেকে ল্যাপটপ কিনে থাকে। এখানেও দুটি ধরন রয়েছে। তাই ল্যাপটপ না ক্রোমবুক কোনটি কেনা ভালো হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে প্রশ্ন জাগে। ক্রোমবুক মাত্র এক দশক ধরে ব্যবহূত হচ্ছে। ফলে অনেক অভিভাবকই ক্রোমবুক সম্পর্কে খুব একটা জ্ঞাত নন। এমনকি ক্রোমবুককে অনেকে ল্যাপটপের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ নাকি থিন ও লাইট ল্যাপটপ বা ক্রোমবুক কোনটা সেরা তা নির্ধারণের জন্য প্রথমে দুটি ডিভাইসের মধ্যে পার্থক্য বোঝা জরুরি। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকরাডার বহু বছর ধরে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্রোমবুকসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য পর্যালোচনা করে আসছে। ক্রোমবুক ও উইন্ডোজ ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য টেকরাডারের নির্দেশনাগুলো সহায়ক হবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশারদরাও। এগুলো জানা থাকলে সহজেই সেরা ডিভাইসটি বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। ল্যাপটপ সম্পর্কে সবারই জানা। সুতরাং শুরুতেই জানতে হবে ক্রোমবুক কী। ল্যাপটপ থেকে এটি কীভাবে আলাদা।

ক্রোমবুক মূলত ল্যাপটপের ছোট ভার্সন। তবে এর অপারেটিং সিস্টেম মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ বা ম্যাকওএসের মতো নয়। এটি লিনাক্সভিত্তিক ক্রোম অপারেটিং সিস্টেমে চলে। তবে কিছু মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশন গুগল প্লে স্টোর থেকে ইনস্টল করা যাবে। সেক্ষেত্রে উইন্ডোজ বা ম্যাকবুক ল্যাপটপের মতো অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে না। ডিভাইসটি প্রাথমিকভাবে গুগল ক্রোম ব্যবহার করে নানা ধরনের কাজ করে, যেখানে অধিকাংশ অ্যাপ ও ডাটা ডিভাইসে নয়, ক্লাউডে জমা থাকে। এটি সাধারণত ১০ থেকে ১৪ ইঞ্চির মধ্যে হয়। সবচেয়ে বড় ক্রোমবুকও ১৫ দশমিক ৬ ইঞ্চির ল্যাপটপের চেয়ে ছোট।

ক্রোমবুকে একটি লাইটওয়েট অপারেটিং সিস্টেম থাকে, যা মূলত ক্রোম ব্রাউজারনির্ভর। অর্থাৎ ক্রোম ব্রাউজার দিয়ে ল্যাপটপে যেসব সেবা পাওয়া যায় ক্রোমবুকেও সেসব সুবিধা রয়েছে। তার মানে এই নয়, ক্রোমবুক ব্যবহার করতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতেই হবে। অপারেটিং সিস্টেমটি ক্রোম ওয়েব স্টোর বা গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে ওয়ার্ড প্রসেসর ও স্প্রেডশিট থেকে দ্রুত ফটো এডিটিং এবং হালকা গেমিং পর্যন্ত সব বেসিক কাজ করা যায়। এসব অ্যাপের মধ্যে অনেকগুলোই ক্রোমবুক ইন্টারনেটে যুক্ত না থাকলেও কাজ করে।

ল্যাপটপের সঙ্গে ক্রোমবুকের পার্থক্য: ক্রোমবুক ও ল্যাপটপের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, ক্রোমবুকে র‍্যাম অনেক কম হয়। বেশির ভাগ ক্রোমবুকে সর্বোচ্চ ৮ জিবি র‍্যাম দেয়া হয়। অন্যদিকে একটি ভালো ল্যাপটপে ১৬ জিবি পর্যন্ত র‍্যাম দেয়া হয়। ল্যাপটপের তুলনায় ক্রোমবুকের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি অনেক কম থাকে। ৬৪ জিবি পর্যন্ত ম্যাক্সিমাম স্টোরেজ ক্যাপাসিটি পাওয়া যায়। অটোমেটিক্যালি যেকোনো ফাইল গুগল ড্রাইভে সেভ হয়। লিমিটেড স্টোরেজ অপশন থাকে। এছাড়া এর প্রসেসর অনেক দুর্বল হয়। ফুল এইচডি ডিসপ্লে পাওয়া গেলেও ল্যাপটপের তুলনায় কোয়ালিটি তেমন ভালো হয় না। কি-বোর্ডের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

বাহ্যিক দৃষ্টিতে ক্রোমবুক ও ল্যাপটপ দেখতে একই রকম। প্রযুক্তিগতভাবে ক্রোমবুকও একটি ল্যাপটপের মতোই। শুধু অপারেটিং সিস্টেমের কারণেই ভিন্ন। উভয় ডিভাইসেই একটি কি-বোর্ড, একটি ক্যামেরা, একটি বিল্ট-ইন স্ক্রিন ও ট্র্যাকপ্যাড আছে। ল্যাপটপের মতো ক্রোমবুকও ফোল্ডেবল। ক্রোমবুক ও ল্যাপটপের মূল পার্থক্য অভ্যন্তরীণভাবে। ল্যাপটপে ইন্টেল বা এএমডি কোম্পানির শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ল্যাপটপে থাকে ইন্টিগ্রেটেড বা ডিস্ক্রিট গ্রাফিকস কার্ড। ক্রোমবুক থেকে আলাদা করার জন্য এটি অন্যতম ফিচার। অন্যদিকে, ক্রোমবুকে সাধারণত নিম্নমানের চিপ ও গ্রাফিকস কার্ড ব্যবহার করা হয়। যদিও কয়েকটি প্রিমিয়াম ক্রোমবুক ইন্টেল কোর চিপ ব্যবহার শুরু করেছে। তবে ক্রোমবুকের অপারেটিং সিস্টেম লাইট-ওয়েট হওয়ায় এটি চালানোর জন্য শক্তিশালী চিপের দরকার হয় না। এছাড়া কম ক্ষমতাসম্পন্ন চিপ ব্যবহার করায় ক্রোমবুকের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ল্যাপটপ অনেক বেশি শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১১, ম্যাকওএস ও ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্সের সাহায্যে পরিচালিত হয়। সেরা উইন্ডোজ ল্যাপটপ, ম্যাকবুক ও ম্যাক ল্যাপটপের জন্য সাধারণত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিপিইউ, জিপিইউ ও ফার্স্ট মেমোরির প্রয়োজন হয়। এর ফলে এ ডিভাইসগুলোর উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্য বেশি হয়। এ ডিভাইসের সুবিধা হলো শিক্ষার্থীরা একই কম্পিউটার ব্যবহার করে একটি টার্ম পেপার লিখতে পারে এবং কাজ শেষে যখন বিরতির প্রয়োজন হয় তখন গেমও খেলতে পারে। উইন্ডোজ ল্যাপটপে কমপক্ষে ১২৮ গিগাবাইট থেকে শুরু করে ১/২ টেরাবাইট লোকাল স্টোরেজ থাকে। ল্যাপটপের অ্যাপ্লিকেশন ও ফাইলগুলো এসব স্টোরেজে জমা হয়। আর ক্রোমবুকে তুলনামূলক অত্যন্ত কম স্টোরেজ থাকে। ক্রোমবুকে কখনো ৩২ গিগাবাইট স্টোরেজও দেখা যায়। কেননা ক্রোম অপারেটিং সিস্টেমে চালিত অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ডাটা ক্লাউডে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা রয়েছে।

ক্রোমবুক নাকি ল্যাপটপ; স্কুল ওয়ার্কের জন্য কোনটা ভালো: স্কুলের কাজের জন্য ক্রোমবুককে এগিয়ে রাখতে হবে। কেননা অনলাইন ক্লাস, ব্রাউজিং, সোশ্যাল মিডিয়া সার্ফিং, ওয়েব মিটিং, ওয়ার্ড প্রসেসিং, ভিডিও ও অডিও স্ট্রিমিংয়ের জন্য ক্রোমবুক একটি আদর্শ ডিভাইস। স্টোরেজ কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো গুগল ড্রাইভে সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া বাড়তি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট রাখার জন্য এসডি কার্ড কিংবা ইউএসবি ড্রাইভও ব্যবহার করা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা গুগল ডকুমেন্টস ফিচার ব্যবহার করে তাদের হোমওয়ার্ক করতে পারে, যা সরাসরি তাদের শিক্ষক বা অভিভাবকদের কাছে শেয়ার করা যায়। হোমওয়ার্ক প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয় না। মাইক্রোসফট অফিস সুটটি অনলাইনেও পাওয়া যায়। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা সহজেই ওয়ার্ড ডকুমেন্ট তৈরি করতে পারে। এছাড়া ক্রোমবুক কিছুটা মজবুত বডির হয়, যা খুব সহজে ভাঙে না। ভাইরাসযুক্ত প্রোগ্রাম ইনস্টল হয়ে থাকলে সহজেই মুছে ফেলে পুনরায় সেট করা যায়।

আরেকটি বিষয় হলো এ ডিভাইসগুলোর দাম। ক্রোমবুকের দাম শুরু হয় ১০-১২ হাজার টাকা থেকে, যেখানে ভালো মানের ল্যাপটপ কিনতে গেলে ৪০-৫০ হাজার টাকা গুনতে হয়। ক্রোমবুকের ফ্লেক্সিবিলিটি অনেক বেশি, প্লাস্টিকের কেসিং হওয়ায় ওজনও কম হয়। অধিকাংশ ক্রোমবুকের ওজন এক কেজিরও কম, এমনকি ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। তবে কেউ যদি প্রোগ্রামিং, কোডিং, হাই লেভেল ফটো এডিটিং করতে চায় সেক্ষেত্রে ক্রোমবুক ভালো ডিভাইস নয়। যেহেতু এর প্রসেসর নিম্নমানের এবং স্টোরেজ ক্যাপাসিটিও অনেক কম।

কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন: সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পরীক্ষামূলকভাবে একটি ক্রোমবুক ব্যবহার করে দেখা। কয়েকদিনের জন্য ডেস্কটপ কম্পিউটারে শুধু গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করে দেখা যায়। একজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রয়োজনীয় সব ফিচার যথাযথভাবে পাওয়া যাচ্ছে কিনা, সেটা বিবেচনা করতে হবে। শুধু ক্রোম এক্সটেনশন ও গুগল ডক্সের মতো অনলাইন অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।: যদিও উইন্ডোজ ল্যাপটপে পরিপূর্ণ কম্পিউটিং অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়, তবে ক্রোমবুকের ক্রয়মূল্য কম। একজন শিক্ষার্থীর শ্রেণীকক্ষে যা প্রয়োজন ঠিক তা ক্রোমবুকে পাওয়া যায়। সুতরাং প্রয়োজন ও আর্থিক বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে কোন ডিভাইসটি কিনলে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করা যাবে সেটি ব্যবহারকারীকেই নির্ধারণ করতে হবে।


আরও খবর

কমেছে রোলেক্স ও প্যাটেক ফিলিপ ঘড়ির দাম

বুধবার ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩