Logo
শিরোনাম
ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি

শিক্ষককে মারধর করেও বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে না অছাত্র সোহাগ

প্রকাশিত:শুক্রবার ০১ এপ্রিল ২০২২ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ২৬৫৫জন দেখেছেন
Image

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক হয়ে শিক্ষককে মারধর করেও বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে না অছাত্র সোহাগ বেপারী, সাধারণ সম্পাদক রাসেল জমাদ্দারসহ তাদের সঙ্গীরা। এমনটাই অভিযোগ শরীয়তপুরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

ছাত্রদল কর্মী সোহাগ-রাসেলকে সভাপতি-সম্পাদক করে একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র এগারোদিন আগে তৎকালীন শরীয়তপুর সরকারি কলেজ বর্তমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ শাখা কমিটি ঘোষণা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাঁদা দাবীর অভিযোগে বহিস্কৃত সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। নির্বাচনের মাত্র এগারোদিন আগে স্থানীয় আ.লীগ নেতাদের সুপারিশে ছাত্রদল কর্মীদের নিয়ে এই কমিটি ঘোষণা হয়েছিল বলে তখনই অভিযোগ উঠেছিল প্রকৃত ছাত্রলীগ কর্মীদের মাঝে।

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি থেকে নির্বাচিত শরীয়তপুর-০১ আসনের সাবেক সাংসদ সরদার একেএম নাসির উদ্দিন কালুর কর্মী সোহাগ বেপারী ও রাসেল জমাদ্দারকে বিএনপি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত থেকে ফটোশেসনে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা পুত্র দুর্নীতিবাজ পালাতক তারেক রহমানের ৬ষ্ঠ কারা মুক্তি দিবসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, শরীয়তপুর কলেজ শাখার ব্যানারে র‌্যালী ও আলোচনা সভায় দেখা গিয়েছে রাসেল জমাদ্দারকে। ছাত্রদলের কর্মী হয়েও জেলার প্রধান কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের মতন মূল দায়িত্বে কীভাবে তারা আসলেন, তা নিয়ে কমিটি হওয়ার পর সোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা দেখা গিয়েছে তখন। সম্প্রতি কলেজ শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় বিষয়টি এখন আবার সোশাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে মামলা নিচ্ছে না পুলিশ, এমনটাই অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

সোহাগ বেপারী ২০১২ সালে স্থানীয় পালং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে শরীয়তপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে ছাত্রদল কর্মী সোহাগ বেপারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি যখন হোন তখন তিনি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন না। কলেজ সভাপতি হওয়ার প্রায় ১ বছর পর ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ডিগ্রী পাস কোর্সে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন তিনি। কলেজের শিক্ষার্থী না হলেও কলেজ প্রশাসন সোহাগ বেপারীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি করার কারণে বেপোয়ারা হয়ে ওঠে সোহাগ। সোহাগ-রাসেলকে কলেজের বিভিন্ন দিবস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠে প্রথম সাড়িতে বসতে ও বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে কলেজ প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রাইভেট পরীক্ষার্থী সোহাগ নিজে পরীক্ষা না দিয়ে হাসেম হাওলাদার নামক এক যুবককে দিয়ে সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ায়। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর সোহাগের ডিগ্রী পাস কোর্স পরীক্ষার প্রক্সি দিতে গিয়ে হাসেম হাওলাদার নামক ঐ যুবক ১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন। এছাড়াও সোহাগ বেপারী ছাত্রলীগের পদবী ব্যবহার করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল পৌঁছে দিত। এতকিছু প্রমাণ হওয়ার পরেও সোহাগ বেপারী অদৃশ্য এক কারণে আইনের দৃষ্টির উর্ধ্বে থেকে যান।

শরীয়তপুর কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নে ক্লাস রুম, হোস্টেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ থেকে লক্ষ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সোহাগ-রাসেল কমিটির বিরুদ্ধে। গত করোনাকালীন সময়ে শরীয়তপুর কলেজ ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে বাৎসরিক শিক্ষা সফর হয়নি কিন্তু শিক্ষা সফরের টাকা সোহাগ-রাসেল কলেজ প্রশাসনকে চাপ সৃষ্টি করে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও গত তিন বছরে কলেজের ভর্তি ফরম পূরণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থেকে সোহাগ-রাসেল লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সোহাগ-রাসেল ক্লাস ও পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গিয়ে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করত। তারা কারণে অকারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটাত।

ছাত্রদল কর্মী থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক বনে যাওয়া সোহাগ-রাসেল বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে সর্বশেষ গত বুধবার (২৯মার্চ) কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষার অনুষ্ঠানে খাবারের দাওয়াত না করায় বাংলা বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. অরেছুল আজমকে গালাগাল ও একই বিভাগের প্রভাষক বিএম সোহেলকে লাত্থি মেরে মারধর করেন দলবল নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে কলেজ প্রশাসন বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে ছয়নয় করে মামলাটি গ্রহণ করেননি পালং থানা পুলিশ বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ।

কলেজ শিক্ষককে মারধর ও মামলা না নেওয়ার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা গতকাল বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করে শিক্ষক হেনস্থাকারীদের চিহ্নিত করে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল করে আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওয়ায় আনার দাবি জানিয়েছে।

শিক্ষক লাঞ্চিত করার অপরাধে ৩১ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সোহাগ-রাসেলকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার না করে কমিটি বিলুপ্ত করেছে জেলা ছাত্রলীগ।

কলেজের উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান একটি মিটিয়ে আছেন বলে জানিয়ে বলেন এখনও মামলা হয়নি। সোহাগ কলেজের ছাত্র না হলেও কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কীভাবে নিমন্ত্রণ পায় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাদেরকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সম্পাদক যদি দায়িত্ব দেয় তাহলে আমাদের কী করার আছে? সোহাগ ছাত্রলীগের কলেজ সভাপতি হিসেবে এসব অনুষ্ঠানে থাকত। তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে মুঠোফোনের লাইনটি বন্ধ করে দেন এসময়।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জনের মাধ্যমে এঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন।


আরও খবর