Logo
শিরোনাম

সৌরশক্তি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় প্রকল্প সমুদ্রে

প্রকাশিত:রবিবার ২৯ জানুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩৫০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বহু বছর ধরেই দেশে-বিদেশে খোলা জায়গায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে এই সূর্যরশ্মিকে কাজে লাগিয়েছে। বাড়ির ছাদ থেকে শুরু করে খোলা মাঠে সোলার প্যানেল তৈরি করে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হচ্ছে বহু স্থানে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী দেশে বর্তমানে ১৯টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প কাজ করছে। তবে সবগুলোই স্থলভূমিতে।

কিন্তু জলাশয়ে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে অনেক দেশেই আরও বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। স্থলভূমির চেয়ে সমুদ্রে নির্মিত সোলার প্যানেল অনেক বেশি কার্যকরী। যে কারণে এসব প্রকল্প আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলো বেশি জনপ্রিয় ও প্রয়োজন হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ দুরূহ। যে কারণে বর্তমানে গ্রামীণ জনপদে ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে সোলার প্যানেল ব্যবহার বেশি দেখা যায়।

উদাহরণস্বরূপ ১০ হাজারের বেশি দ্বীপের একটি দেশ ইন্দোনেশিয়ায় দেশজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। দেশটিতে মাত্র ১০ লাখ মানুষ জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত। তাই সৌরশক্তি সেই দ্বীপগুলোকে শক্তি সরবরাহ করার একটি বিকল্প উপায়। গত কয়েক দশকে সোলার প্যানেল অনেকটা সস্তা হয়ে ওঠায় প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) বলছে, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য সবচেয়ে সস্তা বিকল্প হয়ে উঠছে এই সৌরশক্তি।

কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের খামারগুলো প্রচুর জায়গা নেয়। ফলে চাষের জমি ও আবাসনের স্থানে এই খামার করা মুশকিল। তাই বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা সমুদ্রের পৃষ্ঠে সৌর প্যানেল নির্মাণের কাজ করছেন, যা কাছাকাছি উপকূলে বসবাসকারীদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। তবে যেসব দেশ সমুদ্রতীরবর্তী নয়, সেখানে ভাসমান এই সোলার প্যানেল সমুদ্রের পরিবর্তে হৃদ, পুকুর বা অন্য জলাশয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়ির ছাদের সোলার প্যানেলের চেয়ে জলাশয়ে তৈরি সোলার প্যানেল ৫ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে বিদ্যুৎ উৎপাদনে, কারণ সমুদ্রের পানি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার প্যানেল এখন সিঙ্গাপুরে এবং সেটি সমুদ্রে ভাসমান সোলার প্যানেল। দ্বীপরাষ্ট্রের ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের সমান বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম এ সোলার প্যানেল। ৪৫টি ফুটবল মাঠের সমান এ সোলার প্যানেল। জলবায়ু পরিবর্তন আর পরিবেশ দূষণ রোধে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যেই সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণে বাড়াবে সিঙ্গাপুরের সরকার।

নদ-নদী ও স্থলভাগের পরিমাণ কম হওয়ায় সিঙ্গাপুরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন কঠিন। সেখানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদী নেই। শক্তিশালী টার্বাইন ঘোরানোর জন্য বাতাসও অপ্রতুল। তাই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুরকে সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু জমির স্বল্পতা বিষয়টি বেশ কঠিন করে তুলেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সমুদ্রে সোলার প্যানেল নির্মাণের পথ অবলম্বন করেছে কর্তৃপক্ষ।

সিঙ্গাপুরের উপকূল থেকে সাগরের দিকে তাকালে দেখা যাবে, রোদে ঝলমল করে হাজার হাজার সোলার প্যানেল। পশ্চিম সিঙ্গাপুরে অবস্থিত ৬০ মেগাওয়াট সোলার ফোটোভোল্টাইক ফার্মটি সেম্বকর্ণ ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি। নতুন এই ফার্মটি বছরে ৩২ কিলো টন কার্বন নিঃসরণ কমাতে ভূমিকা রাখবে। যেখানে রাস্তা থেকে ৭ হাজার গাড়ি তুলে নিলে কমবে এই একই পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ।

সমুদ্রের ওপর সূর্যের আলো একটি ভাসমান রিগ তৈরি করে। সমুদ্রের ঢেউ থাকায় প্যানেলগুলো একটি ভাসমান রিগ তৈরি করেছে, যেখানে সৌর প্যানেলগুলো একটি ভিত্তির ওপর অবস্থান নেয় যা সৌরতরঙ্গগুলো নিচে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নমনীয় হয়। একই সঙ্গে প্যানেলগুলো জলের কাছাকাছি থাকায় এদের সেলগুলো ঠাণ্ডা থাকে, যা তাদের কর্মক্ষমতা আরও উন্নত করে। এ ছাড়া ঝড় বা প্রচণ্ড বাতাস ছাড়া বেশির ভাগ সময়ই সমুদ্রের প্রবাহ মসৃণ থাকায়, উইন্ডমিল বা এর মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রকল্প থেকে সমুদ্রে স্থাপিত সোলার প্যানেলের উৎপাদনের সময় ও ক্ষমতা বেশি।

সিঙ্গাপুরের উপকূলে ৪৫ হেক্টর বা ১১১ একর এলাকাজুড়ে সমুদ্রে ভাসমান ১০ লাখ ২২ হাজার সোলার প্যানেল থেকে নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেখানে সোলার প্যানেলগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন এগুলো ২৫ বছর পর্যন্ত টেকসই থাকে। এ সোলার প্যানেল তত্ত্বাবধানে সার্বক্ষণিক থাকছে ড্রোন। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে আরও চারটি ভাসমান সোলার প্যানেল তৈরির কাজ চলছে। সিঙ্গাপুরের তেনগেহ রিজার্ভারে সবচেয়ে বড় এ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি অবস্থিত।

এখান থেকে সিঙ্গাপুরের পানি শোধনাগারের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া সরকারের গ্রহণ করা পদক্ষেপের মধ্যে আছে, সৌরশক্তির ব্যবহার চার গুণ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের মোট শক্তির ২ শতাংশ সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনা। পরের পাঁচ বছরে এ হার আরও এক শতাংশ বাড়ানো। এতে ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে সাড়ে তিন লাখ বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ দিতে পারবে দেশটি।


আরও খবর

কমেছে রোলেক্স ও প্যাটেক ফিলিপ ঘড়ির দাম

বুধবার ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩