Logo
শিরোনাম
আচার্য বরাবর স্বারকলিপি

শরীয়তপুরে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে ছাত্রলীগ ও অধ্যক্ষের বাধা

প্রকাশিত:শনিবার ০২ এপ্রিল 2০২2 | হালনাগাদ:রবিবার ১২ নভেম্বর ২০২৩ | ২০১৫জন দেখেছেন
Image

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

শরীয়তপুরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ বেপারী বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিএম সোহেলকে মারধরের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেউজ্জামান ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হারুন আর রশিদ বাধা দিয়ে মানবন্ধনটি বানচাল করে দেন।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় কলেজের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে মারধরে জড়িত কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ বেপারী ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল জমাদ্দারকে গ্রেফতার ও জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে কলেজ গেইটে মানববন্ধনের আয়োজন করলে সেখানে ছাত্রলীগ ও কলেজ অধ্যক্ষ বাধা দিলে মানববন্ধনটি পন্ড হয়ে যায়।

এরপর শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ভয়ে কলেজ প্রাঙ্গন ত্যাগ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বরাবর স্বারকলিপি জমা দেন। এসময় স্বারকলিপির অনুলিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদেরও দেওয়া হয়।

ইসরাত জাহান, সাবিকুন্নাহারসহ অন্যান্যদের স্বাক্ষরিত মানববন্ধনে বলা হয়, মহামান্য, আমাদের শুভেচ্ছা নিবেন। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী। আপনাকে অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, গত মাসের ৩০ তারিখ আমাদের কলেজের বাংলা বিভাগের (অনার্স) ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভাইবা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে পার্শ্ববর্তী জেলার সম্মানীয় কয়েকজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. এস এম মনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের আগমন উপলক্ষে বিভাগের আয়োজনে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ভোজ চলাকালীন সময়ে হঠাৎ কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল জমাদ্দারের নেতৃত্বে একদল ছাত্রনামধারী দুর্বৃত্তরা বিভাগীয় শিক্ষকবৃন্দকে পাশের ৩০২ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে মধ্যাহ্নভোজে কেন তাদের ডাকা হলো না, সেই বিষয়ে কলেজ সভাপতি কৈফিয়ত চায়। এমতাবস্থায়, আকস্মিকভাবে কিছু বুঝে উঠার আগেই কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ ব্যাপারীর নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিএম সোহেল স্যারের উপর চড়াও হয় এবং স্যারকে উপুর্যপরি কিল, ঘুষি ও লাত্থি মারতে থাকে। অন্য সহকর্মীদের সহযোগীতায় বিএম সোহেল স্যার হায়েনাদের হাত থেকে মুক্তি পায়। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত সোহাগ ব্যাপারী সংশ্লিষ্ট কলেজের ছাত্র না হয়েও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রকাশ থাকে যে, সোহাগ ব্যাপারী ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পূর্বে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন।

ঘটনার প্রেক্ষিতে কলেজের শিক্ষক পরিষদ জরুরি সভা করে ফৌজদারী মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন। আমরা তাকে পালং মডেল থানার মামলা নং ২২(৪) মতে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানাই। এই ঘটনায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এই বর্বর ঘটনায় ভীত হয়ে পড়েছে। কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে ক্যাম্পাসে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এই জঘন্যতম হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে আমাদের দাবীসমূহ মহামান্য আপনার নিকট পেশ করছি:

১। অতিদ্রুত অভিযুক্ত সোহাগ ব্যাপারীসহ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

২। শিক্ষককে হামলাকারীদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।

৩। ভয়ের সংস্কৃতি মুক্ত কলেজ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করে ভীত হয়ে যারা ক্যাম্পাসে আসতে পারছে না, তাদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। দাপ্তরিক কাজ ব্যতিত বহিরাগতদের কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।

৫। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

মহামান্য আশ্চর্য, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন ভয়মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। কিন্তু কিছু হাইব্রিড ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কারণে আমাদের ক্যাম্পাসে সে পরিস্থিতি বর্তমান নাই। মহামান্য, আপনার নিকট আবেদন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


আরও খবর