Logo
শিরোনাম

স্বরূপকাঠিতে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী তরমুজের হাট

প্রকাশিত:রবিবার ২৪ এপ্রিল ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১২ নভেম্বর ২০২৩ | ১৪৪০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার মিয়ারহাট বন্দরের কালীবাড়ি খালমুখে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ভাসমান তরমুজের হাট। এ বছর ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ী ও চাষিদের মুখে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজান এবং অতিরিক্ত গরমের কারণে তরমুজের চাহিদা বেশি। এ জন্য গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি ট্রলার তরমুজে ভরা, দেখলেই মনে হয় যেন, এটি তরমুজের রাজ্য। খালের যত দূর চোখ যায়, কেবল তরমুজ আর তরমুজ। চৈত্রের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে ভরা জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত সপ্তাহে দুদিন চলে তরমুজ বেচাকেনা। প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার দুদিন বসে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ভাসমান তরমুজের হাট। হাটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তরমুজ বিকিকিনি। ব্যস্ততম এই খালে অসংখ্য তরমুজভর্তি ট্রলার থাকায় হাটের সময় খাল দিয়ে অন্য কোনো ট্রলার বা নৌকা পার হতে বিপাকে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ব্যবসায়ী ও চাষিরা তরমুজ এনে এই হাটে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে তরমুজের খেত কিনে এনে আকার ও সাইজ অনুযায়ী বিক্রি করেন শত মূলে। অত্র উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার লোকেরা ট্রলারভর্তি শত শত তরমুজ কিনে চালান করেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একই সঙ্গে অনেক খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা এখান থেকে তরমুজ কিনে বিক্রি করেন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। তরমুজের আকার অনুযায়ী ৬০-৩২০ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হয়।

পার্শ্ববর্তী নাজিরপুর উপজেলার গাওখালি বাজার থেকে ট্রলার নিয়ে তরমুজ কিনতে এসেছিলেন আব্দুল হালিম (৪২)। তিনি হাটে এসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করেন তরমুজ কেনার জন্য। তিনি বলেন, গত বারের তুলনায় এ বছর ফলন কম হওয়ায় তরমুজের দাম বেশি। হাটে বড় সাইজের একশত তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ত্রিশ হাজার টাকায়। তাতে প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়ে ৩ শ টাকা। এতে একটি তরমুজ কিনে বাজারে নেওয়া পর্যন্ত সেটির খরচ পড়ে আরও ৪০ টাকা। তারপর সেই তরমুজ কত টাকায় বিক্রি করতে হয়?

উপজেলার জগৎপট্টি গ্রামের তরমুজ ব্যবসায়ী মোস্তফা জামাল (৪৪) জানান, তিনিসহ পাঁচজনে হাট থেকে তরমুজ কিনে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পাঠান। প্রতিটি বড় তরমুজ ৩২০ টাকায় কিনে প্রতি ট্রলারে ৭-৮ হাজার তরমুজ পাঠান কুমিল্লায়। প্রতি ট্রলারে ৩০-৪০ হাজার টাকা তাঁর খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি ট্রিপে কিছুটা লাভ হয়। তবে তিনি বলেন, এ বছর তরমুজের ফলন একটু কম হওয়ায় চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।

পটুয়াখালীর মুনসিরহাট থেকে হাটে ট্রলারভর্তি তরমুজ নিয়ে আসা মো. আলমগীর জানান, চাষিদের কাছ থেকে তিন বিঘা জমির তরমুজ সাড়ে ছয় লাখ থেকে সাত লাখ টাকায় কিনতে হয়। এই জমি থেকে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ তরমুজ পাওয়া যায়।

হাটে আসা মলুহার গ্রামের আড়তদার আবুল কালাম (৬৮) জানান, ব্যবসায়ীরা দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, কলাপাড়া, মহিপুর, মুনসিরহাট, রাঙাবালি, তালতলি, গলাচিপা, কালাইয়া প্রভৃতি এলাকা থেকে তরমুজের খেত কিনে ট্রলার ভরে এই হাটে তরমুজ নিয়ে আসেন। তারা মৌসুমের শুরুতে খেতে তরমুজের গুটি দেখে খেতমূলে তরমুজ কেনেন। তরমুজ বড় হলে মৌসুমের শুরু থেকেই তাঁরা ট্রলার ভরে তরমুজ এনে বিক্রি করেন অত্র উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার হাটে।  সোহাগদল গ্রামের তরমুজ ব্যবসায়ী আব্দুল মন্নান (৬৫) বলেন, শত বছর ধরে মিয়ারহাটের কালিবাড়ি খালে ভাসমান তরমুজের হাট বসছে। প্রতি হাটে ৬০ লাখ টাকা থেকে কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, তরমুজের হাটে চাষি ও ব্যাপারীরা ইচ্ছে অনুযায়ী তরমুজ কিনতে বা বেচতে পারেন। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। হাটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে বন্দর কমিটি তাঁদের সর্বাত্মক নিরাপত্তা দিচ্ছেন।

স্বরূপকাঠি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোসারেফ হোসেন বলেন, উপজেলার মিয়ারহাট বন্দর একটি পুরোনো ব্যবসায়িক কেন্দ্র। কালিবাড়ি খালে ভাসমান হাটটি অনেক প্রাচীন। ওখানে সুপারি, ধান, চালসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রি হয়। বিশেষ করে তরমুজের মৌসুমে হাটটি মনোরম দৃশ্যে পরিণত হয়। হাটে দূর-দুরন্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রলার ও নৌকাভর্তি তরমুজ নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীরা ওখানে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছেন।


আরও খবর

শখের নার্সারিতে সফল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মনির

মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

জয়পুরহাটে ৮৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ

মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩