বরগুনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকা নিয়ে ভোট না দেওয়ায় স্বামীসহ এক ইউপি সদস্যকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পরাজিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত প্রার্থীর হলেন দেলোয়ারা হামিদ। তিনি সংরক্ষিত নারী আসনে জেলা পরিষদের সদস্য প্রার্থী ছিলেন।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে বরগুনার তালতলী উপজেলার লাউপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরজাহান বেগম ও তার স্বামী মাসুদ পিয়াদা। এ সময় নুর হোসেন ও রিয়াজ নামে দুই জেলেকেও মারধর করা হয়।
জানা গেছে, বরগুনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দেলোয়ারা হামিদ। এ নির্বাচনে তালতলী উপজেলা থেকে ১২টি ভোট পান এবং পরাজিত হয় তিনি। এতে দেলোয়ারা হামিদ সন্দেহ করেন যে তালতলীর সোনাকাটা ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরজাহান বেগম তাকে ভোট দেননি।
এরপর একই ইউনিয়নের জেলেদের মাঝে চাল বিতরণের সময় টাকা নিয়েও ভোট না দেওয়ার অভিযোগ এনে কটূক্তি করতে থাকেন পরাজিত প্রার্থী দেলোয়ারার নাতি হৃদয় ফকির। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির মধ্যে হৃদয় ফকিরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের এসে ইউপি সদস্য ও তার স্বামীকে মারধর করে। এ সময় স্থানীয় দুই জেলে বাধা দিলে তাদেরকেও পিটিয়ে আহত করে হৃদয়ের লোকজন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
ইউপি সদস্য নুরজাহান বেগম বলেন, দেলোয়ারার নাতি হৃদয় আমার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না চাওয়ায় আমাদের ওপর হামলা করেন। আমার গলার চেইন, হাতের আংটি ছিনিয়ে নেন। এ ছাড়াও আমার স্বামীর পকেট থেকে ১২ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল নিয়ে যায় তারা।
এ বিষয়ে দেলোয়ারা হামিদ বলেন, ওই ইউনিয়নের সব ইউপি সদস্য আমাকে ভোট দেবে বলে ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে। কিন্তু আমাকে ভোট দেয়নি। এ জন্য আমার নাতি হৃদয় ফকির ওই ইউপি সদস্যকে বলে- ‘আমাদের ভোট দেননি এখন টাকা ফেরত দেন।’ এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হওয়ায় হৃদয়কে জুতা নিয়ে মারতে আসেন তিনি। পরে চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধান করে দেন। চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার পর ফের ওই ইউপি সদস্যের স্বামীর সঙ্গে কথার কাটাকাটি হয় ও তাকে কয়েকটি কিলঘুষি দেয় হৃদয়। গলার চেইন, আংটি ও মোবাইল এগুলো কিছু নেয়নি হৃদয়।
এ দিকে হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ওই ইউনিয়নের জনসেবা ছাড়া সকল কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন চেয়ারম্যানসহ ইউপি সদস্যরা।
সোনাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দেলোয়ারা হামিদকে ভোট না দেওয়াতে তার নাতি হৃদয় ফকির আমার পরিষদের সদস্য নুরজাহানকে নিয়ে কটূক্তি করেন। এ নিয়ে কথার কাটাকাটি হলে বিষয়টি সমাধান করে দেই। আমার অনুপস্থিতিতে ওই প্রার্থী পরিষদে এসে জোর করে নির্বাচন উপলক্ষে সকল ইউপি সদস্যকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেন। তবে কেউ নিয়েছে কেউ নেননি। তবুও বলেছি তোদের টাকা তোরা নিয়ে যা। এজন্য আমার সদস্যকে জনসম্মুখে মারধর করাটা খুব দুঃখজনক।
তালতলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।