আগামী ২৪ জুন পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে জয়া আহসান অভিনীত সিনেমা ঝরা পালক। সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের নির্জনতম কবি জীবনানন্দ দাশের ওপরে। এটি নির্মাণ করেছেন সায়ন্তন মুখার্জি। জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অনুসারে এ সিনেমার নাম রাখা হয়েছে। সিনেমায় জয়া আহসান অভিনয় করেছেন জীবনানন্দ দাশের স্ত্রী লাবণ্যর ভূমিকায়। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর স্ত্রীর চিরকালীন না পাওয়ার ক্ষোভ, জীবনযন্ত্রণার অসহায়ত্ব সবকিছু একটি সংলাপের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। আর সে সংলাপটি হলো, ‘বাংলা সাহিত্যকে তোমার দাদা অনেক কিছুই দিয়ে গেলেন, কিন্তু আমার জন্য কী রেখে গেলেন?’ ট্রেলার দেখে মনে হয়, কবি জীবনানন্দ দাশের বায়োপিক ঝরা পালক। সিনেমায় জীবনানন্দ দাশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ ব্রাত্য বসু।
ঝরা পালক নিয়ে দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, ‘আমার চরিত্রটির ভেতরে জীবনানন্দ দাশের অন্য যে চরিত্রগুলো আছে সেগুলোর ছায়াও আছে। আরেকটি বিষয় আমার মনে হয়, জীবনানন্দ দাশের মতো একজন ব্যক্তি ছিলেন, যে কিনা পা থেকে মাথা পর্যন্ত কবিতার ভেতর নিমজ্জিত হয়ে থাকতেন, সে রকম একটি মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সহজ কথা নয়। তিনি জীবনে খুব স্বস্তি পেয়েছেন তা নয়। এ চরিত্রে অভিনয় করাটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল।’ সিনেমাটির সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, জয়া আহসানের অভিনয়ের কারণেই জীবনানন্দ দাশের স্ত্রীর চরিত্রটি এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। পরিচালক সায়ন্তন মুখার্জি ঝরা পালক সিনেমাকে একটা ক্যানভাসের মতো ব্যবহার করে জীবনানন্দের জীবন, তার ভাবনা, দুঃখ-কষ্ট, আবেগ এবং আশপাশের মানুষজনকে আঁকার চেষ্টা করেছেন। এ ছবির কেন্দ্রে রয়েছে মূলত কবি জীবনানন্দ দাশের দাম্পত্য জীবনের কাহিনী। যাকে লাবণ্য ও জীবনানন্দের সাংসারিক টানাপড়েনের গল্প বলা যেতে পারে। পাশাপাশি রয়েছে সে সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপট, কবি মহলে জীবনানন্দ দাশের অবস্থান এবং কবির জীবনে পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব।
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এ কবির দুই বয়সের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সিনেমায়। তরুণ জীবনানন্দ দাশের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিণত বয়সের কবির চরিত্রে থাকছেন ব্রাত্য বসু। এতে কবি ও শনিবারের চিঠি পত্রিকার সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের চরিত্রে দেবশঙ্কর হালদার, কবি বুদ্ধদেব বসুর চরিত্রে কৌশিক সেন ও কাজী নজরুল ইসলামের চরিত্রে সুপ্রিয় দত্ত অভিনয় করেছেন। সিনেমাটি কলকাতার পাশাপাশি বাংলাদেশেও মুক্তির পরিকল্পনার কথা জানান পরিচালক। সায়ন্তন বলেন, ‘জীবনানন্দ দাশের জীবনের অনেকটা অংশজুড়ে বরিশাল, বাংলাদেশ জড়িয়ে আছে। ফলে কাজটা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। জীবনানন্দ দাশের পাশাপাশি জয়া আহসানও এ সিনেমার আরেকটি ফ্যাক্টর। তাই আমি চাইছি সিনেমাটি বাংলাদেশেও মুক্তি পাক।’ বড়দিন উপলক্ষে গত বছরের ডিসেম্বরে সিনেমার প্রোমো প্রকাশ করা হয়। কলকাতায় সেই আয়োজনে যোগ দেন ব্রাত্য বসু, জয়া আহসানসহ সিনেমার কলাকুশলীরা। সিনেমা হলে মুক্তির আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়। জয়া আহসানের প্রশংসা করেন সিনেমাপাড়ার মানুষজন।
ঝরা পালক কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ১৯৭২ সালে ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। কবি তখন কলকাতা সিটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। বইয়ের প্রচ্ছদে পাখির আটটি পালকের ছবি দেয়া ছিল। বইয়ের দাম ছিল এক টাকা। বইয়ের উৎসর্গে কারো নাম না লিখে কবি শুধু ‘কল্যাণীয়াসু’ শব্দটা লেখেন। পরে জানা যায়, চাচাতো বোন শোভনাকে বইটি উৎসর্গ করেন। এ বই প্রকাশের তিন বছর পর ১৯৩০ সালে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী লাবণ্য দাশের সঙ্গে বিয়ে হয় জীবনানন্দ দাশের। লাবণ্য দাশ ‘মানুষ জীবনানন্দ’ নামে একটি বই লিখেছেন। বইয়ে কবির স্ত্রী, সন্তান সর্বোপরি সংসারের প্রতি অনীহার কথা ফুটে উঠেছে। জীবনানন্দ ও লাবণ্য দাশের পারস্পরিক স্বভাব ছিল পুরোপুরি বিপরীত। কবি ছিলেন ধীর, শান্ত। তার স্ত্রী ছিলেন ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা থেকে অনেক দূরে। জীবনানন্দের মৃত্যুর পর লাবণ্য দাশ লেখক ভূমেন্দ্র গুহকে ডেকে বলেছিলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের জন্য তিনি অনেক কিছু রেখে গেলেন হয়তো, আমার জন্য কী রেখে গেলেন বলো তো?’ কবির জীবন নিয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে আগ্রহের কমতি নেই। স্বভাবত ঢাকা ও কলকাতার দর্শকরা সিনেমাটির জন্য অপেক্ষা করছেন। ২০১৭ সালের শেষের দিকে এ সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছিল। তারপর নানা কারণে সিনেমাটির মুক্তির তারিখ পিছিয়ে যায়।