গ্রহণ একটি বর্ণিল ও আকর্ষণীয় মহাজাগতিক
ঘটনা। সে কারণেই গ্রহণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের পর্যটন আকর্ষণ। আগামীকাল বুধবার
২৬ মে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। যেটি দেখা যাবে এশিয়ার কিছু কিছু অংশ, অস্ট্রেলিয়া,
গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা এবং আমেরিকা থেকে।
২৬ মে, বিশেষ দিন। একইসাথে দেখা যাবে সুপারমুন
আর পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। দুয়ের এই যোগ ঘটে প্রতি আড়াই বছরে একবার। ১৪-১৫ মিনিট স্থায়ী
হবে এই ঘটনা। আর এবছর ৪ বার সুপারমুন দেখা যাবে।
চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছে
চলে আসে, ফলে চাঁদ স্বাভাবিকের চাইতে বড় ও উজ্জল দেখা যায়। এ কারণে একে সুপারমুন
বলা হয়। এবারের সুপারমুন স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫% উজ্জল ও ৪% বড় হবে বলে জোতির্বিজ্ঞানীরা
বলছেন।
মে মাসে অনেক ফুল ফোটে। উত্তর গোলার্ধে
এখন বসন্তকাল চলছে। তাই এবারের সুপার মুনকে বলা হবে ‘সুপার ফ্লাওয়ার
ব্লাড মুন’। উপচ্ছায়ায় চাঁদের প্রবেশের মাধ্যমে গ্রহণটি শুরু
হবে দুপুর পৌনে তিনটার পর। আকাশ পরিষ্কার থাকলে বাংলাদেশে চন্দ্রোদয়ের পর থেকে গ্রহণ
শেষ হওয়া পর্যন্ত দেখা যাবে।
গ্রহণটি ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিটে শুরু
হয়ে শেষ হবে ৭টা ৫১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে। ময়মনসিংহে সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে
শুরু হয়ে শেষ হবে ৭টা ৫৩ মিনিটে। চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিট ১৮ সেকেন্ড শুরু
হয়ে শেষ হবে ৭টা ৪২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে। সিলেটে সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শুরু
হয়ে শেষ হবে ৭টা ৪৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে। খুলনায় সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিটি ২৪ সেকেন্ডে শুরু
হয়ে শেষ হবে ৭টা ৫২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে।
এছাড়া বরিশালে সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটে শুরু
হয়ে শেষ হবে ৭টা ৫৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে। রাজশাহীতে সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে
শুরু হয়ে শেষ হবে ৭টা ৫৯ মিনিট ১২ সেকেন্ডে ও রংপুরে গ্রহণ শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪৯
মিনিট ৩০ সেকেন্ডে শুরু হয়ে শেষ হবে ৭টা ৫৯ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে।
কেন্দ্রীয় গ্রহণ শুরু হবে বিকেল ৫টা ১৮
মিনিট ৪২ সেকেন্ডে টোঙ্গা থেকে পূর্ব দিকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে। পূর্ণগ্রহণ থেকে
চাঁদের নির্গমন হবে বিকেল ৫টা ২৮ মিনিটে টোঙ্গার নুকুয়ালোফা দ্বীপ থেকে উত্তর-পূর্ব
দিকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে। প্রচ্ছায়া থেকে চাঁদের নির্গমন হবে সন্ধ্যা ৬টা ৫২
মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের লয়ালটি আইল্যান্ড থেকে দক্ষিণ দিকে দক্ষিণ প্রশান্ত
মহাসাগরে। আর উপচ্ছায়া থেকে চাঁদের নির্গমন হবে সন্ধ্যা ৭টা ৫১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে ম্যাকাও
থেকে পশ্চিম দিকে কোরাল দ্বীপে।
চন্দ্রগ্রহণ হয় যখন চাঁদ আর সূর্যের মাঝখানে
থাকে পৃথিবীর অবস্থান। পৃথিবী তখন আলোর উৎস বন্ধ করে দেয়। এ সময় আমরা দেখি চাঁদের
পিঠে পৃথিবীর ছায়া।
আইএসির একটি প্রশিক্ষণ পুস্তিকায় বলা
হয়েছে, ‘সূর্যগ্রহণ কেমন
দেখা যাবে সেটা নির্ভর করছে যে দেখছে তার ভৌগলিক অবস্থানের ওপর। কিন্তু চন্দ্রগ্রহণের
ক্ষেত্রে ঘটে উল্টোটা, পৃথিবীর যে কোন জায়গা থেকে এই গ্রহণ দেখা যাবে যদি গ্রহণের
সময় চাঁদ দিগন্তের উপরে উঠে আসে।’
এতে আরও বলা আছে, ‘সূর্যগ্রহণে যেমন
গ্রহণের বিভিন্ন পর্যায় নির্ভর করে, যে দেখছে তার ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী, চন্দ্রগ্রহণে
কিন্তু আপনি কোথায় আছেন সেটা বিবেচ্য হয় না- সব জায়গা থেকে গ্রহণের পর্যায়গুলো
একইভাবে দেখা যায়।’
চন্দ্রগ্রহণও
আছে তিন রকম। যেমন-
পূর্ণগ্রাস
চন্দ্রগ্রহণ
নাসা ব্যাখ্যা করছে, পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের
সময় চাঁদ এবং সূর্য পৃথিবীর দুই পাশে ঠিক এক লাইনে অবস্থান করে। যদিও পৃথিবীর ছায়া
চাঁদকে ঢেকে ফেলে। নাসা বলছে, চাঁদের ওপর সূর্যরশ্মির কিছুটা গিয়ে পড়ে।
চাঁদে পৌঁছানোর জন্য ওই সূর্যরশ্মিকে পৃথিবীর
বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এই যাবার পথে সূর্যের নীল রশ্মির বেশিটাই বায়ুমণ্ডলে
শোষিত হয়ে যায়। ফলে এই প্রক্রিয়ার সময় চাঁদকে দেখায় লাল এবং এই রক্তিম চাঁদকে
অনেকসময় নাম দেয়া হয় ‘ব্লাড মুন’।
আইএসি বলছে, ‘চাঁদের ব্যাসের
চেয়ে আমাদের গ্রহের ব্যাস চারগুণ বড়, ফলে পৃথিবীর ছায়ার পরিধিও অনেক বেশি। তাই পুরো
চন্দ্রগ্রহণের প্রক্রিয়া অনেক লম্বা সময় ধরে চলে- ১০৪ মিনিট পর্যন্ত এটা চলতে পারে।’ আর ঠিক এটাই
আমরা দেখতে যাচ্ছি আগামীকাল ২৬ মে।
আপনি যদি দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে,
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দা হন বা ২৬ মে
এসব অঞ্চলের কোথাও ঘটনাচক্রে থাকেন, আর আকাশ যদি থাকে পরিষ্কার তাহলে আপনি ‘সুপার ফ্লাওয়ার
ফুল মুন’ সেটির পূর্ণগ্রাস
গ্রহণ দেখতে পাবেন প্রায় ১৪ মিনিট ধরে।
খণ্ডগ্রাস
চন্দ্রগ্রহণ
চাঁদের খণ্ডগ্রাস গ্রহণ হয় যখন চাঁদের
একটা অংশ পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যায়। পৃথিবী চাঁদকে কতটা গ্রাস করে নিচ্ছে তার ওপর
নির্ভর করে হয় গাঢ় লাল, কখনও আবার মরচে রং বা কাঠকয়লার রংয়ের ছায়া পড়ে চাঁদের
ছায়ায় ঢাকা অংশে। চাঁদের বুকে পৃথিবীর ছায়া কোথাও হালকা, কোথাও গাঢ় হবার কারণে
এরকম দেখায়।
নাসা বলছে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ বিরল,
কিন্তু খণ্ডগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ ঘটে অন্তত বছরে দুবার। আশা করা হচ্ছে, পরবর্তী খণ্ডগ্রাস
চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে ১৮ থেকে ১৯ নভেম্বরে এবং তা দেখা যাবে এশিয়া ও ইউরোপের বেশ
কিছু জায়গা, অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে।
পেনাম্ব্রা
চন্দ্রগ্রহণ
এই চন্দ্রগ্রহণ হয় যখন পৃথিবীর হালকা
ছায়াচ্ছন্ন অংশ লাতিন ভাষায় যাকে বলা হয় পেনাম্ব্রা, সেই অংশের মধ্যে দিয়ে চাঁদ
প্রদক্ষিণ করে। এই ছায়া গাঢ় নয়, অনেকটাই হালকা। ফলে এই গ্রহণ সাধারণ মানুষের চোখে
সেভাবে ধরা পড়ে না। এই ছায়াচ্ছন্ন অংশ যদি খুবই ছোট হয় তাহলে চাঁদের গ্রাস হচ্ছে
কিনা তা বোঝা কঠিন।
এ কারণে দিনপঞ্জিতে এই গ্রহণের কোন উল্লেখ থাকে না। এই ধরনের গ্রহণের খবর রাখেন একমাত্র জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।