দেশের ইতিহাসে বিদ্যুৎ জ্বালানিতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সব মিলিয়ে দুই খাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- পিডিবি। অন্যদিকে এলএনজি আমদানির অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে চাওয়া হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। তবে এই ভর্তুকির ঠিক কতটা দেওয়া হবে তা এখনও বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বিভাগকে জানায়নি অর্থ বিভাগ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তা জানান, বাজেটে যে পরিমাণ ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ থাকে এর বাইরেও সহজশর্তে ঋণ হিসেবে বিদ্যুৎ জ্বালানিকে অর্থ দিয়ে থাকে সরকার। এই টাকা ঋণ হলেও ফেরত দেওয়ার নজির নেই। ফলে এই টাকাকেও ভর্তুকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজনের কথা জানিয়েছিল। এর আগে বছরের শুরুর দিকে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে) জ্বালানি বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল এলএনজি আমদানিতে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ প্রয়োজন হবে। তবে এই খরচের পুরোটাই ভর্তুকি হিসেবে দিতে হবে এমন নয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে অবশ্য বিদ্যুতে সরাসরি ১০ হাজার কোটি টাকা এবং জ্বালানিতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। তবে এরপরও জ্বালানি বিভাগের তরফ থেকে অর্থ বিভাগে এলএনজি আমদানির জন্য অর্থ চাওয়া হয়।
দেশের শতভাগ মানুষের ঘরেই বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণে অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। ফলে ব্যয়বহুল জ্বালানি ব্যবহারে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অন্যদিকে দেশে গ্যাসের সংকট হওয়াতে সরকার বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে। দুই জায়গাতেই বিপুল অর্থ প্রয়োজন হচ্ছে। সরকার যে দামে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিক্রি করছে তাতে খরচ উঠছে না। ফলে এই ভর্তুকির প্রয়োজন হচ্ছে। তবে ভর্তুকি প্রয়োজন হলেও সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং তেল বিক্রি থেকে যে পরিমাণ কর আদায় করে তা নেহায়েত কম নয় বলেও অনেকে মনে করছেন। তবে এই করের অর্থের একটি বড় অংশই এবার ভর্তুকি হিসেবে দিতে হবে।
চলতি বছর এত বেশি ভর্তুকির প্রয়োজন কেন পড়ছে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম একলাফে অনেকটা বেড়ে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি ব্যয় বাড়ছে। এই কারণে বেশি ভর্তুকি প্রয়োজন হবে।