ইউক্রেনকে রাশিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমণ শুরু না করার পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। নতুন অস্ত্র সহায়তা হাতে পাওয়া এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত এ অবস্থান বজায় রাখতে বলেছেন তারা। বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য। নাম না প্রকাশের শর্তে ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, ইউক্রেনে নিজেদের আব্রামস ট্যাংক না পাঠানোর সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র এখনও অটল। জার্মানির সঙ্গে লিওপার্ড ট্যাংক পাঠানোর প্রশ্নে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনের জন্য নতুন ২৫০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ ছাড়াও তিনি হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘ইউক্রেন তার প্রয়োজনীয় সহযোগিতার সবই পাবে।’ বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে শত শত সাজোয়াঁ যান পাঠানোর ঘোষণাও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ইউক্রেন ভারী ট্যাংক চায়। কিন্তু জার্মানি তা দিতে রাজি নয়। দেশটির কথা, এতে করে যুদ্ধে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ তোলা হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে। জার্মানি কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে আরও বহু দেশ। এর ওপর নির্ভর করবে ইউক্রেনে ভারী ট্যাংক পাঠানোর ভবিষ্যৎ। যে ট্যাংকগুলো পাঠানোর প্রশ্নে এত হট্টগোল, সেগুলো লিওপার্ড ২ মডেলের।
জার্মানি এ ট্যাংকগুলো তৈরি করেছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময়। হাজারে হাজারে তৈরি করে ছড়িয়ে দিয়েছিল আশপাশের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে। ফলে ইউরোপের কয়েক ডজন দেশের হাতে রয়েছে এই ট্যাংক। প্রথমবারের মতো এই ট্যাংক নামানো হয় ১৯৭৯ সালে। আর এর সর্বোচ্চ গতি ওঠে প্রতি ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার। এতে রয়েছে ১২০ মিলিমিটারের বোর গান এবং দুটি হালকা মেশিনগান। এর আগে বসনিয়ার কসোভোতে, আফগানিস্তানে এবং রাশিয়াতে এই ট্যাংকগুলো নামানো হয়েছিল। সেখানে অ্যান্টি ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে এগুলোকে পরাস্তও হতে দেখা গেছে।
ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের ভারী অস্ত্র প্রয়োজন। কিয়েভের হাতে সীমিতসংখ্যক ট্যাংক রয়েছে। সেগুলোর বেশির ভাগই সোভিয়েত এবং সোভিয়েত পরবর্তী আমলের। দেশটির ধারণা, আসন্ন মাসগুলোতে তাদের ওপর একাধিক আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনায় রয়েছে রাশিয়ার। এ ছাড়াও মিত্র দেশের অনেকে এবং ইউক্রেন নিজেও বিশ্বাস করে, যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে তাদের ট্যাংক প্রয়োজন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জার্মানির ট্যাংক দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টির বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছে না তারা। এ নিয়ে সমালোচনাও করেছেন ইউক্রেনের কর্তাব্যক্তিরা।
রাশিয়ার বাহিনী এ যুদ্ধে টি-৯০ মডেলের ট্যাংক ব্যবহার করছে। সেগুলোর সামনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ৩০০ ট্যাংক প্রয়োজন ইউক্রেনের। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেনের ৩০০ ট্যাংক লাগবে না। একশ ট্যাংকই যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এসব ট্যাংক সংগ্রহে বেশি দূর যেতে হবে না। প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডের কাছেই প্রচুর লিওপার্ড ট্যাংক রয়েছে। তারাও এটি ইউক্রেনকে দিতে প্রস্তুত। শুধু জার্মানির বাধাটা উঠে গেলেই হয়। এই ট্যাংকগুলো রপ্তানি লাইসেন্সের অধীনে মিত্র দেশে পাঠিয়েছিল জার্মানি। ফলে কোনো রাষ্ট্র যদি এসব ট্যাংক তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাতে চায়, সে উদ্যোগে ভেটোর মাধ্যমে বাধা দিতে পারবে তারা।
জার্মানি এখন ইউক্রেন প্রশ্নে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। তারা বহুপাক্ষিকভাবে অস্ত্র পাঠানোর পক্ষে। কিন্তু একা এক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে দেশটি। ফলে সাজোয়াঁ যানসহ নানা সরঞ্জাম পাঠালেও কোনোভাবেই ট্যাংক পাঠাতে রাজি হচ্ছে না তারা।
পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানিকে আলোচনার মাধ্যমে রাজি করানোর প্রচেষ্টাও চলছে। তবে জার্মানির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেশটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনে নিজেদের আব্রামস ট্যাংক পাঠায়, তাহলে তারাও নিজেদের লিওপার্ড ট্যাংক পাঠাবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আব্রামস ট্যাংক চালাতে জ্বালানি বেশি লাগে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সে জ্বালানির চাহিদা মেটানোর বিষয়টি ইউক্রেনের জন্য নতুন এক সমস্যা হয়ে দেখা দেবে।
ট্যাংক না পাঠানোর পক্ষে যুক্তিগুলো: এখন পর্যন্ত ট্যাংক না পাঠানোর পক্ষে যে যুক্তিগুলো এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হলো- এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুদ্ধে নিজেদেরকে সরাসরি জড়িয়ে ফেলবে ন্যাটো দেশগুলো। ফলে যুদ্ধের পরিসর বেড়ে যেতে পারে।তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সীমানা মেনে ট্যাংক ব্যবহার করা হবে। ইউক্রেনের মিত্ররা বলছে, রুশরাই আদতে সংঘাতের পরিসর বৃদ্ধি করে চলেছে ক্রমাগত। তাদের বাহিনী আক্রমণ চালাচ্ছে বেসামরিক কাঠামোতে। হত্যা করা হচ্ছে বেসামরিক মানুষকে। এমনকি পারমাণবিক আক্রমণের হুমকিও চালানো হচ্ছে।