বাংলা সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্ষণজন্মা
নায়ক সালমান শাহ। তাকে বাংলা সিনেমার রাজপুত্রও বলা হয়। আজও ভক্তরা কাঁদে সালমান শাহ’র জন্যে। কারণ
সালমান ছিলো ভক্তদের স্বপ্নের নায়ক। স্টাইলিশ আর সাবলিল অভিনয়ের জন্য এতো বছর পরেও
লাখো ভক্তদের হৃদয়ে বাস করছেন সালমান শাহ।
বাংলা সিনেমার এই নক্ষত্রের ৫০তম জন্মদিন
আজ রবিবার। ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবার
নাম কমরউদ্দিন চৌধুরী এবং মায়ের নাম নীলা চৌধুরী। পরিবারের বড় ছেলে সালমানের জন্মনাম
শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তবে চলচ্চিত্রে তিনি সবার কাছে সালমান শাহ নামেই পরিচিত ছিলেন।
বাংলা সিনেমা যতদিন রবে তার ইতিহাসের পাতায়
স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে সালমান শাহ’র নাম। ১৯৯৬ সালের
৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন এই নায়ক।
কিন্তু মৃত্যুর দুই যুগ পর এখনও সালমান
শাহ’র আকাশচুম্বী
জনপ্রিয়তা। এখনও টিভি পর্দায় তাঁর অভিনীত ছবি প্রচার হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন। মাত্র
অল্প কিছু দিনের ক্যারিয়ারে ক্ষণজন্মা এই নায়ক রেখে গেছেন ২৭টি চলচ্চিত্র এবং অগণিত
ভক্তকূল।
সালমান শাহ পড়াশোনা করেন খুলনার বয়রা
মডেল হাই স্কুলে। ওই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। পরে ১৯৯৩ সালে একই
সঙ্গে দু’জনের চলচ্চিত্রে
অভিষেক হয়। সালমান-মৌসুমী জুটি বেঁধে অভিনয় করেন সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে। সেই থেকে
একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি ছবিতে
অভিনয় করেছেন সালমান শাহ। প্রায় সবগুলোই সুপারহিট সিনেমা তাঁর। সালমান শাহ অভিনীত সিনেমাগুলো
হলো- কেয়ামত থেকে কেয়ামত (বিপরীতে মৌসুমী), তুমি আমার (শাবনূর), অন্তরে অন্তরে (মৌসুমী),
কন্যাদান (লিমা), জীবন সংসার (শাবনূর), চাওয়া থেকে পাওয়া (শাবনূর), সুজন সখী (শাবনূর),
বুকের ভেতর আগুন (শাবনূর), এই ঘর এই সংসার (বৃষ্টি), স্নেহ (মৌসুমী), বিচার হবে (শাবনূর),
প্রেমযুদ্ধ (লিমা), মহা মিলন (শাবনূর), তোমাকে চাই (শাবনূর), বিক্ষোভ (শাবনূর), আশা
ভালোবাসা (শাবনাজ), মায়ের অধিকার (শাবনাজ), আঞ্জুমান (শাবনাজ), আনন্দ অশ্রু (শাবনূর),
প্রেম পিয়াসী (শাবনূর), সত্যের মৃত্যু নেই (শাহনাজ), প্রিয়জন (শিল্পী), শুধু তুমি
(শ্যামা), স্বপ্নের পৃথিবী (শাবনূর), স্বপ্নের নায়ক (শাবনূর), দেন মোহর (শাবনূর) ও
স্বপ্নের ঠিকানা (শাবনূর)।
সালমান অভিনীত শেষ সিনেমা ‘বুকের ভেতর আগুন’। তার ২৭টি সিনেমার
১৪টিতে নায়িকা হিসাবে অভিনয় করেন শাবনূর। মাত্র তিন বছর বড় পর্দায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন
সালমান শাহ। এই অল্প সময়েই যেমন হয়েছেন দর্শকপ্রিয় তেমনি উপহার দিয়েছেন সুপারহিট সব
সিনেমা।
সালমান শাহর সঙ্গে চিত্রনায়িকা শাবনূরের
জুটি ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা জুটিও বলেন অনেকে।
এই জুটির প্রতিটি ছবিই সুপারহিট। তাঁদের পর্দার রসায়ন ছিল নজরকাড়া। আবার বাস্তব জীবনের
রসায়ন নিয়েও তুমুল আলোচনা হতো। সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের সে সময়কার সম্পর্ক নিয়ে
এখনো কম-বেশি চর্চা হয়।
১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। সামিরা ছিলেন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমানের দু’টি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবেও কাজ করেন। দাম্পত্য জীবনের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই সালমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এদিন ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য জট এখনও খুলেনি।