Logo
শিরোনাম

আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

প্রকাশিত:সোমবার ১৭ এপ্রিল ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ মে ২০২৩ | ১০০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয়ায় মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্ব ও পরিচালনায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিণতি ঘটে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার।

এর আগে ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানিদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ায় তার অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সেদিন সরকারের মন্ত্রিপরিষদের আনুষ্ঠানিক শপথ ছাড়াও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এ অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। পরে এ বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।

দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে সরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। এ দিন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা ও মুজিবনগরে এ দিবস উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবনে আলোকসজ্জা এবং সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর নামকরণ করা হয়।

একই বছরের ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এ দিন গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।

সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তাজউদ্দীন আহমদ অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। মুজিবনগর সরকারের শপথের দিন ১২ জন আনসার সদস্য ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পর দিন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতারে ভাষণ দেন। তার এই ভাষণ আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচার হয়।

ওই ভাষণে দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন তাজউদ্দীন। এছাড়া ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়। তাজউদ্দীনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বেআইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।

পরে একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ন্যায়-নীতি বর্হিভূত এবং বিশ্বাস ঘাতকতামূলক যুদ্ধ শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ারলেসে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন।

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ায় দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমানবাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে, অস্থায়ী সরকার ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে কার্যক্রম চালাতে থাকে। ১৮ এপ্রিল মন্ত্রী পরিষদের প্রথম সভায় মন্ত্রীদের দফতর বন্টন করা হয়। মুজিব নগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।

মুজিবনগর দিবসে জাতীয় কর্মসূচি

মুজিবনগর দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য সোমবার সকাল ৯টায় মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্রে জাতীয় পতাকা তোলার মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। এরপর মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। আম্রকাননে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, বিএনসিসি, স্কাউটস, গার্লস গাইড এবং স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা গার্ড অব অনার দেবে। পাশাপাশি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজও অনুষ্ঠিত হবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সকাল ১০টায় মুজিবনগরের গীতিনাট্য জল, মাটি ও মানুষ প্রদর্শিত হবে। পৌনে ১১টায় মুজিবনগরের শেখ হাসিনা মঞ্চে এ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা হবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও মোনাজাত বা প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কর্মসূচি পালন করা হবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে এক দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সোমবার (১৭ এপ্রিল) ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

এছাড়া মুজিবনগরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সোমবার ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ১০টায় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সোয়া ১০টায় গার্ড অব অনার। সকাল ১১টায় মেহেরপুরে মুজিবনগর দিবসের জনসভা। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন।

এদিকে, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। এতে তারা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সেই ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে প্রণীত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।



আরও খবর



যুক্তরাষ্ট্রের ২টি যুদ্ধবিমানকে রাশিয়ার ধাওয়া

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ মে ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ মে ২০২৩ | ২৮জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বাল্টিক সাগরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া মার্কিন বিমান বাহিনীর এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমানকে বাধা প্রদান করেছে মস্কো। মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে রাশিয়া। খবর এএফপির।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সীমান্ত থেকে বিদেশি সামরিক বিমানগুলোকে ধাওয়া দেওয়ার পর মস্কোর যুদ্ধবিমান তার বিমান ঘাঁটিতে ফিরে আসে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এক্ষেত্রে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সীমান্ত লঙ্ঘন প্রতিরোধ করেছে। এ সময় রাশিয়ার যুদ্ধ বিমানটি আকাশসীমা ব্যবহারের আন্তর্জাতিক আইন কঠোরভাবে মেনে তার অভিযান পরিচালনা করে। এদিকে পেন্টাগন মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার নিশ্চিত করেন যে মার্কিন যুদ্ধবিমান রাশিয়ার যুদ্ধ বিমানের ধাওয়ার শিকার হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বি-১ বোমারু বিমানগুলো ইউরোপে একটি দীর্ঘ পরিকল্পিত মহড়ায় অংশ নিচ্ছিল। মাত্র এক সপ্তাহ আগে রাশিয়া বলেছিল তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা করা দুটি বিমানকে তারা বাধা দিয়েছিল। এগুলোর একটি জার্মানির এবং আরেকটি ফ্রান্সের বিমান ছিল।


আরও খবর

বিশ্বে যানজটের পঞ্চম শহর ঢাকা

বুধবার ০৫ এপ্রিল ২০২৩




শেখ হাসিনার আরেকটি বৈশ্বিক অর্জন জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বীকৃতি

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ মে ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ মে ২০২৩ | ৪৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘে সম্প্রতি। প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি শিরোনামের ঐতিহাসিক রেজুলেশনটি সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তাবিত রেজুলেশনটিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী উদ্যোগের ব্যাপক স্বীকৃতি দিয়ে এ উদ্যোগকে দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই অর্জন জনগণের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবায় সাম্য আনয়নে বাংলাদেশের দৃঢ়প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে। সাধারণ পরিষদে রেজুলেশনটি উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল মুহিত। কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনস্বরূপ জাতিসংঘের ৭০টি সদস্য রাষ্ট্র এ রেজুলেশনটি কো-স্পন্সর করে। বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনে এ রেজুলেশনের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক এ রেজুলেশনের অনুমোদনকে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের  বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রেজুলেশনটির সফল বাস্তবায়ন কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এই রেজুলেশনের সুদূরপ্রসারি প্রভাব রয়েছে। কারণ এটি সদস্য দেশগুলোতে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তন ও বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক ও দাতাদের যথাযথ কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সব মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে এ অনন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যা সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সুফল সরবরাহে বিপ্লব ঘটিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে রেজুলেশনটি সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করেন উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মো. মনোয়ার হোসেন। মিশন গত কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং এর ধারাবাহিকতায় এই রেজুলেশনটি এই বছরের শুরুর দিকে মিশন সদস্য রাষ্ট্রের বিবেচনার জন্য প্রস্তাব করে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে গত ৪ মাস নিবিড় আলোচনা ও নেগোশিয়েশনের পরে মঙ্গলবার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সারাদেশে ১৮ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলো প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে এবং সাধারণ মানুষ সেখানে চিকিৎসা নিতে আসছে। এর ফলে দেশে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার অভিজ্ঞতা অন্য দেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক দেশ এখনও মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারেনি। সেসব দেশ চাইলে বাংলাদেশ তাদের কাছে আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে। ১৯৯৮ সালে সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক শুরু করলেও ২০০১ সালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর একটি ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে এটি আর কেউ বন্ধ করতে না পারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্যোগ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি ১০ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।

এই গৌরবের দাবিদার এ দেশের মানুষ। কারণ তারা ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে বারবার তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। বুলেট, বোমা ও গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যাওয়ার কারণেই শেখ হাসিনা দেশবাসীর কল্যাণে কাজ করে যেতে পারছেন। সাম্প্র্রতিক সময়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অগ্রগতি হয়েছে বলে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সকলেই মনে করছেন। বর্তমানে দেশে ৫টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১৬টি (সরকারি-বেসরকারি) মেডিকেল কলেজ রয়েছে। গত এক দশকে সরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। বেসরকারি খাতে দেশে প্রচুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে ৩০টি বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সফলভাবে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করেছে এবং অনেক জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনা করে অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে, মহামারির কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যাবে। তবে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বিত এবং সময়োপযোগী প্রচেষ্টা সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে অ্যানেস্থেশিয়াতে ৪০৯ জন জুনিয়র পরামর্শদাতা, ২ হাজার চিকিৎসক এবং ৫ হাজার নার্স বিশেষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।     

নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গত ১৪ বছরে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা এখন অনেক সহজলভ্য হয়েছে। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক চিকিৎসা সেবার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উপরও আমাদের নজর দিতে হবে। তাছাড়া কমিউনিকেবল এবং নন-কমিউনিকেবল রোগের বিষয়গুলো নিয়ে সমানভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা এখন অনেক সহজলভ্য হয়েছে। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো তৈরির জন্য আমরা সারাদেশে ৬০০-এর বেশি হাসপাতাল নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। ১১টি স্নাতকোত্তর স্তরের সুপার স্পেশাল হাসপাতাল, হৃদরোগ, বক্ষ ব্যাধি, ক্যানসার ও নিউরো সাইন্স সংক্রামক ব্যাধি ও কুষ্ঠরোগ হাসপাতালসহ অন্যান্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের চিকিৎসাসেবা যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকদের দক্ষতাও বেড়েছে। আগে যেসব রোগে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া হতো, বর্তমানে এসব রোগের চিকিৎসা দেশেই হচ্ছে এবং চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।

আমাদের দেশে তো বটেই সারাবিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হৃদরোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, হৃদরোগজনিত রোগে বর্তমান বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ হৃদরোগের কারণে হয়ে থাকে। আর দেশে বর্তমানে প্রতি হাজারে ১০ জন শিশু হৃদরোগে ভুগছে। এছাড়াও প্রতি ৫ জন তরুণের মধ্যে একজন হৃদরোগ ঝুঁকিতে রয়েছে। খাদ্যাভ্যাস কায়িক পরিশ্রম না করা, ধূমপান, ডায়াবেটিকসহ নানা কারণে দেশে হৃদরোগে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকার প্রতিটি জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে।

তবে স্বাস্থ্যসেবায় আরো অনেক কাজ করতে হবে। দেশে সংখ্যায় অনেক ডাক্তার তৈরি হলেও জনসংখ্যা অনুপাতে তা বড় নয়। ১ হাজার ৫৮১ জন লোকের জন্য রয়েছেন একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক। গ্রামীণ, প্রত্যন্ত এবং দুর্গম অঞ্চলগুলোতে চিকিৎসক শূন্যতার হার বেশি। অনেক সরকারি হাসপাতালে সরঞ্জাম পাওয়া গেলেও প্রযুক্তিবিদ বা টেকনিশিয়ানের পদ খালি রয়েছে। এসব পদে নিয়োগ ও তাদের ধরে রাখা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার উন্নয়ন। এমনও অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম থাকলেও সেগুলো চালানোর মতো সঠিক জ্ঞানস¤পন্ন কাউকে পাওয়া যায় না। ডাক্তারের বাইরে নার্স, মিডওয়াইফ এবং মেডিকেল টেকনোলজির ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাজেট বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। যে বাজেট বরাদ্দ করা হয় তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, বেতন ও ভাতার জন্য ব্যয় হয়। তাই বাজেট বরাদ্দ থেকে রোগীদের জন্য প্রকৃত উপকারিতা কম পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য বাজেটের প্রচলিত একটি খাত হলো সরঞ্জামাদি সংগ্রহ বা প্রকিউরমেন্ট এবং অবকাঠামো নির্মাণ। গত একযুগ জিডিপির ০.৯% কাছাকাছি বরাদ্দ পেয়ে আসছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামো অনেক সমৃদ্ধ। ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা যে দুর্বলতা রয়েছে তা কাটিয়ে তুলতে হবে। শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, মাতৃমৃত্যু হার কমেছে, টিকাদান কর্মসূচি গতি পেয়েছে ইত্যাদি। সবার জন্য সহজলভ্য ও মানসম্মত স্বাস্থ্য সুবিধ্য। নতুন নতুন রোগ মহামারির আকার নিচ্ছে। ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। নতুন রোগ হিসেবে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এগুলো এসডিজি যুগের মহামারি। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির মতো স্বাস্থ্যসেবার পরিষেবা বেসরকারি খাতের মাধ্যমে প্রসারিত হচ্ছে। তবে এর গুণমান নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচিত কার্যকরভাবে এই খাতের নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করা। স্বাস্থ্যসেবার গুণমান এবং ব্যয় অনেকটা পরিবর্তিত হয় এসব নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য খাতকে সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যে রূপান্তর করেছে। স্বাস্থ্য খাতে সিস্টেমের সমস্যা রয়েছে। যারা সেবা দেবেন তারা হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না। নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের দুর্বলতা রয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা নেই। এসব সমস্যা দূর করতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকার কাজ করছে। আমাদের হেলথ সিস্টেমে আগের চেয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আগামীতে আরও হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সসহ দেশের স্বাস্থ্যসেবা দানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে এ বছর সাড়ে ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে এবং ১৫ হাজার নার্স নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে আরো ৮ হাজার বেড বাড়ানো হবে। ২০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। বড় ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালগুলোতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা লোকজন বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে তাদের সহযোগিতার জন্য হেল্প ডেস্ক স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বাড়িয়ে পৃথকস্থানে করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেডিকেল কলেজ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান বাড়ানোর জন্য পুরাতন সব কমিউনিটি ক্লিনিক ভেঙে আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নতুন ডিজাইনের ভবন তৈরি করা হচ্ছে। হাসপাতালেল বর্জ্য বাইরে না ফেলার ব্যাপাওে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোকে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে হাসপাতালগুলোর কার্যক্রমের ওপর সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিংয়ের কাজ শুরু হচ্ছে। এ খাতের আরো উন্নতির জন্য মাতৃমৃত্যু ১ এ এবং শিশু মৃত্যুহার ৭০ এর নামিয়ে আনাই লক্ষ্য।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবক্ষেত্রে একটি শক্ত নীতিমালা, পরিকল্পনা এবং অবকাঠামো রেখে গেছেন, যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে আজকের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। তার পরিকল্পনা শুধু রাজধানী বা শহরকেন্দ্রিক ছিল না; বরং জেলা, থানা, ইউনিয়ন, গ্রামসহ তৃণমূল পর্যায়ে সেগুলো নিশ্চিত করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য আর তা বাস্তবায়নের জন্য তিনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, প্রতিটি জেলায় হাসপাতাল, থানা হেলথ কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুবিন্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রণয়নের পথ দেখিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যকে সংবিধানের মূল অধিকার, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব এবং চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদাদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অগ্রযাত্রা শুরু।

ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে বহু হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে এবং শতাধিক সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চালু রয়েছে। অনেক বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনামূল্যে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, প্রসূতিসেবা, অর্থোপেডিক, চোখ, নাক-কান-গলা, হৃদরোগ, নবজাতক ও অপুষ্টিজনিত সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। সংক্রামক ব্যাধি, কুষ্ঠ ও অন্য রোগের জন্য ১৪টি বিশেষায়িত হাসপাতাল ছাড়াও সব মেডিকেল কলেজ, জাতীয় হৃদরোগ এবং অনেক জেলা হাসপাতালে সিসিইউ-এর চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। ক্যানসার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটে।

নতুন অনেক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, অত্যাধুনিক ক্যানসার ও জাতীয় কিডনি হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, জাতীয় হৃদরোগ ও অ্যাজমা সেন্টার, পঙ্গু হাসপাতালের সম্প্রসারণ, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালকে সরকারি হাসপাতালে রূপান্তর, মুগদায় ৫শ শয্যার হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ই এন টি হাসপাতাল, জাতীয় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, বক্ষব্যাধি ও কুর্মিটোলা ৫শ শয্যাবিশিষ্ট এবং ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, খুলনার আবু নাসের বিশেষায়িত ও গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল এবং এ হাসপাতালকে কেন্দ্র করে অনলাইন চক্ষুসেবা কার্যক্রম চালু করতে ভিশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।


আরও খবর