মাকে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচব, কার কাছে থাকব আমি। আমিতো মাকে ছাড়া কখনো কোথাও থাকিনি। বাবা পালিয়েছে, মা নেই। আমার দুনিয়াতো শেষ, আমাকেও মায়ের সঙ্গে কবর দিয়ে দেন। বাবার নৃশংসতায় মাকে হারানোর পর প্রায় বাকরুদ্ধ মাহি খাতুন বিড়বিড় করে বারংবার এ কথাগুলো বলছে আর চোখ মুছছে।
সোমবার সরেজমিন
দেখা যায়, ছোট্ট কিশোরী মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনরা। তবে কোনো সান্ত্বনাই যেন
তাকে প্রবোধ দিতে পারছে না। কারো সঙ্গে তেমন কথা বলছে না, কারো ডাকেও খুব একটা সাড়া
দিচ্ছে না।
শনিবার মধ্যরাতে
আকস্মিক ঘুম ভেঙ্গে মেঝেতে মায়ের গলাকাটা লাশ আর পাশে রক্তাক্ত হাঁসুয়া হাতে বাবাকে
দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠার পর থেকেই প্রায় নির্বাক হয়ে গেছে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া
মাহি (১২)।
জানা যায়, শনিবার
রাত আড়াইটার দিকে বড়াইগ্রামের গোপালপুর স্কুলপাড়ায় পরকীয়া সন্দেহে নিজ ঘরে মেয়ের সামনেই
স্ত্রী বিউটি খাতুনকে (৪৫) গলা কেটে হত্যা করেছে পাষণ্ড স্বামী আব্দুল বারেক (৪৮)।
পেশায় ভটভটি চালক আব্দুল বারেক ওই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে। ঘটনার রাতে ঘরে
১২ বছর বয়সী মেয়ে মাহি আক্তার উপস্থিত ছিল এবং মেয়ের সামনেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে
বলে জানা গেছে।
প্রতিবেশী ও থানা
সূত্রে জানা যায়, বিউটি খাতুনের একই এলাকার এক ওয়ার্কশপ মিস্ত্রির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক
রয়েছে বলে সন্দেহ করত আব্দুল বারেক। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি
হতো। শনিবার রাতেও মোবাইল ফোনে কথা বলাকে কেন্দ্র করে ঝগড়া হয়। পরে মেয়েকে নিয়ে আব্দুল
বারেক ও মেঝেতে বিছানা করে বিউটি খাতুন শুয়ে পড়েন। মধ্য রাতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় স্বামী
আব্দুল বারেক ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে স্ত্রী বিউটির গলা কেটে হত্যা করে।
প্রতিবেশী আব্দুল
খালেক জানান, নিহত বিউটি খাতুনের এক ছেলে, দুই মেয়ে। তার মধ্যে বড় ছেলে ঢাকায় থাকে
আর বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ঈশ্বরদী এলাকায়। ছোট মেয়ে মাহি বাড়িতে থেকে গোপালপুর উচ্চ
বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মা খুন হয়েছে, বাবাও পলাতক। মেয়েটি এখন একেবারে অসহায়
হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে এই নির্মম দৃশ্য দেখে ছোট্ট মেয়েটি মানসিকভাবে
অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
বড়াইগ্রাম থানার
অফিসার ইনচার্জ আবু সিদ্দিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে থানায় হত্যা
মামলা দায়ের হয়েছে। ঘাতক স্বামীকে আটক করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।