আমাদের শরীরের
অস্থিসন্ধিতে (যেমন হাতের আঙুলের যেখানটায় চাপ দেওয়া হয়) কিছু খালি জায়গা থাকে। এ জায়গাগুলো
তরল অস্থিমজ্জা দিয়ে ভর্তি থাকে। এত দিন ভাবা হতো, আঙুল ফোটানোর সময় অস্থির মাঝে ফাঁক
বেড়ে যায়। এর ফলে বুদ্বুদ সৃষ্টি হতো। সেটা বেড়িয়ে যাওয়াতেই সে শব্দটা সৃষ্টি হয়।
এ তত্ত্বটা ভুলে
যেতে হচ্ছে। ফিলাডেলফিয়ার রথম্যান ইনস্টিটিউটের হাত ও কবজির চিফ অব সার্জারি ডা. পেদ্রো
বেরেজিকলিয়ান জানাচ্ছেন, আঙুল ফোটালে কেন এমন আওয়াজ সৃষ্টি হয়, ‘যখন আপনি আঙুল ফোটান কিংবা টানেন, তখন
দুই হাড়ের মাঝে কিছু ফাঁকা জায়গা বের হয়। এতে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে হাড়ের
মজ্জা ঢুকে যায়। হঠাৎ করে এভাবে তরল ঢোকার ফলেই সে শব্দ সৃষ্টি হয়।’
অনেক তো জ্ঞান
নেওয়া হলো, কিন্তু আসল প্রশ্নের জবাব কোথায়? এভাবে আঙুল ফোটালে কি আসলেই হাড়ের ক্ষয়
হয়? ডা. বেরেজিকলিয়ান বলছেন, না! আঙুল টানাটানি কিংবা ফোটানোর সঙ্গে শরীরের হাতের ক্ষয়ের
কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর দাবি, ‘আঙুল ফোটানোর
অভ্যাস অনেক বিস্তৃত। যদি ক্ষতিকরই হতো, তবে এ নিয়ে অনেক রিপোর্টই পাওয়া যেত। কিন্তু
সেটা তো হচ্ছে না। তাই হাড়ে সমস্যা কিংবা বাতের সঙ্গে আঙুল ফোটানোর কোনো সম্পর্ক নেই।’
এতেও বিশ্বাস
না হলে ডোনাল্ড আনগারের ঘটনাটি শুনুন। আনগার নামের ক্যালিফোর্নিয়ার এক চিকিৎসক ৬০ বছর
ধরে নিজের ওপর একটি পরীক্ষা চালিয়েছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে বাঁ হাতের আঙুল ফুটিয়েছেন
কিন্তু ডান হাত ধরেননি। এত দীর্ঘ পরীক্ষার ফল? দুই হাতের মাঝে কোনো পার্থক্যই খুঁজে
পাননি ডক্টর আনগার। এত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য ২০০৯ সালে ‘আইজি নোবেল’ বা ইগনোবেল পুরস্কারও জুটেছে
তাঁর।
ফলে সারা দিন
মোবাইল টিপে টুপে হাতের আঙুল যদি কড়কড়ে অনুভূতি এনে দেয়, পটাস-মটাস করে আঙুলগুলো একটু
ফুটিয়ে নিতেই পারেন। ফুল ফোটানোর সাধ্য হয়তো আমাদের নেই, আঙুল ফোটানোর তো আছে!