বিএনপি নয়াপল্টন
ছেড়ে আরামবাগে সমাবেশ করতে চাইলেও তাতে আপত্তি জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বলেছেন, ভেন্যু পাল্টালেও সেখানেও জমায়েত সড়কেই হবে। আবার সেই এলাকাটি আরও বেশি সংবেদনশীল।
কারণ, এর আশেপাশেই দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের অবস্থান।
গত ৮ অক্টোবর
থেকে প্রতি শনিবার বিএনপি বিভাগীয় শহরগুলোতে যে সমাবেশ করে আসছে, তার ধারাবাহিকতায়
১০ ডিসেম্বর শনিবার রাজধানীতে ডাকা হয়েছে জমায়েত। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা,
রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে জনসভাস্থল নিয়ে কোনো ঝামেলা না হলেও
রাজধানীর সভাস্থল এখনও অনিশ্চিত।
বিএনপি নয়াপল্টনে
সমাবেশ করতে চাইলেও তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তবে সেখানে যেতে
রাজি নয় দলটি। তারা বিকল্প হিসেবে অন্য এলাকার নাম প্রস্তাব করতে বলেছে। পরে নিজেরাই
পুলিশের কাছে আরামবাগ বরাদ্দ দিতে অনুরোধ করেছেন।
সড়কে সমাবেশের
অনুমতি দেয়া হবে না বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারের পক্ষ থেকে বক্তব্য আসার পর আরামবাগ
বেছে নেয়ার ইচ্ছার কারণ সেখানে একটি ছোট মাঠ আছে। তবে সেটিও বড় সমাবেশের জন্য যথেষ্ট
নয়। লোক সমাগম বেশি হলে নেতা-কর্মীদের ভিড় ছড়াবে বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল ও আশেপাশে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির এই নতুন চাওয়া নিয়ে কথা বলেন
তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন,
‘তারা
যে বলছে, অন্য রাস্তা বা মতিঝিলের রাস্তা। মতিঝিল ঢাকার ব্যস্তমত সড়কগুলোর একটি। এটা
কেন তাদের এতো পছন্দ? যেখানে অনেক ব্যাংক, বিমা আছে, অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে।
এটা কেন তাদের এত পছন্দ। এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে।’
সোহরাওয়ার্দী
নিয়ে বিএনপির আপত্তির কারণ কী সে প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপিই
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যখন তাদের বরাদ্দ দেয়া হলো….. যেখানে বাংলাদেশের সব বড় বড়
জনসভা হয়েছে, যে ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন, যেখানে
পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করেছে, সেখানে তারাও অতীতে বড় বড় সমাবেশ করেছে। আমরা তো নিয়মিতই
করি।
‘সেখানে তাদের যেতে এত অনিহা কেন? তারা রাস্তায় শুধু জনসভা করতে চায়,
গাড়ি-ঘোড়া ভাঙচুর করতে চায়, জনজীবনে বিপত্তি ঘটাতে চায়। নাগরিকরাও রাস্তায় সভা করার
বিপক্ষে। কিন্তু তারা রাস্তার বদলে রাস্তা চেয়ে বেড়াচ্ছে। এটি তো কোনভাবেই একটি দায়িত্বশীল
রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না। মাঠের বিকল্প হিসেবে তারা আরেকটি মাঠের কথা বলতে পারে।
সেটা বলে না। বলে এ রাস্তা না হলে ও রাস্তা।’
মন্ত্রীর ধারণা,
বিএনপি আসলে কোনো জনসভা করতে চায় না। তারা এটিকে ইস্যু বানাতে চায় এবং দেশে বিশৃঙ্খল
পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টায় আছে।
সরকার দেশে
কাউকে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে দেবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলেরও কর্তব্য আছে। কেউ
বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে আমাদের দলের নেতকর্মীরা দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে তাদের
প্রতিহত করবে।’
বিদেশি কূটনৈতিকদের
সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের মালিক জনগণ। কে ক্ষমতায় থাকবে কে থাকবে না সেটি নির্ধারণ করবে
জনগণ। এখানে কূটনীতিকদের বেশি কথা বলার সুযোগ নেই।
‘দুঃখজনক হলেও সত্য বিএনপি ক্ষণে ক্ষণে কূটনীতিকদের কাছে ছুটে যায়। কেউ
কাউকে কোলে করে ক্ষমতায় বসাবে না। তাদের কাছে বারবার ছুটে গিয়ে বিএনপি নিজেদের দেউলিয়াত্ব
প্রকাশ করছে।’
বিএনপি এভাবে
ছুটে যায় বলেই কূটনীতিকরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পায় বলেও মনে করেন
মন্ত্রী। বলেন, ‘যখন বিদেশি কূটনীতিকরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বেশি কথা বলে, তখন
আমি মনে করি এটি দেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ হয়ে যায়। এটি হওয়া উচিত নয়।’