অবসরপ্রাপ্ত
সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কক্সবাজারের
টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণকে
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আত্মসমর্পণের পর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৩
মে) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন দুর্নীতি
দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার পলাতক আসামি চুমকি কারণ।
দুদকের আইনজীবী
মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণের পর চুমকি কারণ আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জামিনের
আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
দুদকের দায়ের
করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় চুমকি কারণের সঙ্গে তার স্বামী প্রদীপও আসামি হিসেবে
আছেন। এ মামলায় মোট ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতোমধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার
২৪তম সাক্ষীর মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য এদিন
প্রদীপকেও আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে, ২০২১
সালের ১৫ ডিসেম্বর দুদকের মামলায় আসামি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে
বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
হয়।
২০২০ সালের
২৩ আগস্ট দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১
এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মামলায় প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে
প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে তিন কোটি ৯৫
লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদক অভিযোগ করে। আরও ১৩ লাখ
১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করার অভিযোগও আনা হয়।
তদন্তের পর
গত ২৬ জুলাই দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারি পরিচালক মো. রিয়াজ
উদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং
প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫
(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
অভিযোগপত্রে
প্রদীপের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৩৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন
করে সেই সম্পদ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তরপূর্বক মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের
তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করা হয়। এছাড়া উভয়ের বিরুদ্ধে ৪৯ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার অর্জিত
সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ
করে দুদক।
চুমকি কারণের
নামে নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটায় দুই কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয় তলা
বাড়ি, পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের
জমি এবং কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকার একটি ফ্ল্যাটের বিষয় উল্লেখ
আছে।
সম্পদ বিবরণীতে
চুমকি কারণ নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে সম্পদ অর্জনের তথ্য দিয়েছিলেন।
তবে অভিযোগপত্রে মাছের ব্যবসা থেকে চুমকির আয়ের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ
করা হয়।
অভিযুক্ত প্রদীপ
কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের
মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের
নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ সন্তানদের নিয়ে বসবাস
করেন। তবে প্রদীপের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে চুমকি পলাতক ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০
সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের
গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপর টেকনাফ
থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায়
ওই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন প্রদীপ কুমার দাশ। ওই মামলায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি
দেওয়া রায়ে প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।