Logo
শিরোনাম

আয়-ব্যয় ভারসাম্যহীন, বাড়ছে দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৪ মে ২০২২ | হালনাগাদ:বুধবার ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮৪০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষণ করে দেখো গেছে একটি পরিবারের প্রতি মাসে যেসব পণ্য কেনার প্রয়োজন হয় তার প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই গত তিন মাসে বেড়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষদের পড়তে হচ্ছে সংকটে। বাড়তি খরচ মেটাতে অনেকেই লাগাম টানতে হচ্ছে বাজার খরচে। কিন্তু তাতে কি পরিত্রাণ মিলবে?

হাশেম সাহেব মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মাসিক আয় ৪৫ হাজার টাকা। এক ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে থাকেন মিরপুরের ভাড়া বাসায়। তার কাছে মাসিক বাজার খরচের হিসাব জানতে চাইলে একটি হিসেবের তালিকা ধরিয়ে দেন। এতে দেখা যায় স্বাভাবিকভাবে এতদিন ধরে প্রতি মাসে তিনি যেসব পণ্য কিনতেন, বর্তমান বাজার দর অনুসারে এর পরিমান ২৩ হাজার ৩২৩ টাকা। অথচ ছয় মাস আগে এই খরচ ছিল ১৫ হাজারের মধ্যে। এ খরচের সঙ্গে আছে বাড়িভাড়া ১৮ হাজার টাকা, ইন্টারনেট বিল, পত্রিকার বিল, ডিস বিল, বুয়ার বেতন। এ ছাড়া ছেলের পড়াশুনা ও অন্যান্য খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা। আছে ডাক্তার, পোশাক পরিচ্ছেদের খরচ ও অফিসের যাতায়াত খরচ তো আছেই। হাশেম সাহেব আক্ষেপ করে বলেন, খরচ যে হারে বেড়েছে আয় তো বাড়েনি। আগে তো কোনো রকম চলে যেত। এখন কোন খরচ কমাব ভেবে পাচ্ছি না।

আবুল বাশার একটি কলেজের সিনিয়র শিক্ষক। তার মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা। তিনি জানান, যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে তাতে চলা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। করোনার সময় কলেজ বন্ধ ছিল। তখন ঠিকমতো বেতন হতো না। এখন করোনা নেই, কিন্তু দ্রব্যমূল্যের বাজার যে অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে তো জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। খরচের লাগাম তো আর টানা যায় না।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা বলছে। সরকারের পক্ষ থেকে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রিসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু কার্যত যা হচ্ছে তা হলো খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণেরও চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু একটি পরিবারে প্রতিদিন আরও কিছু ব্যবহার্য্য পণ্য আছে যেগুলোর প্রতিটিরই দাম বেড়েছে গত ছয় মাসে। ফলে শুধু খাদ্যপণ্যই নয় বেড়েছে একটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যাত্রার সামগ্রিক খরচ।

রাজধানীর সবুজবাগ এলাকার এক দোকানি লিয়াকত হোসেনের দোকানে গেলে দেখা যায় অনেক ক্রেতার ভিড়। ক্রেতারা বিভিন্ন পণ্য কিনছে আর হাপিত্যেশ করছে। এত দাম বাড়ল। কীভাবে চলবে। এসব। লিয়াকত জানান, কিছু দিন আগেও ১০০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করেছি। এখন ১২০ টাকা। প্যকেট আটা ব্র্যান্ড ভেদে দাম ছিল ৬০-৬৫ টাকা। ঈদের আগে ছিল ৯০ টাকা। এখন ১১০ টাকা। আগামী সপ্তাহে হবে ১১৫ টাকা। সবাই শুধু কাঁচা বাজারের কথা বলে। কাঁচা বাজার ছাড়াও তো অনেক জিনিস লাগে প্রতিদিন। এগুলোর প্রত্যেকটার দামই বেড়েছে। আমাদের তো কিছু করার নেই। কিন্তু মানুষের অবস্থা কি তা তো বুঝতে পারছি। আমাদেরও তো কিনে খেতে হয়। আমরা কীভাবে চলব। গত তিন মাসে ডাল বেড়েছে ৩০ টাকা, গুড়া মরিচ কেজিতে ৪০ টাকা, গুড়া হলুদে ৩০ টাকা, জিরায় ৩০ টাকা। আর তেলে তো জানেনই। তেল নিয়ে কতকিছু হয়ে গেল। এগুলো ছাড়া কি একটি পরিবারে রান্না চলে? সকালের ঘুম থেকে জেগে যে টুথপেস্ট ব্যবহার করেন সেটার দামও তো বেড়েছে ৩০ টাকা। টয়লেট পেপার, গায়ে মাখার সাবানে ১৫ টাকা, কাপড় কাচার সাবানে ৭ টাকা, কাপড় কাচার ডিটারজেন্ট পাওডারে ৩০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া কিচেন ‌ন্যাপকিনে ২৫ টাকা, মাজনি ৫ টাকা, ভিমবার ৭ টাকা বেড়েছে। হারপিক টয়লেট ক্লিনার এর দামেও ১০ টাকা বেড়েছে। টয়লেট পেপার ছাড়া তো এখন চলে না। সেটার দাও বেড়েছে ৫ টাকা। ফুল ঝাড়ু যেটা প্রতিটি ঘরেই থাকে তার দামও বেড়েছে ২০ টাকা।

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ধারা থেকে বাদ যায়নি ইউটিলিটি বিলের বাড়তি খরচ। এলপিজি গ্যসের দাম করোনাকালে ছিল এক হাজার টাকার মধ্যে। এরপর বেশ কয়েকদফা দাম বাড়িয়ে কমিয়ে বর্তমানে ১৪৫০ টাকা। এদিকে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়নোর প্রস্তাব, গ্যাসের দাম ১০০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা আছে। প্রস্তাব অনুসারে এই সেবাখাতের দাম বাড়লে জীবনযাত্রার ব্যয় কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ধারণা করা কঠিন। শিশু খাদ্যের দাম ৪০০ গ্রামের দুধের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা বেড়েছে যা আগে ছিল ৮৭৫ টাকা।

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যে সংকটে আছে তা থেকে মুক্তি দিতে না পারলে আরও সংকট তৈরি হবে। তাই বাজার মনিটরিংয়ে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে৷

জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ইএনডিপি) কান্ট্রি ইকনোমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যাবে দুইভাবে। ভর্তূকি দিয়ে ও ভোক্তা পর্যায়ে। ভোক্তা পর্যায়ে টিসিবিসহ বিভিন্নভাবে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের জন্য ভোজ্যতেলও খাদ্য সহায়তার অংশ হিসেবে বাড়াতে হবে। আসন্ন বাজেটে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার জন্য ভর্তুকি দিতে হবে উল্লেখ করে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কৃষি উৎপাদনে জোর নজর দিতে হবে। সেচে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দরিদ্রদের জন্যই এই ভর্তুকি দিতে হবে।  সাধারণ মানুষের দৈনিন্দিন ব্যয় বৃদ্ধির তালিকার লাগাম টানার জন্য মজুতদারের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। কোনোক্রমেই যাতে তারা বেশি মুনাফার লোভে এ কাজটা করতে না পারে। তাহলে কিছুটা হলেও সহনীয় থাকতে পারে ব্যয় বৃদ্ধির তালিকা। বাজার গবেষণা পদ্ধতি কি আমাদের আছে? থাকলে কতটা কার্যকর? না থাকলে এটা দরকার কি না।

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস, পরিসংখ্যান ব্যুরো বাজার গবেষণা করে থাকে। কিন্তু তথ্যের বড়ই সংকট। তাই তথ্য সংগ্রহে দক্ষ জনশক্তির দরকার। আরও গবেষণার জোগান দিতে হবে।

অপরদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব এর সভাপতি গোলাম রহমান নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্ভব না হওয়া কারণ সম্পর্কে বলেন, যে সব কারণে বাজারে অস্থিরতা তা অনেক কারণে নিয়ন্ত্রণে নেই সরকারের। কারণ আন্তজাতিক বাজারে কারো পক্ষে নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে সরকারকে। সহনশীল থাকতে হবে ব্যবসায়ীদের। অতি মুনাফার লোভ পরিহার করতে হবে।   ক্যাব বাজার নিয়ে গবেষণা করে না। তবে বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বছর শেষে কোন কোন পণ্যের দাম বাড়ে ও কমে তা সবাইকে জানানো হয় বলে জানান গোলাম রহমান।

গোলাম রহমান বলেন, আগামী বাজেটে নতুন করে কোনো ধরনের পণ্যে কোনো শুল্ক কর আরোপ করা যাবে না। বাজাটে শুল্কের হার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। তবে বিলাসী পণ্যের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না, এক্ষেত্রে বাড়াতে হবে। 


আরও খবর

আঙ্গুল ফোটানো কি খারাপ?

শনিবার ০২ জুলাই 2০২2