বাংলাদেশের
আগামী জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য
ও জার্মানি প্রকাশ্যে যেসব পরামর্শ দিচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে রাশিয়া। একইসঙ্গে
দেশটির অভিমত, শাহীনবাগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থকের পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দেখা করতে যাওয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের
শামিল।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোর স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে
এই মন্তব্য করেন। ঢাকার রুশ দূতাবাস আজ রোববার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বাংলাদেশে মার্কিন
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সংঘটিত ব্যাপকভাবে প্রচারিত একটি ঘটনা রাশিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ
করছে জানিয়ে মারিয়া জাখারোভা বলেন, ২০১৩ সালে নিখোঁজ একজন বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর
পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর একটি সংগঠনের
হুমকির মুখে পড়েছিলেন। আমেরিকান একজন কূটনীতিক যখন বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের বিষয়ে
যত্নবান হওয়ার অজুহাতে ক্রমাগত দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলো প্রভাবিত করার চেষ্টা
করছিলেন তখন এমন ফলই প্রত্যাশিত।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার কথা বলে ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের
চেষ্টা করে যাচ্ছেন- এমন মন্তব্য করে রুশ মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে মার্কিন দূতের ব্রিটিশ
ও জার্মান কূটনৈতিক মিশনের সহকর্মীরাও একই কাজ করছেন। তারা বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন
স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা
বিশ্বাস করি, এ ধরনের কার্যকলাপ একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর শামিল
এবং সেটি গ্রহণযোগ্য নয়।
মারিয়া জাখারোভা
বলেন, যদি কেউ জানতে চান- ‘কূটনীতিক, দায়মুক্তি, দূতাবাস, নিরাপত্তা’ শব্দগুলো কেমন হবে? আমরা সব সময়
আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে এই বিষয়গুলো
দেখার আহ্বান জানাই। এগুলোই মৌলিক নীতি।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত
গত ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহীনবাগে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম
সুমনের বাসায় যান। সেখানে তিনি ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়কারী নিখোঁজ সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলিসহ পরিবারের
সঙ্গে দেখা করেন। এ খবর পেয়ে সেখানে ‘মায়ের কান্না’ নামে আরেকটি সংগঠনের সদস্যরা ১৯৭৭ সালে সেনাশাসনের সময়ে সংঘটিত মানবাধিকার
লঙ্ঘনের ঘটনার ন্যায়বিচার চেয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে স্মারকলিপি দিতে ঘিরে ধরেন।
সে সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মায়ের কান্নার সদস্যদের সঙ্গে কথা না বলে নিরাপত্তাকর্মীদের
সহায়তায় দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। সেখান থেকেই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে
ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা উল্লেখ করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ও অসন্তোষ প্রকাশ
করেন। গত ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের
সঙ্গে আলোচনায় পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক
মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তবে সরকার থেকে তার নিরাপত্তার ব্যাপারে
আশ্বস্ত করা হয়।
এদিকে এ ঘটনাকে
কেন্দ্র করে ঢাকায় শুরু হয়ে যায় রুশ-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধ। গত মঙ্গলবার রুশ দূতাবাস
তাদের ফেসবুক পেজে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রচার
করে। পরদিন ওই বিবৃতি নিয়ে পাল্টা একটি টুইটে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া একই নীতি অনুসরণ
করে কি না জানতে চায় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। এরই ধারাবাহিকতায় মস্কোর দৃষ্টিতে ইউক্রেন
যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কী ভূমিকা এবং ইউরোপে তার প্রভাব কেমন, তা তুলে ধরতে টুইটারে
একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে ঢাকার রুশ দূতাবাস। এরপরই মস্কো থেকে এলো ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের
চেষ্টা’ শীর্ষক রুশ মুখপাত্রের বক্তব্যটি।