যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চাউলিয়া দাসপাড়া গ্রামে পাখির বাসা তৈরী করে তা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। মূলত পাখিপ্রিয় মানুষের পাখি পোষার জন্য তৈরি হয় এসব পাখির বাসা। যশোরে বিভিন্ন রকমভাবে তৈরি এসব বাসা রপ্তানি হচ্ছে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতাল, বেলজিয়াম, পর্তুগালের মতো দেশে। পাখি পুষতে দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও যাচ্ছে পাখির বাসা। আর এ কারণে বহির্বিশ্বের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে বাড়ছে পাখির বাসার ব্যবহার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই গ্রামে প্রায় ৩০ রকম পাখির বাসা তৈরি হচ্ছে। এসব বাসা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হচ্ছে এলাকার বহু মানুষের। যশোর সদর উপজলোর চাউলিয়া গ্রামের দাসপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন বাড়ির বারান্দায় বসে বৌ-ঝিসহ নানা বয়সের নারী-পুরুষেরা পাখির বাসা বুনছে। এসময় পাখির বাসা তৈরি করছিলেন গৃহবধূ অঞ্জলী দাস। তিনি জানালেন, অর্ডার অনুযায়ী তাঁরা পাখির বাসা তৈরি করেন। বাসা অনুযায়ী ১৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা দামে তাঁরা এগুলো বিক্রি করেন।
বাড়ির মহিলরা সাধারণত এসব বাসা তৈরীর কাজ করে থাকেন বলে জানান তিনি। বলেন, এসব বাসা তৈরিতে তাঁরা ব্যবহার করেন বাঁশ, বেত, পাট, নারকলেরে ছোবড়া, খড়, ছন, বিচালি, প্লাস্টিকের পাইপসহ সহজলভ্য বিভিন্ন উপকরণ। গৃহবধু অঞ্জলী আরও জানান, প্রায় ৩০ বছর আমি পাখির বাসা বানাই, সংসারে কাজের অবসরে বাসা বুনি। এতে সংসাররে কাজের কোনো ক্ষতি হয় না; বরং বাড়তি টাকা আয় হয়।
পাখির বাসা তৈরীর উদ্যোক্তা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস জানান, ৩৪ বছর আগে তিনি ফেরি করে যশোর শহরে ঝুড়ি বিক্রি করতেন। সে সময় আমেরিকা প্রবাসী বাবুল দুটি পাখির বাসার নমুনা দেখিয়ে বলেন, তৈরি করতে পারবেন কি না? তিনি রাজি হন। এরপর তিনি তাঁর সে অনুযায়ী পাখির বাসা সরবরাহ শুরু করেন। এরপর পাখির বাসা তৈরি করে তিনি নিজে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। পরিবর্তন হয় তাঁর অবস্থার। এখন ঢাকার ব্যবসায়ীদের দেওয়া নমুনা অনুযায়ী পাখির বাসা সরবরাহ করেন। এসব ব্যবসায়ী এগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেগুলো রপ্তানি করেন।
গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাসের কাছ থেকে কাজ নিয়ে পাখির বাসা তৈরি করেন চাউলিয়া গ্রামসহ আশপাশের কয়কেটি গ্রামের ৩০টির মতো পরিবার। এতে দেড়শ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি সহায়তা পেলে বড় আকারে পাখির বাসা করার পরিকল্পনা করা যায়।