Logo
শিরোনাম

বিদ্রোহী কবির বন্দিজীবন

প্রকাশিত:বুধবার ২৫ মে ২০২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৪ নভেম্বর ২০২৩ | ২২০৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনাতে নজরুল/ যতই আসুক বিঘ্ন বিপদ, হাওয়া হোক প্রতিকূল/ একহাতে বাজে অগ্নিবীণা, কন্ঠে গীতাঞ্জলি/ হাজার সূর্য চোখের তারায় আমরা যে পথ চলি! বাঙালীর প্রতি মুহূর্তের অবলম্বন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজি নজরুল ইসলাম এই দুই দিকপাল কবি। বিশ্ব দরবারে বাঙালীর বাঙালী হয়ে ওঠার সমস্ত কৃতিত্ব এই দুই মনীষীর! সমগ্র বাঙালী জাতিকে এখনও সুরে, ছন্দে, কথায় বেঁধে রেখেছেন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলার ১৩০৬ সালের ১১ই জৈষ্ঠ্য অবিভক্ত বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করে এক হত দরিদ্র অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী শিশু দুখু মিঞার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম হয়ে ওঠার রোমহর্ষক কাহিনী আজ ইতিহাস।

নজরুল বিদ্রোহী কবি তার কাব্য বীণা অগ্নিবীণা তাতে ধ্বনিত হয়েছে চির যৌবনের গান; তাঁর বাঁশি বিষের বাঁশি যাতে রণিত হয়েছে সমস্ত প্রকার অমানবিকতার বিরুদ্ধে সুর ঝংকার। তিনি নিপীড়িত মানুষের ব্যথা বেদনার কাব্য কার, জীবনবাদী পরম মানবতাবাদী বলেই তিনি সাম্যবাদী কবি। নজরুলের কাল ভারতবর্ষের বুকে এক ক্রান্তিকাল। ব্রিটিশের পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিযুগে নজরুলের মনন, চিন্তন সেই সমাজ মানসকে আলোড়িত করবে এটাই স্বাভাবিক। এমন একজন মুক্তিযোদ্ধার কর্মকান্ডে নিঃসন্দেহে সরকার বাহাদুরের দৃষ্টি পরতে বাধ্য। ইংরেজের নজরে নজরুল ছিলেন রাজদ্রোহী। রাজ বিদ্রোহী নজরুলকে যারপরনাই ব্রিটিশের দমন পীড়নের শিকার হতে বাধ্য। তাই কবি নজরুলের সমান্তরালে বিপ্লবী নজরুলকে জানতে হলে কাজি সাহেবের ইংরেজ জেলের বন্দীজীবন সম্পর্কে জানা আবশ্যক। কবিতার জন্য কারাদণ্ড পেয়েছিলেন একমাত্র যে বাঙালি কবি তিনি কাজি নজরুল ইসলাম। শুরু থেকেই নজরুলের লেখা গান, কবিতা, সম্পাদকীয় রচনা শাসকের কু নজরে ছিল।

আসলে নজরুলের রচনা তো শুধু মাত্র সুর বা ছন্দে গাঁথা শব্দ নয়, তার কবিতার ছত্রে ছত্রে ঝরে পড়তো অগ্নি স্ফুলিঙ্গ আর সেই আগুনে উত্তপ্ত তখন বাংলার তরুণ প্রজন্ম। নজরুলের ভাষায় ছিল নব যৌবনের উন্মাদনা, ছন্দে ছিল নবযুগের আহ্বান, আর তার কন্ঠের সুরের জাদু নওজোয়ানদের রক্তে দোলা দিত! এই সংবাদ শাসক ইংরেজকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। বিশ শতকের প্রথম দিক থেকেই নজরুলের গান কবিতা দেশের মানুষকে করে তোলে উত্তাল আর কেড়ে নেয় শাসকের স্বস্তি। মুক্তি পাগল, বাঁধন হারা, বেপরোয়া, নির্ভীক কবিসৈনিক নজরুলের লক্ষ্য তখন দেশের শৃঙ্খল মোচন আর হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়ের মিলন। হিন্দু না ওরা মুসলিম? ঐ জিজ্ঞাসে কোন্ জন? কাণ্ডারী! বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার! নজরুলের প্রতিবাদ প্রকাশের মাধ্যম ছিল তাঁর কাব্যলক্ষী এবং সঙ্গীত রাগিণী। অদম্য প্রানাবেগ আর অত্যাশ্চর্য সৃষ্টিশীলতা তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বৃহত্তর বাংলার আকাশ বাতাস। নজরুলের রচনায় মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে শান্তিনিকেতন আশ্রমে আহ্বান জানিয়েছেন কিন্তু নজরুল চলেন আপন খেয়াল খুশিতে। বাঁধাধরা রোমান্টিক কাব্য সাধনা তার নয়, তার লেখনী প্রতি মুহূর্তে টক্কর দিচ্ছে শাসক ইংরেজের শাসন দণ্ডের সঙ্গে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে গাঁধীজীর অসহযোগ এবং খিলাফত আন্দোলন তখন স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ধারা কিন্তু দামাল তরুণ কবির এতে আস্থা ছিল না। ব্যক্তিগত ভাবে সেনাবাহিনীতে থাকার কারনে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজের দমন পীড়নের স্বরূপ তিনি জানতেন বলেই নরমপন্থী অসহোযোগ আন্দোলনে তার বিশ্বাস ছিল না। বলা বাহুল্য গান্ধীজির নরমপন্থার বিপরীতে তখন এক সক্রিয় রাজনৈতিক আন্দোলন আত্মপ্রকাশ করেছে। এই সক্রিয়পন্থীরা ছিলেন কমিউনিস্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত। নজরুল ইসলামের সঙ্গে এই সময় বিশেষ বন্ধুত্ব হয় বিশিষ্ট মার্কসবাদী মুজাফফর আহমেদ, আবদুল হালিম ইত্যাদি নেতাদের সঙ্গে। কবি গভীর ভাবে একাত্ম হয়ে পরেন মার্কসবাদী সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী আদর্শের সঙ্গে। এই সময় ই ১৯২২ সালের ১২ই আগস্ট কবি প্রকাশ করলেন তাঁর বিখ্যাত পত্রিকা ধূমকেতু। এই পত্রিকা প্রসঙ্গে কবিগুরুর আশীর্বাণী- আয় চলে আয় রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু।- ধূমকেতুকে আশ্রয় করেই শুরু হলো ভারতের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজনৈতিক আকাশে নজরুলের এক দুঃসাহসী অভিযান। একই সময় পাশাপাশি ফজলুল হকের নবযুগ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে নজরুলের ক্ষুরধার কলমে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে তীব্র কষাঘাত বর্ষিত হতে থাকে। পত্রিকা বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় ফজলুল হক কবিকে কলম সংযত করতে অনুরোধ জানালে ক্ষুন্ন মনে নজরুল নবযুগের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

নিজের কাগজ ধূমকেতুর পাতায় পাতায় ইংরেজের অত্যাচার অবিচার শোষন পীড়নের বিপক্ষে প্রতিবাদ শানিত হতে লাগল। গান্ধীজির আন্দোলনে আস্থা না থাকলেও আন্দোলন কারী দের উপর ব্রিটিশ পুলিশের বর্বর অত্যাচার নজরুল মেনে নিতে পারেন নি, এ প্রসঙ্গে ধূমকেতুর পাতায় ছাপা হলো তার বিখ্যাত কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে দেবশিশু দের মারছে চাবুক/ বীর যুবাদের দিচ্ছে ফাঁসী; ভূ ভারত আজ কসাই খানা/ আসবি কবে সর্বনাশী কবি রূপকের আড়ালে আহ্বান জানালেন মহাশক্তিকে। এই কবিতা প্রকাশের পরই ইংরেজের পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজি করে কবিকে বাংলাদেশের কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে কলকাতা সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে এল। বিচারে ধূমকেতু র পাতায় ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদের জন্য উস্কানি মূলক লেখার অপরাধে প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ সুইন সাহেবের অভিযোগের ভিত্তিতে নজরুল কে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো। নজরুল তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগের উত্তরে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে উদ্ধত জবানবন্দি দিলেন- সত্য স্বয়ং প্রকাশ পায়। তাকে কোনো রক্ত আঁখি, রাজদণ্ড রোধ করতে পারে না! আমি সেই চিরন্তন স্বয়ং প্রকাশের বীণা। যে বীণায় চির সত্যের বাণী ধ্বনিত হয়েছিল। আমি ভগবানের হাতের বীণা।- এই ঐতিহাসিক জবানবন্দি নজরুল ইসলামের স্বদেশপ্রেমের এক অভিনব দলিল হিসেবে স্বীকৃত।

শুরু হলো কবির বন্দী জীবন। নিষ্ঠুর ইংরেজের কাছে শিল্পী বা শিল্পের কোনো মূল্য ছিল না। সরকার নজরুল কে রাজবন্দির সম্মান টুকুও দেয়নি।একজন অতি সাধারণ বন্দির সমমানের পোষাক, থাকার জায়গা এবং অত্যন্ত নিম্নমানের খাদ্য জুটল কবির কপালে, আর তার সঙ্গে অমানুষিক নির্যাতন। তবুও প্রাণ প্রাচুর্যে অদম্য চিরচঞ্চল কবিকে দমন করা সম্ভব হলো না। নির্দয় ব্রিটিশের এহেন আচরণে ব্যথিত রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য টি নজরুল ইসলামের নামে উৎসর্গ করে অনুজ কবিকে একটি পত্র লেখেন। ইংরেজ জেলারের নজর এড়িয়ে সেই চিঠি নজরুলকে পৌঁছে দিলেন কবিবন্ধু পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়। অগ্রজ কবির আশীর্বাদ লাভ করে কারাবন্দি অনুজ কবির উৎসাহ উদ্দীপনা দ্বিগুন বেড়ে গেল। নজরুলের সাহচর্যে অন্যান্য বন্দিরা ও প্রাণ ফিরে পেলেন। এদিকে আলিপুর জেলের সমস্ত বন্দিরা নজরুলের গানে কবিতায় মাতোয়ারা হয়ে স্বদেশমন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে এই আশঙ্কায় চার মাস পরই ১৫ই এপ্রিল হঠাৎ করে কবিকে আলিপুর থেকে হুগলি জেলে স্থানন্তরিত করা হলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু করা গেল না। এমন যার মনন, চেতন, যার কলমের এত স্পর্ধা তাকে স্তব্ধ করা বর্বর ইংরেজের কর্ম নয়। বরং জেল পরিবর্তন করায় আলিপুর থেকে হুগলির ঘরে ঘরে নজরুল বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে পড়লো! আলিপুর জেলে বসে লেখা গান কবিতার ভাণ্ডার কবি হুগলির কয়েদি দের কাছে উজাড় করে দিলেন। দে গরুর গা ধুইয়ে বলে হায়দারি হাঁক দিলেন সেখানকার বন্দি বন্ধুদের। হুগলির জেল সুপার ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপ মিঃ সামচিন। তার বাজখাই কর্কশ গলার জন্য নজরুল তার নাম দিলেন হার্সটোন সাহেব। এই সুপার কে উদ্দেশ্য করে সুইপার বন্দনা নাম দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্যারোডি করে লিখলেন- তোমারি জেলে /পালিছো ঠেলে/ তুমি ধন্য ধন্য হে- বলা বাহুল্য এই গানের ব্যঙ্গ বিদ্রূপ শ্লেষ সুপার কে খেপিয়ে তুললেও ব্যঙ্গ কোনো আইনি আওতায় পরে না তাই সুপার কিছু করতে পারলেন না! হুগলি জেলে বসেই তিনি লিখলেন কারার ওই লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল কর্ রে লোপাট/ রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণবেদী! ইংরেজ অফিসাররা বন্দি পরিদর্শনে এলেই কয়েদিরা সমবেত সোচ্চার কন্ঠে এই গান গাইতে থাকে। ক্রমশঃ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে শুরু হলো কবির উপর অকথ্য অত্যাচার। একটি ছয় ফুট/চার ফুট আলো বাতাস হীন ঘুপচি ঘরে কবিকে আটক করে রাখা হলো। কিন্তু তার গান থামানো গেল না। তিনি হাতকড়া লাগানো অবস্থাতেই গেয়ে উঠতেন- শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল পরা ছল/ শিকল পরেই শিকল তোদের করবো রে বিকল। গান কবিতা দিয়ে যে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল অচিরেই তা প্রত্যক্ষ প্রতিবাদে পরিণত হয়।

জেলে ভারতীয় কয়েদিদের সরকার-সেলাম নামে এক নিষ্ঠুর অপমানকর নিয়ম চালু হয় এর দ্বারা সুপার জেলে প্রবেশ করা মাত্র সরকার সেলামের হুকুম হাঁকানো হতো, অমনি নজরুলের নেতৃত্বে কয়েদিরা পা সামনে ছুঁড়ে লাথি মারার ভঙ্গি করে ব্রীটিশি সাম্রাজ্যবাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করলেই শুরু হতো পুলিশ- কয়েদি হাতাহাতি। এই ভাবে ইংরেজের অত্যাচার চরমে উঠলে কবি তাঁর সহযোদ্ধা দের নিয়ে শুরু করলেন অনশন। একে জেলের নিপীড়ন তার উপর অনশনে কবির প্রাণহানির আশঙ্কায় উৎকন্ঠিত কবি বন্ধুরা এবং নজরুল যাঁকে মা বলতেন সেই বিরজা সুন্দরী দেবী কবি কে অনশন তুলতে অনুরোধ করেন। বিশ্বকবি আকুল হয়ে নজরুলকে একটি তার বার্তায় লেখেন- অনশন প্রত্যাহার করো আমাদের সাহিত্য তোমাকে দাবি করে- Give up Hunger strike. Our Litareture claims You.- কিন্তু সেই টেলিগ্রাফ নজরুলের হাতে এসে পৌঁছায় না! অবশেষে সরকারের দমন নীতি লঘু করার প্রতিশ্রুতি, কবিগুরুর এবং নজরুল সতীর্থ দের অনুরোধে কবি বিরজাদেবীর হাতে ফলের রস খেয়ে অনশন ভঙ্গ করেন। এবার কবি কে চালান দেওয়া হলো বহরমপুর জেলে। এখানে তাকে বিশেষ কয়েদির সম্মান দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও তা দেওয়া হয় না। তবে এই জেলের সুপার বসন্ত ভৌমিক একজন বাঙালি এবং নজরুলের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি জেলে কবিকে একটি হারমোনিয়ামের ব্যবস্থা করে দিলে কবি তাঁর সহ কয়েদি দের নিয়ে মেতে উঠলেন গানে। বহরমপুর জেলে কবির সঙ্গে ছিলেন পূর্ণ দাস, বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়, নরেন্দ্র নারায়ন চক্রবর্তী প্রমুখ স্বাধীনতা সংগ্রামী। বহরমপুর থেকেই নজরুলের কারাদণ্ডের একবছর মেয়াদ সম্পূর্ণ হয়ে কারা মুক্তি হয়! জেল থেকে বেরিয়েই কবি ঝাঁপিয়ে পড়লেন সক্রিয় স্বাধীনতা আন্দোলনে। নজরুলের কবি খ্যাতি তখন তুঙ্গে। বাংলা মায়ের দামাল ছেলে নজরুল তখন তরুন দলের প্রাণ পুরুষ। সেই সময়ে সারা দেশের মানুষের কাছে নব বিপ্লবী আদর্শের নাম- কাজি নজরুল ইসলাম!

এমন চিরবিপ্লবী বিদ্রোহী কবি কলমেই শোভা পায়- আমি বেদুঈন আমি চেঙ্গিস/ আমি আপনারে ছাড়া করিনে কাহারে কুর্নিশ। এই নজরুল কন্ঠে মুখরিত হয়ে ওঠে- আমি বিদ্রোহী রণক্লান্ত/ আমি সেইদিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না! . আমি চির বিদ্রোহী বীর;/ আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা/ চির উন্নত শির!!


লেখক: মল্লিকা গাঙ্গুলী, নজরুল গবেষক ও শিক্ষাবিদ


আরও খবর

শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এখনও অপরিহার্য

বৃহস্পতিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২২




আজ ঈদ

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭৩৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

রোজা শেষে আবারও এলো ঈদ। খুশির বার্তা নিয়ে ঈদের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। বাংলাদেশের আকাশে মঙ্গলবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় এবার ৩০ রোজা পূর্ণ হলো। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ উৎসবের আমেজে মেতে উঠবেনে দেশবাসী।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম উম্মাহর প্রতি নিয়ামত হিসেবে ঈদ দান করেছেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন মদিনাবাসীদের দুটো দিবস ছিল যে দিবসে তারা খেলাধুলা করতো। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এ দুদিনের কী তাৎপর্য আছে? মদিনাবাসী উত্তর দিলেন, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (সুনানে আবু দাউদ: ১১৩৪)

ঈদের দিনের শুরু হয় ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে।ঈদের দিন সকালে পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বিশেষ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত তাকবিরসহ জামাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা এবং তারপর ঈদের খুতবা দেওয়া ও শ্রবণ করা। ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে আদায় করা উত্তম। 

ঈদুল ফিতরের দিন দেশের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। আবহাওয়া খারাপ হলে জাতীয় ঈদগাহে সম্ভব না হলে বায়তুল মোকাররমে জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।

এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতরে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়।  তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।  চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন  সর্বসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আর নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষে সরকারি কর্মচারীদের ছুটি শুরু হয়েছে ১০ এপ্রিল। অফিস খুলবে ১৫ এপ্রিল। তবে অনেকেই ৮ ও ৯ এপ্রিল দুদিনের ছুটি নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন টানা ১০ দিন। লম্বা ছুটির কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হয়েছে কম। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সময় নিয়ে নিজের শেকড়ে ফিরতে পেরেছেন।

কর্মব্যস্ত এই নগরীর সবাই যখন ঈদ উদযাপনে ঢাকা ছেড়েছেন তখন এই ঢাকা হয়ে উঠেছে এক অন্য শহর। বদলে গেছে রাজধানীর চিত্র, নেই চিরচেনা রূপ। এখন আর ঢাকার সড়কে ঘণ্টা পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় না। মুহূর্তেই চলে যাওয়া যাচ্ছে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

এদিকে দেশের সবার জন্য সুখী, আনন্দময় ও নিরাপদ ঈদুল ফিতরের কামনা করে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একমাস সিয়াম সাধনার পর আবার আমাদের মধ্যে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এসেছে। ঈদ মানে আনন্দ। আসুন আমরা আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি।

রাজনৈতিক নেতাদের অধিকাংশই নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন এবার। কেউ কেউ ঢাকায় ঈদ করবেন, আবার কেউ নামাজ শেষে যাবেন এলাকায়। সব মিলিয়ে  নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন তারা, যোগ দেবেন সামাজিক অনুষ্ঠানেও।


আরও খবর



বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭২৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৭টায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় নামে।

প্রথম জামায়াতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির হিসেবে ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।

জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন। নামাজের সময়ে মুসল্লিদের ঢল নামে। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। নামাজের পর একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।

জাতীয় মসজিদে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ মো. আতাউর রহমান।

তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইমরান বিন নূরউদ্দীন। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. আব্দুল হাদী।

চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. জসিম উদ্দিন।

পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল পৌনে ১১টায়। ইমামতি করবেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।

৫টি জামাতে কোন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।


আরও খবর



জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭২০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত শুরু হয়।

ঈদের প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের লাখো মুসল্লি।

ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সিটি কর্পোরেশন থেকে জানানো হয়, এবার জাতীয় ঈদগাহের ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। ছিল ঈদগাহে নারীদের জন্যও আলাদা নামাজের ব্যবস্থা।

এদিকে জাতীয় ঈদগাহ ছাড়াও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মোট পাঁচটি জামাত আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭, ৮, ৯ ও ১০ ও ১০টা ৪৫ মিনিটে ঈদের জামাত হবে।


আরও খবর