বিশ্বের উন্নত ১০টি দেশ থেকে বর্জ্য আমদানি করছে পাকিস্তান। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সিনেটের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দেশগুলো হচ্ছে ব্রিটেন, আমেরিকা, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, জার্মানি, স্পেন, কানাডা ও ইতালি।
হঠাৎ করে বিস্ফোরণ হওয়া এ খবরে সরগরম পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান তেহ্রিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খান এ কারণেই বলেছেন, ‘আমদানি করা সরকারের পর এখন বন্ধু দেশগুলো থেকে বর্জ্য আমদানি করছে।’ সে হিসাবে দেশটি পরিণত হয়েছে উন্নত দেশগুলোর ময়লার ডাস্টবিনে।
পাকিস্তানে বর্জ্য রপ্তানি করা দেশগুলোর তালিকায় কিছু বন্ধু দেশের নাম দেখে অবাক হয়েছে সিনেটের স্থায়ী কমিটি। দেশগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়-এমন দেশও রয়েছে। এতদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কেন কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। কমিটির একজন সদস্য জিজ্ঞাসা করেন, পাকিস্তান কেন বর্জ্য আমদানির বিষয়ে কোনো আপত্তি জানায়নি।
এ ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটররা বলেছেন, বিষয়টি তারা জানতেন না, পাকিস্তান উন্নত বিশ্বের ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। সিনেটরদের কেউ কেউ জানতে চান, কেন তারা বিদেশ থেকে বর্জ্য আমদানি করছে। কতদিন ধরে এটি চলছে, আর এসব বর্জ্য ধারণ করার ক্ষমতা পাকিস্তানের আছে কিনা। কেউ আবার উলটো প্রশ্ন করেন, পাকিস্তান কেন নিজেদের বর্জ্য বিদেশে রপ্তানি করে না। পাকিস্তানের রাস্তাগুলো বিষাক্ত আবর্জনায় পূর্ণ। ওই বর্জ্যগুলো বিদেশে রপ্তানি না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন সদস্যরা।
পিটিআই-এর সিনেটর ফয়সাল জাভেদ কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমদানি করা বর্জ্য চলবে না।’ তার জবাবে সিনেটর তাজ হায়দার ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘আসুন আমরা বিরোধীদলগুলোকে রপ্তানি করি।’
হঠাৎ করে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে নানা রকম ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যের মধ্যে কমিটি জানতে পেরেছে, আমদানি করা বর্জ্যরে অধিকাংশই ফেলা হচ্ছে সমুদ্রে। বাকি বর্জ্য জড়ো করা হচ্ছে বড় শহরগুলোতে। জনস্বাস্থ্য ও বাস্তুসংস্থানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে বর্জ্য আমদানি করে উপকূলে ফেলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কমিটি। এর আগে ফেডারেল কেবিনেটে জানানো হয়, পাকিস্তান বিশ্বজুড়ে বছরে ৮০ হাজার টন বান্ডিল বর্জ্য আমদানির পাশাপাশি ৩০ মিলিয়ন টন বর্জ্য উৎপাদন করে-যা পরিবেশগত এবং স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি ভূপৃষ্ঠের ও ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করছে।
পিটিআই নেতা ইমরান খান বিষয়টি নিয়ে বর্তমান সরকারে কটাক্ষ করলেও এই প্রক্রিয়া চলমান ছিল তার শাসনামলেও। গত বছর ব্রিটেন একাই পাকিস্তানে ৪০ হাজার টন বর্জ্য ঢেলে দিয়ে গেছে। কারণ সাধারণ ও বিপজ্জনক বর্জ্য আলাদা করার ক্ষমতা নেই ব্রিটেনের। এর পাশাপাশি ইরান থেকে ২৫ হাজার টন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে প্রায় ২০ হাজার টন। পাকিস্তান দেশগুলো থেকে বর্জ্য আমদানি করে যাতে এটি করাচি, লাহোর, শিয়ালকোট, গুজরানওয়ালা এবং খাইবার পাখতুনখাওয়াতে এগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পের মাধ্যমে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্প আমদানি করা বর্জ্য থেকে সোনা, তামা এবং অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতু নিষ্কাশন করে। অন্যদিকে, পাকিস্তান নিজেই বার্ষিক ৩০ মিলিয়ন টন বর্জ্য উৎপাদন করে এবং বার্ষিক ৮০ হাজার টন বর্জ্য সারাবিশ্ব থেকে আমদানি করে। আমদানি করা বর্জ্যরে ৯০ শতাংশ সমুদ্রে ফেলা হয়। বিশ্বব্যাংক বলছে, সিন্ধু থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন মাইক্রোপ্লাস্টিক আরব সাগরে প্রবাহিত হয়।