গত ৩ অক্টোবর প্যারিসের ফ্যাশন সপ্তাহে যোগ দেন কানিয়ে ওয়েস্ট। গায়ে ‘হোয়াইট লাইভস ম্যাটার’ লেখা টি-শার্ট। সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অবশ্য অ্যান্টি-সেমেটিক মন্তব্যের জেরে শিরোনাম হওয়ার অভিজ্ঞতা ওয়েস্টের জন্য নতুন নয়। তবে এবারের পরিস্থিতি বেশ জটিল। ঝাঁকুনি লেগেছে তার ব্যবসার সাম্রাজ্যে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই ফ্যাশন, সংগীত, মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে প্রকাশিত চিত্র সেটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে। এডিডাস, দ্য গ্যাপ, ব্যালেনসিয়াগা, সিএএ ও জেপি মরগান চেজের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবনতি ঘটেছে সম্পর্কে।
সাত বছর একসঙ্গে কাজ করার পর ২৫ অক্টোবর ওয়েস্টের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের ঘোষণা দিল এডিডাস। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে কানিয়ে ওয়েস্ট ও এডিডাসের যৌথ উদ্যোগ এডিডাস-ইজির। কোম্পানিটির দাবি অনুযায়ী ইজির ডিজাইনগুলোর মালিকানা তাদের থাকবে। ওয়েস্টের মালিকানায় থাকবে শুধু ইজি নামের ট্রেডমার্ক। ফলে সম্পর্ক ছেদ ঘটলেও এডিডাস তাদের মতো করে পুরনো ডিজাইনের স্নিকার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারবে। ওয়েস্ট নিজেও ইজি নাম নিয়ে একই ডিজাইন কিংবা ভিন্ন ডিজাইনের পণ্য বাজারে আনতে পারবে। যদিও সৃজনশীলতার স্বাধীনতাকে কারণ দেখিয়ে ওয়েস্ট এডিডাসের সঙ্গে চুক্তির সমাপ্তি টানতে চাচ্ছিলেন। তবে এবারের বিষয়টি জটিল।
তারকাদের সঙ্গে কোনো কোম্পানির চুক্তিতে কিছু শর্ত থাকে। অবশ্যই চুক্তিবদ্ধ তারকাকে নৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে হবে। অপরাধ কিংবা অন্য কোনো কারণে তারকার খ্যাতি নেমে গেলে সম্পর্ক ছেদ করা যৌক্তিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ওয়েস্টের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও মন্তব্যের জেরে এডিডাস তাই আর এগিয়ে নিতে চায় না সম্পর্ক। যদিও ইজি ও এডিডাসের সম্পর্ক লাভজনক ছিল। ওয়েস্টের পণ্য বছরে ২০০ কোটি ডলার পর্যন্ত বিক্রি করেছে এডিডাস। কিন্তু বর্তমানে বেশ বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে সে সাম্রাজ্যে। ওয়েস্টের আয় ২০০ কোটি ডলার থেকে একদিনেই ৪০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। এদিকে ১৫ ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হয়ে যাবে আরেক প্রতিষ্ঠান ‘দ্য গ্যাপ’-এর সঙ্গে চুক্তি। টানাপড়েনে রয়েছে বাকি কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক। কিছু ব্র্যান্ড ও কোম্পানি ওয়েস্টের সঙ্গে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। টিজে ম্যাক্স, রিয়ালরিয়াল, স্কিচার্স, পেলোটন, ফুট লকার ও ক্রিস্টি তাদের মধ্যে অন্যতম। পেলোটন তাদের প্লাটফর্মে কানিয়ের গান আর প্রচার করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থগিত রেখেছে সব সম্পর্ক।
ফুট লকারের পদক্ষেপ আরো গুরুতর। তারা ইজির কোনো পণ্যই নিজেদের শোরুমে রাখতে নারাজ। এদিকে বটম ব্যাংক স্নিকার হাউজ বন্ধ রেখেছে ইজির সব পণ্য। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইজির পণ্য বিক্রিতে তাদের অতীত রেকর্ড ভালো। এডিডাস স্নিকারের তালিকায় ইজি সবচেয়ে জনপ্রিয়। ফলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া খুব কঠিন। তাদের ব্যবসার প্রায় ৩০ শতাংশ ছিল ইজির। তার পরও তারা নতুনভাবে হাঁটতে চাচ্ছে এ পথে। সব মিলিয়ে ওয়েস্টের জন্য এবারের ধাক্কা বেশ বড়সড়ই মানতে হবে। ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য হলেও তাকে খ্যাতি পুনরুদ্ধার করতে হবে। সেজন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আগে।