গাজীপুর মহানগরীর
মাজুখান এলাকার শিশু সিহাব হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন
(পিবিআই)। এ ছাড়া এ হত্যা মামলার আসামি নাসির মিয়াকে (২৮) গত ১৬ জানুয়ারি মাজুখান থেকে
গ্রেপ্তার করেছে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে
তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
নাসিরের বাড়ি
নোয়াখালির কবিরহাট থানার সোনাপুর জমিদারহাট গ্রামে। তিনি গাজীপুর মহানগরের মাজুখান
বাগের টেকের সাইদের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
নিহত শিশু শিহাব
মাজুখান এলাকার জুয়েলের ছেলে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ
হয় সে। পরদিন সকালে হাজী ছালাম মুন্সির বাড়ী সংলগ্ন এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায়
শিহাবের দাদি বাদী হয়ে পুবাইল থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার পর পুবাইল
থানা-পুলিশ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ব্যর্থ হলে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে এর দায়িত্ব
পায় গাজীপুর পিবিআই। ঘটনার প্রায় চার মাসের মধ্যেই হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করেছে পিবিআই।
পিবিআই জানায়,
মাজুখান উত্তরপাড়ায় ফারুকের মুরগীর দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন নাসির। বেশির
ভাগ সময় মালিক দোকানে থাকতেন না। তখন নাসির নিজেই মুরগি ও ফিড বেচাকেনা করতেন। পাশের
গলির জুয়েলের ছেলে সিহাব মাঝে মধ্যে তার দোকানে আসত।
ফিড খেয়ে ফেলার
সময় মুরগি তাড়ানোর জন্য দোকানদার খেলনা পিস্তল ব্যবহার করতেন। খেলনা পিস্তলের ছোড়া
গুলি সিহাব কুড়িয়ে আনত। নাসির মাঝে-মধ্যে সিহাবকে চিপস্ কিনে দিতেন। ভুক্তভোগী সিহাব
নাসিরকে ‘মুরগি চাচ্চু’ বলে ডাকত। এভাবে সিহাবের সঙ্গে নাসিরের
সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গত ২৫ নভেম্বর
নাসির তার ভাড়া বাসায় নিজ কক্ষে ল্যাপটপে পর্ণ দেখছিলেন। দুপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির
সময় সিহাব নাসিরের রুমে যায়। তখন নাসির সিহাবকে বলাৎকার করতে চাইলে সে চিৎকার দেয়।
নাসির মুখ চেপে
ধরলে সিহাবের দেহ নিথর হয়ে যায়। সিহাবের মরদেহ খাটের নিচে রেখে দরজা লাগিয়ে নাসির বাইরে
চলে যান। পরে ভোর রাতে সিহাবের মরদেহ সালাম মুন্সীর বাড়ির পাশে ফেলে রাখেন নাসির। ঘটনার
তিন দিন পরে নাসির এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যান। দুই দিন পরে চিটাগাং থেকে ফিরে আসেন
তিনি। এর এক সপ্তাহ পর নাসির তাবলিগ জামাতের ৪০ দিনের চিল্লায় চলে যান।
এ বিষয়ে পিবিআই,
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ঘটনায় জড়িত একমাত্র আসামি নাসির
বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন। ল্যাপটপে নীল ছবি দেখে উত্তেজিত হয়ে শিশু সিহাবকে বলৎকারের
চেষ্টাকালে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করেন।
বৃহস্পতিবার আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে
জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।