সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে। প্রায় ১১ মাসের যুদ্ধে প্রায় পাঁচ মাস পর সম্প্রতি নতুন শহর দখল করেছে তারা। পুরোমাত্রায় যুদ্ধ চলছে দনবাসের দোনেৎস্কে। এ প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনকে ব্যাপক আকারে অস্ত্র দেওয়া নিয়ে চলছে ব্যাপক উত্তেজনা। জার্মানির রামস্টাইনে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটিতে শুরু হয়েছে বিশেষ বৈঠক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকটিতে ন্যাটোর ৩০ দেশসহ প্রায় ৫০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা অংশ নিয়েছেন।
ইউক্রেনের জন্য অস্ত্রের নতুন প্যাকেজ কী হতে পারে, বিশেষত ট্যাঙ্ক থাকবে কি না, তাই রামস্টাইন বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়। এদিক গতকাল ক্রেমলিন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধের ক্ষেত্রে পশ্চিমা ট্যাংক কোনো পার্থক্য গড়তে পারবে না। বরং এসব অস্ত্র দিলে তা ইউক্রেনের জন্যই সমস্যা হয়ে দাড়াবে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের আরও বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন জিততে পারে এমন বিষয়টি পশ্চিমাদের ‘নাটকীয় বিভ্রম’।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিষেধাজ্ঞা, গোয়েন্দা তথ্য, কূটনৈতিক সহায়তা ও সহযোগিতার পাশাপাশি ইউক্রেনকে দফায় দফায় অস্ত্রসহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। কিন্তু কিয়েভ মনে করে, তা যথেষ্ট নয়। যুদ্ধে জয়ের জন্য তাদের দরকার ট্যাঙ্কের মতো ভারী অস্ত্র।
রামস্টাইনের বৈঠকের শুরুতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘অস্ত্র পেলে এই যুদ্ধে আমরা নিশ্চিত জিতব। তার জন্য দরকার ট্যাঙ্ক ও অন্য ভারী অস্ত্র। এসব সহায়তা জরুরিভিত্তিতে দরকার। মনে রাখতে হবে, সময় গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। তাই দেরি করা যাবে না। এ যুদ্ধে রাশিয়া পরাজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
রামস্টাইনের বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, রাশিয়া সেনাদের পুনর্বিন্যাস করছে। নতুন সেনা সংগ্রহ করছে। রণক্ষেত্রে নতুন অস্ত্র পাঠাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের গতি কমালে চলবে না। বরং এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে। কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সরাসরি কোনো ট্যাঙ্ক দেওয়ার ঘোষণা দেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের জন্য আরও ২৫০ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ওয়াশিংটন কিয়েভকে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
১১ দেশের নতুন সহায়তা: রামস্টাইন বৈঠকের আগে গত বৃহস্পতিবার এস্তোনিয়ায় বৈঠকে বসেন ন্যাটোভুক্ত ১১টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা। বৈঠকে ইউক্রেনের জন্য নতুন অস্ত্র প্যাকেজ ঘোষণা করে দেশগুলো। তাদের সহায়তা প্যাকেজে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, মেশিগান এবং সামরিক প্রশিক্ষণের ঘোষণা থাকলেও ট্যাঙ্কের কোনো কথা নেই।
ট্যাঙ্ক নিয়ে দোলাচলের নেপথ্যে: যুদ্ধের শুরু থেকেই মিত্রদের থেকে ট্যাঙ্ক চাইছে ইউক্রেন। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রামস্টাইনের বৈঠক থেকে ট্যাংক দেওয়ার সিদ্ধান্তের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ন্যাটো মিত্ররা মোটাদাগে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাবরামস, জার্মানি লিওপার্ড-২ ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে। ন্যাটোর অস্ত্রভাণ্ডারে এখন পর্যন্ত এ দুটিই সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক। ন্যাটোর মিত্ররা জার্মানির অনুমতি ছাড়া লিওপার্ড ইউক্রেন বা অন্য কোনো তৃতীয় দেশে সরবরাহ করতে পারবে না। জার্মানিসহ ইউরোপের কিছু দেশের ধারণা, ইউক্রেনকে লিওপার্ড বা এর মতো শক্তিশালী অস্ত্র দিলে রাশিয়ার সরাসরি প্রতিপক্ষে পরিণত হবে ন্যাটো। তখন আরও ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। মূলত এ ধরনের বিপর্যয় এড়াতেই কিয়েভকে লিওপার্ড ট্যাঙ্কের মতোর ভারী অস্ত্র দিতে গড়িমসি করেছে বার্লিন। তা ছাড়া এ ধরনের অস্ত্র দেওয়ার পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে মস্কো।
রণক্ষেত্রের সর্বশেষ অবস্থা: বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বদিকের দনবাস অঞ্চলের দোনেৎস্ক প্রশাসনিক ইউনিটে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। দোনেৎস্কের বাখমুত শহরের নিকটবর্তী ক্লিশচিভকা নামের একটি নগরী শুক্রবার দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। এখই অঞ্চলে গত সপ্তাহে সোলেদার নামের আরেকটি ছোট কিন্তু খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ শহর দখলে নেয় রাশিয়া। রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধার দল ওয়াগনার গ্রুপ ওই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ৫০ হাজার সেনা যুদ্ধ করেছে বলে শুক্রবার দাবি করেছে যুক্তরাজ্য। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত দখলে নিতে পারলে পুরো দোনেৎস্ক রাশিয়ার করতলে চলে যাবে।