চীনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে উঠছে বলে মনে করছে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান বিকল্প পথে হাঁটছে। নতুন একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, আরো বেশি বিদেশী প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চীন থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এক্ষেত্রে সংস্থাগুলো প্রতিবেশী ভিয়েতনাম ও ভারতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এ তথ্য তুলে ধরছে যে কীভাবে বেইজিংয়ের কঠোর জিরো কভিড নীতি বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় দেশটির সুনাম ক্ষুণ্ন করছে।
ভিয়েতনামের ইউরোপিয়ান চেম্বার অব কমার্স জানিয়েছে, ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) চীনে থাকা ৪১ শতাংশ ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান কিছু কার্যক্রম চীন থেকে ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। এ হার তৃতীয় প্রান্তিকের ১৩ শতাংশ থেকে বেড়েছে।
চেম্বার অব কমার্সের সমীক্ষায় দুই শতাধিক ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল। জরিপে দেখা গেছে, এ সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি থেকে ভিয়েতনামে কোনো কার্যক্রমই সরিয়ে নেয়নি এমন ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের হার ৭৬ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশে নেমে এসেছে।
ভিয়েতনামের ইউরোপিয়ান চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান অ্যালাইন ক্যানি বলেন, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে চীনে ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীরা আরো স্থিতিশীল ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগের শর্ত চেয়েছিল। সরবরাহ ব্যবস্থাকে বৈচিত্র্যময় করার চলমান প্রচেষ্টা এবং একক কোনো দেশের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হওয়ার মতো বিষয়গুলো ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীদের ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারী এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে।
তিনি আরো বলেন, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চীন নিজেকে বিশ্বের উৎপাদন শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সেই জায়গা থেকে বিশ্বের বহু প্রতিষ্ঠান চীনে বিনিয়োগকে আকর্ষণীয় হিসেবে দেখে এসেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। তাছাড়া ইউরোপীয় ব্যবসায়ের বর্তমান প্রবণতায় ভিয়েতনামে চলে যাওয়া তাত্পর্যপূর্ণ। কারণ এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ও নীতির একটি সুস্পষ্ট পরিবর্তন নির্দেশ করে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত পৃথক একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, করোনা মহামারীর পর নতুন বাস্তবতায় চীনে থাকা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের বড় একটি অংশ বিকল্প অনুসন্ধান করছে। জার্মান অনলাইনভিত্তিক কনটেইনার লজিস্টিকস প্লাটফর্ম কনটেইনার এক্সচেঞ্জ ২০টিরও বেশি দেশের ২ হাজার ৬০০ প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ চালিয়েছে। এরমধ্যে ৬৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান চীনের কভিডজনিত বিধিনিষেধের পর ম্যানুফ্যাকচারিং ও উৎপাদনের বিকল্প বিবেচনা করছে। এক্ষেত্রে সংস্থাগুলো ভিয়েতনাম ও ভারতকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দেখছে।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান চীন ছাড়লেও বিশ্বের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে চীনের প্রভাব কমার আশঙ্কা নেই। তবে ম্যানুফ্যাকচারিং ও উৎপাদন খাতের সংস্থাগুলো ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বৈচিত্র্য আনবে এবং দেশে দেশে কার্যক্রম ছড়িয়ে দেবে। প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামালের উৎস দেশ হিসেবেও চীনের বিকল্প খুঁজছে।
কনটেইনার পরিবহন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, চলতি বছরও বৈশ্বিক উৎপাদনে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। তবে আমরা উৎপাদনক্ষমতা ও দক্ষ জনশক্তির জন্য কেবল চীনের ওপর নির্ভরশীল শিল্পগুলো থেকে ধীরে ধীরে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরে যেতে দেখব। ভিয়েতনাম ও ভারত ২০২৩ সালে কার্যকরী কনটেইনার শিপিং হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বৈশ্বিক শিপিং শিল্পের বিদ্যমান বিন্যাস পরিবর্তন হবে বলেও মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইউরোপিয়ান চেম্বার অব কমার্সের সমীক্ষা অনুসারে, জরিপে অংশ নেয়া সামান্য কিংবা মাঝারি আকারে কার্যক্রম স্থানান্তর করা প্রতিষ্ঠানের হার ১৩ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে সরিয়ে নেয়া প্রতিষ্ঠানের হার বেড়েছে ২ শতাংশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে অন্ধকার দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও ইউরোপীয় ব্যবসাগুলোর চীন থেকে ভিয়েতনামে কার্যক্রম স্থানান্তর করার হার বাড়ছে। ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক আস্থা আরো খারাপ হয়েছে। উত্তরদাতাদের একটি অংশ জানিয়েছে, তারা বিশ্বাস করে যে ভিয়েতনামি অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে।