
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর শূন্য কোভিড নীতি থেকে সরে এসেছে চীন। গত বছরের ডিসেম্বরে কোভিড নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে চীনা সীমান্ত। ফলে তিন বছর পর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছে চীনা পর্যটকরা। করোনা মহামারির আগে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণে তারা খরচ করেছিল ২৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড এবং জাপানসহ পর্যটন হটস্পটগুলোতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আসে চীন থেকে। করোনা-পূর্ব সময়ে ২০১৯ সালে থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করেছে ৪ কোটি পর্যটক, যার এক-তৃতীয়াংশই ছিল চীনা। চলতি বছরেও ৫০ লাখ চীনা পর্যটক শ্যামাদেশ ভ্রমণে আসবে বলে আশা করছে থাই সরকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডের সাদা বালুর সৈকতে ফিরতে শুরু করেছে চীনা পর্যটকরা। চীনের কঠোর কোভিড নিষেধাজ্ঞার পর বিদেশ ভ্রমণে যেতে পেরে আনন্দিত চীনারা। থাইল্যান্ডের মানুষের আতিথেয়তা, আমের আঠালো চাল এবং সামুদ্রিক খাবার চীনা পর্যটকদের থাইল্যান্ডে ফিরিয়ে আনছে বলে অভিমত চীনা পর্যটকদের। থাইল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের পর্যটন খাতের চীনা ব্যবসায়ী কিকি হু বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে আমরা তিন বছর চীনের বাইরে যেতে পারিনি। তবে এখন আমরা যেতে পারছি, ছুটিতে থাইল্যান্ডের মতো সুন্দর জায়গায় আসতে পারছি। তাই আমরা খুবই খুশি।’
থাইল্যান্ড, জাপানসহ এশিয়ার দেশগুলোতে চীনা পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি ঘুরতে আসে। তবে চীনের শূন্য কোভিড নীতির ফলে পুরোপুরি বন্ধ ছিল চীনের পর্যটন খাত। গত বছরের ডিসেম্বরে কঠোর শূন্য কোভিড নীতি থেকে সরে আসে চীন। দেশটির চন্দ্র নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুত হতে শুরু করেছে এশিয়ার পর্যটন হটস্পটগুলো। তবে চীনা পর্যটকদের ভ্রমণের তালিকার শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ড।
চীনা পর্যটক ইয়োও চেন বলেন, সমুদ্রসৈকত পরিদর্শনের পাশাপাশি আমি এখানে সামুদ্রিক খাবার খেতে এসেছি। এর আগে যখন এখানে এসেছিলাম তখন আমের স্টিকি চাল খেয়েছিলাম, যা খুবই সুস্বাদু ছিল। চীনে ফিরে আমি এখানকার আমের স্টিকি চালের কথা অনেক ভেবেছি। খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি। থাইল্যান্ডে আবার ঘুরতে এসে বাড়িতে ফেরার মতো অনুভূতি হচ্ছে। থাইল্যান্ডের পর্যটনশিল্প আরও বিকশিত হয়েছে। এখানকার ভিসা পাওয়া এখন খুবই সহজ। এ ছাড়াও থাই জনগণ খুব অতিথিপরায়ণ। এখানে প্রচুর মজাদার ক্রিয়াকলাপ এবং খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।
থাইল্যান্ডের পর্যটন ব্যবসায়ীদের চাপে চীনা পর্যটকদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে থাই সরকার। এর আগে চীনে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চীনা নাগরিকদের থাইল্যান্ডে প্রবেশে কোভিড টিকা গ্রহণের সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করেছিল ব্যাংকক। তবে ব্যবসায়ীদের চাপে তড়িঘড়ি করে সে সিদ্ধান্ত বাতিলে বাধ্য হয় সরকার।
ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রিপ ডটকম গ্রুপের ডেটা অনুসারে, বিধিনিষেধ শিথিলের পর চীন থেকে এশিয়াজুড়ে ভ্রমণের অনুসন্ধান ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান করা হয়েছে থাইল্যান্ড, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ম্যাকাও, সিঙ্গাপুর, হংকং ও তাইওয়ান। চীনা পর্যটকরা বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাওয়ায় আনন্দিত থাইল্যান্ডের পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা। দেশটির রিসোর্ট দ্বীপ ফুকেটের পর্যটকদের স্পিডবোট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টিপ-টপ ডেস্টিনেশনের ব্যবস্থাপক ওরানুচ মংটং বলেন, আমরা আনন্দিত যে চীন অবশেষে তাদের জনগণকে ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে। এ মুহহূর্তে আমরা আগামী মার্চের জন্য কিছু বুকিং পেয়েছি।
এদিকে ডলারের বিপরীতে থাই বাতের বিনিময় হার ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে। দেশটির মূল্যস্ফীতিও ১৪ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ থাইল্যান্ড চলমান বৈশ্বিক সংকট পার করতে এখন পর্যটন খাতের ওপর নির্ভর করছে।