আর্থিক সংকটে
জর্জরিত শ্রীলংকার রাজনৈতিক সংকটও বাড়ছে। আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে ধুঁকতে থাকা দেশটিতে
এবার জরুরি ওষুধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ওষুধের নতুন চালান
না এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে চিকিৎসকরা
জানান, চিকিৎসার অভাবে করোনার চেয়েও অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
দুই সপ্তাহ ধরে
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় বন্ধ রয়েছে। দিনে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ
রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলো। বিদ্যুতের অভাবে অত্যাবশ্যকীয়
চিকিৎসা পরিষেবা থমকে পড়েছে। খাদ্যসামগ্রীর দামও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। এসব কারণেই চিকিৎসকদের
আশঙ্কা-দেশে বহু প্রাণহানি ঘটতে পারে। শ্রীলংকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে
জানানো হয়েছে-অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দরকারি ওষুধ কিছুই আর দেশে
মজুত নেই। অ্যানেস্থেশিয়া ওষুধের সংকট থাকায় খুব প্রয়োজন না হলে অস্ত্রোপচারও করা হচ্ছে
না।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসের উদ্দেশে চিঠি লিখে
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমাদের রীতিমতো বেছে বেছে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে-কে চিকিৎসা পাবেন
আর কে পাবেন না। কয়েক দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান না বাড়ালে করোনা মহামারির
চেয়েও অনেক বেশি মানুষ মারা যাবে। শ্রীলংকা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানায়, দেশের হাসপাতালগুলো
চিকিৎসার জন্য জরুরি বিদেশি ওষুধ ও সরঞ্জাম পাচ্ছে না। ফলে নিয়মিত সার্জারি একেবারে
অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এ অবস্থা আর কিছু দিন চলতে থাকলে, জীবনদায়ী সার্জারিও বন্ধ করে দিতে
হবে।
ব্ল্যাকআউট, খাদ্য,
জ্বালানি এবং ওষুধ সংকটে পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষ কয়েক দিন
ধরে বাধ্য হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমেছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসের পদত্যাগের
দাবিতে কার্যালয় ঢোকার পথ এখন বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে। দুদিন ধরে বিক্ষোভকারীরা
নিজেদের দখলে রেখেছেন। বৃষ্টির মধ্যেও রেইনকোট, ছাতা নিয়ে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়েছেন।
অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোতায়েন রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা সদস্য।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা
লাভের পর শ্রীলংকা প্রথম এতটা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে দেশটির
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৭০ শতাংশ কমেছে। এর ফলে মুদ্রার মূল্যমান কমাতে এবং বৈশ্বিক
ঋণদাতাদের কাছে সহযোগিতা চাইতে কলম্বো বাধ্য হয়েছে। জরুরি খাদ্য ও জ্বালানি আমদানিতেও
তারা হিমশিম খাচ্ছে। রান্নার জ্বালানি গ্যাসের দাম এক হাজার ১৫০ রুপি থেকে বেড়ে চার
হাজার ছাড়িয়েছে। শিশুখাদ্য গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।