প্রায় সব ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা বন্ধ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চিকিৎসক ও নার্স সংকট না থাকলেও টেকনোলজিস্টদের অভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ এক্স-রে, আল্টাসনোগ্রামসহ সব ধরনের প্যাথলজি পরীক্ষা। ফলে সরকারি এ হাসপাতালে পরীক্ষা করতে না পেরে বাইরে থেকে দুই-তিন গুণ বেশি টাকা দিয়ে পরীক্ষা করছেন রোগীরা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নত চিকিৎসার মূল্যবান যন্ত্রপাতি কেনা হলেও টেকনোলজিস্টদের অভাবে অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার মালামাল। সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। একজন সার্জন দিয়ে দন্ত বিভাগ কিছুদিন চালু থাকলেও এখন সেটিও বন্ধ। এ অবস্থায় তিস্তা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের দরিদ্রপীড়িত এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ধুঁকে ধুঁকে চলছে চিকিৎসাসেবা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যার এই হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় নতুন ভবনসহ অবকাঠামো। এজন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ বেশ কিছু মূল্যবান যন্ত্রপাতিও। ২০১৬ সালে একটি অত্যাধুনিক মানের এক্স-রে মেশিন সরবরাহ করা হলেও আজ পর্যন্ত তা চালু করা সম্ভব হয়নি। একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফার) না থাকায় পড়ে আছে যন্ত্রটি। মেশিন ও টেকনোলজিস্ট না থাকায় হয় না আল্টাসনোগ্রাম পরীক্ষাও।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে প্যাথলজি বিভাগ। চার মাস আগে একজন টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) যোগদান করলেও প্রয়োজনীয় রি-এজেন্ট না থাকায় শুরু করা হয়নি পরীক্ষা। দিনের পর দিন বন্ধ থাকায় নষ্টের পথে ল্যাবের অধিকাংশ সরঞ্জাম। সহকারী ছাড়াই একজন সার্জন দিয়ে দন্ত বিভাগ চালু থাকলেও দুই মাস আগে চিকিৎসক বদলি হওয়ায় এখন সেটিও পুরোপুরি বন্ধ। হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ জন এবং জরুরি বিভাগে গড়ে ৩০-৪০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়া গড়ে প্রতিদিন ১৫ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই গ্রামের আঞ্জুয়ারা বেগম জানান, হাসপাতালে তার স্বামী ভর্তি আছেন। হাসপাতালের বাইরে থেকে এক্স-রে ও আল্টাসনোগ্রাম করতে গিয়ে তাকে ১২০০ টাকা গুনতে হয়েছে। শহীদবাগ ইউনিয়নের বুদ্ধিরবাজার গ্রামের হাসিনা বেগম জানান, স্বামী মনোয়ার হোসেন পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসক তিনটি পরীক্ষার কথা বলেছেন। এরমধ্যে কেবল বাইরে থেকে আল্টাসনোগ্রাম করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৬০০ টাকা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মীর হোসেন বলেন, হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা আগের তুলনায় এখন বেশ উন্নত। চিকিৎসক ও নার্স সংকট না থাকলেও টেকনোলজিস্টদের সংকট রয়েছে। এক্স-রে মেশিন থাকলেও টেকনোলজিস্ট ডেপুটিটেশনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকায় তা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকবার এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এছাড়া প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য একজন টেকনোলজিস্ট চারমাস আগে যোগদান করেছেন। আশা করছি আগামী একমাসের মধ্যে প্যাথলজির কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে। দন্ত বিভাগ গত দুই মাস ধরে বন্ধ আছে। এখানে দন্ত সার্জন ও তার সহকারী কেউই নেই। হাসপাতালে গাইনি ও সার্জারি কনসালটেন্ট আছেন। প্রসূতিদের সিজারসহ পুরুষদের হাইড্রোসিল ও বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।