দেশীয় উৎপাদন ও সেবা খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরে আগের চেয়ে ভালো মুনাফা করছে। এমন ১৮৯ কোম্পানির গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে সাকল্যে নিট মুনাফায় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের হিসাবে মুনাফা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৩৪৯টি। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদন ও সেবা খাতের (আর্থিক খাত বাদে) মোট কোম্পানি ২২৭টি। বৃহস্পতিবার (৫ মে) পর্যন্ত ১৮৯টি কোম্পানি গত মার্চ প্রান্তিক শেষে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তার ভিত্তিতেই এ হিসাব করা হয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও ৩৮টি কোম্পানি এখনও আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা ১৮৯ কোম্পানির মধ্যে ৯ মাসের হিসাবে (জুলাই-মার্চ) ১৫০টি মুনাফায় আছে। এদের নিট মুনাফা ১০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা, যা আগের হিসাব বছরের তুলনায় ২০ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। তবে সর্বশেষ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নিট মুনাফা বেশি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩৯টি লোকসানে আছে। ৯ মাসে তাদের মোট লোকসানের পরিমাণ ৩২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বশেষ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে লোকসান ছিল ১১২ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ৯ মাসের মধ্যে প্রথম ৬ মাসের মুনাফার প্রবৃদ্ধি বেশি হওয়ার কারণ হলো আগের একই সময়ে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বেশিরভাগ কোম্পানির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। ফলে চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৬ মাসে যত প্রবৃদ্ধি হয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তত হয়নি।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ৯ মাসের হিসাবে যেসব কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, সেগুলোর বেশ কিছু দুর্বল মৌল ভিত্তির কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। যেমন তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ইনফরমেশন সার্ভিসেসের ইপিএস হয়েছে ৪৩ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরের তুলনায় ১৪ গুণের বেশি। গত হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ১৩ পয়সা। এভাবে বস্ত্র খাতের মোজাফফর হোসেইন স্পিনিং মিলসের ১২ পয়সা থেকে ১ টাকা ৭২ পয়সা হয়েছে। এ তালিকায় আছে- বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, সোনালী পেপার, পেপার প্রসেসিং, দেশ গার্মেন্টস, তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, দেশবন্ধু পলিমার, গোল্ডেন সন, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস ইত্যাদি। এসব কোম্পানির ইপিএস ২ থেকে ৯ গুণ হয়েছে।
স্বাভাবিক ব্যবসায় ফেরার কারণে আরও অনেক কোম্পানির নিট মুনাফা ও ইপিএসে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেমন- প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বিবিএসের ইপিএস ১০ পয়সা থেকে ১৪ গুণ বেড়ে ১ টাকা ৪২ পয়সা হয়েছে। আবার পর্যটন ও ভ্রমণ খাতের কোম্পানি ইউনিক হোটেল আগের বছর যেখানে শেয়ারপ্রতি ২৬ পয়সা লোকসান করেছিল, চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ টাকা ৬ পয়সা হারে মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে।
এদিকে মুনাফায় আছে, কিন্তু আগের হিসাব বছরের তুলনায় কমে যাওয়ার শীর্ষে আছে আর্গন ডেনিমস। আগের হিসাব বছরের ৯ মাসে যেখানে এর ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩ পয়সা। চলতি হিসাব বছরের একই সময়ে যা ৪ পয়সায় নেমেছে। সরকারি মালিকানাধীন ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসও একই অবস্থায়। কোম্পানিটির ইপিএস ৩১ টাকা ৮১ পয়সা থেকে কমে ২ টাকা ৮১ পয়সায় নেমেছে। ইপিএস কমার তালিকায় আরও আছে সিমেন্ট খাতের প্রিমিয়ার ও ক্রাউন সিমেন্ট, প্রকৌশল খাতের বিডি থাই, কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ, ডমিনেজ স্টিল, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল মিলস, মীর আকতার লিমিটেড ইত্যাদি। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ল্যুবরেফ, এমএল ডাইং, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, এস কে ট্রিমস, সামিট পাওয়ার এবং নাভানা সিএনজি রিফুয়েলিং কোম্পানির ইপিএসও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।