মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের পানে চেয়ে থাকাইতো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক চিত্র। চোখের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাবনিয়ে একে অপরকে সাবধান করতেন প্রায় সকলেই। আর এখন যতক্ষণ একটা মানুষ জেগে থাকে,তার প্রায় সবটুকু সময়ই চোখ থাকে কোনো না কোনো ‘ডিভাইস’য়ের পর্দায়। গেইম খেলা, ভিডিও দেখা, অফিসের কাজ, অনলাইনমিটিং, আত্নীয়দের সঙ্গে আলাপ সবই এখন মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে হয়। সব মিলিয়ে চোখেরওপর দিয়ে প্রতিদিন যাচ্ছে উপর্যুপরি ধকল। আবার সেগুলো বাদ দিলে সময় কাটানোই যেন মুশকিল। এমন পরিস্থিতিতে চোখের ওপর কীভাবে চাপকমানো যায়, তার একটু যত্ন নেওয়া যায়?
বিরতি জরুরি:একটানা লম্বা সময় বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকালে চোখের ওপর চাপ পড়ে এবং তা শুকিয়েযায়। তাই প্রতি বিশ মিনিট পর ২০ ফিট দূরে কোনো কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকারঅভ্যাস করতে হবে। এই নিয়মটি ২০-২০-২০ নামেও পরিচিত। এতে চোখ বিশ্রাম পাবে, ধকল কমবে।
পলক ফেলা: বৈদ্যুতিকপর্দার দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের পলক ফেলার মাত্রা কমে যায়। আর একারণেই মূলত চোখ শুষ্কহয়ে যায়। পলক ফেলার মাধ্যমে চোখ আর্দ্রতা পায়, শুষ্কতা ও জ্বালাপোড়া কমে। তাই পলক ফেলারপরিমাণ বাড়ান নিজ চেষ্টায়।
ফন্ট বাড়ানো:মোবাইল বা কম্পিউটারে কোনো কিছু পড়ার সময় সেগুলোর ‘ফন্ট’ বাড়িয়ে লেখা বড় করে নিতে হবে।এতে ডিভাইসটি চোখের কাছে আনতে হবে না কিংবা ভালোভাবে দেখার জন্য চোখ কুঁচকে তাকাতেহবে না। এতে চোখের ওপর ধকল যেমন কমবে তেমনি ডিভাইস থেকে দূরে থাকার কারণে ক্ষতির মাত্রাওকমবে।
চোখে সহায়ক পর্দা: বৈদ্যুতিক পর্দার ‘ব্রাইটনেস’, ‘রেজোল্যুশন’, ‘কনট্রাস্ট’ এগুলোর মাত্রাপরিবর্তন করে তা চোখের জন্য সহায়ক করতে জানতে হবে। কড়া রোদে বৈদ্যুতিক পর্দা ব্যবহারথেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন একবার হলেও ডিভাইসের স্ক্রিন পরিষ্কার করতেহবে, যাতে দেখা সহজ হয়।
ডিভাইস পরীক্ষা: মনিটরের ‘সেটিংস’ পরিবর্তন করে কীভাবে উজ্জ্বলতা কমানো যায় সেদিকে মনযোগদিতে হবে। মনিটরের উচ্চতা হওয়া উচিত চোখের সমান্তরালে। এতেও চোখের ওপর চাপ কমে।
পর্দা থেকে দূরত্ব রাখা: মোবাইল ব্যবহারের সময় তা চোখের খুব কাছে থাকে। এতে চোখের যেমনক্ষতি হয় বেশি তেমনি মোবাইলের দিকে ঝুঁকে থাকার কারণে ঘাড়েও ব্যথা হয়। তাই দূর থেকেমোবাইলের পর্দা দেখার অভ্যাস করতে হবে। ঘাড় বাঁকা না করে মোবাইল চোখের সমান্তরালে তুলেধরার অভ্যাস করতে হবে। আর মোবাইলের ‘ব্রাইটনেস’ যেন চোখের জন্য সহনীয় হয় সেদিকেও খেয়ালরাখতে হবে।
প্রতিফলন কমানো: মনিটর জানালা থেকে দূরে থাকা উচিত। জানালার দিকে মুখোমুখি বসে কম্পিউটার চালানোথেকেও বিরত থাকতে হবে। চোখে সমস্যা থাকুক আর না থাকুক ‘অ্যান্টি-রিফ্লেকশন’ কিংবা‘ব্লু কোটিং’ দেওয়া চশমা ব্যবহার করতে হবে কম্পিউটার চালানোর সময়। সকল ‘এলইডি ডিভাইস’থেকে চোখের জন্য ক্ষতিকর নীল আলো নিঃসরিত হয় যার সংস্পর্শে আসার মাত্রা অতিরিক্ত হলেবড় ক্ষতি হতে পারে।
চোখের জন্য উপকারী খাবার: ‘ডিজিটাল আই স্ট্রেইন’ কমানো জন্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধখাবার থাকতে হবে খাদ্যাভ্যাসে। রাতে সময় মতো ঘুমাতে হবে এবং আট ঘণ্টা নির্ভেজাল ঘুমনিশ্চিত করতে হবে। পত্রল শাকসবজি, গাজর, পেঁপে, খেজুর ইত্যাদি ভিটামিন এ’র উৎকৃষ্টউৎস যা চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
চোখের আর্দ্রতা: ‘ওমেগা থ্রি অয়েল’ চোখ পিচ্ছিল রাখে, আর্দ্রতা যোগায়। ‘ফ্লাক্সসিড অয়েল’,‘স্যামন’ ও ‘সার্ডিনস’ মাছ ওমেগা থ্রি অয়েল’য়ের আদর্শ উৎস। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী‘সাপ্লিমেন্ট’ও গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন চোখে ব্যবহার্য ‘লুব্রিকেটিংড্রপ’, বিশেষ করে যারা ‘কন্ট্যাক্ট লেন্স’ ব্যবহার করেন। তবে এখানেও চিকিৎসকের পরামর্শনেওয়া আবশ্যক।