পরিত্যক্ত সরকারি স্থাপনাকে বাসযোগ্য স্থাপনায় রূপান্তর করায় স্বস্তি ফিরবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সঙ্কট। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে পরিত্যক্ত বাড়িকে বাসযোগ্য করার কাজ শুরু গর্ণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ অধিদপ্তর। এছাড়া দেশজুড়ে পরিত্যক্ত বাড়ি সরকারের কাজের ব্যবহার উপযোগী করছে এই অধিদপ্তর।
চট্টগ্রামে বহুতল ভবন নির্মাণকাজের গুণগতমান নিশ্চিত করছে। প্রকল্প প্রণয়ন থেকে শুরু করে তা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতারও অবসান ঘটেছে। প্রকল্পের কাজের গতি ফেরাতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তবে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ডেভেলপারদের সঙ্গে গণপূর্তের মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে গণপূর্ত কাজের গুণগত মান বজায় রেখে মানুষের আবাসন সংকট ভবন নির্মাণ করছে। সেখানে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ভবন নির্মাণ করছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর বহুতল ভবন নির্মাণে জমির সঠিক ব্যবহার করছে।
সরকারের অ্যালোকেশন অব রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক ও আবাসিক অবকাঠামোসমূহ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত।
চট্টগ্রাম শহরের পরিত্যক্ত জায়গায় ১৫টিসহ মোট ৫১টি বাড়িতে আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রকল্পে এরই মধ্যে ৯টি বাড়ির কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাকি ৬টি বাড়ির কাজ বিভিন্ন জটিলতার জন্য কাজ শুরু করা যায়নি।
চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ, নাসিরাবাদ ও খুলশি এলাকায় এ বাড়িগুলো নির্মিত হবে। গণপূর্ত বিভাগের এ বাড়িগুলোতে ১৫০০ বর্গফুটের ৪১৪ ফ্যাট, ১২৫০ বর্গফুটের ১৬২টি ফ্ল্যাট এবং ৬৪টি ডরমেটরি নির্মিত হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয় গত ২৫ এপ্রিল ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ১ম দফায় জুন ২০২৩ এবং ২য় দফায় ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ৪৭৬ কোটি ৬০ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা।
গর্ণপূত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মইনুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এসব ভবনে ভূ-গর্ভস্থ জলাধার পানি সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, সুয়ারেজ টিট্রমেন্ট প্ল্যান্ট, লিফট সাবস্টেশন ও জেনেটারের ব্যবস্থা থাকছে।
১৫ বাড়ির মধ্যে ৯টি বাড়ির কাজ চলমান রয়েছে। পরিত্যক্ত বাড়ি নং-১৫ পাঁচলাইশ এলাকার ১৩ তলা ভবনের প্রতি ফ্লোরে থাকছে ১৫ শতাংশ বর্গফুটের ৪টি ফ্ল্যাট, নিচ তলায় পার্কিংসহ ৪৮টি ফ্ল্যাট। এ ভবনের কাজ এখন সমাপ্তির পথে। খুব শীঘ্রই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তরে বুঝিয়ে দিবে। পাঁচলাইশ থানা এলাকায় পরিত্যক্ত ভবন নং-৮৪ এর শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং হস্তান্তরিতও হয়েছে । পরিত্যক্ত বাড়ি নং-১২৭ ১০ তলা এ ভবনে ৬৪টি ডরমিটরী করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে থাকছে ২৫০ বর্গফুট। আশা করা যায় এ মাসেই এ ভবন স্থানান্তরিত করা হবে। পরিত্যক্ত বাড়ি নং ৩৮ কাতালগঞ্জ ১৭ তলা ও ১টি বেজমেন্টের প্রতিটি ফ্লোরে ১২ শত ৫০ বর্গফুটের ৪টি ফ্ল্যাট ও নিচতলা ও বেজমেন্ট পার্কিসহ থাকবে ৬৪ টি ফ্ল্যাট। এ ভবনের কাজ এরই মধ্যে ৯০ ভাগের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। পরিত্যক্ত বাড়ি নং-১৫ পাঁচলাইশ এলাকার এ ভবনটি ১২ তলা ভবন হবে । এ ভবনে ৪৪টি ফ্ল্যাট তৈরি হবে। এ ভবনের কাজও সমাপ্তির পথে। পরিত্যক্ত বাড়ি নং-১১৫ পাঁচলাইশ এলাকার ১২ তলা ভবনে ৪৪টি ফ্ল্যাট। নির্মিত হবে । এ ভবনের কাজ শেষ করতে ২০২৩ পর্যন্ত সময় লাগবে। পরিত্যক্ত ভবন নং- ১১৪ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ১১ তলা এ ভবনে থাকছে ৪০টি ফ্লাট। আগামী সেপ্টেম্বর মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। পরিত্যক্ত বাড়ি নং-৫২ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ১২ তলা ভবনে প্রতিটি ফ্লোরে ১২ শত ৫০ বর্গফুটের ৪টি ফ্ল্যাট ও পাকিং সহ ৪৪টি ফ্ল্যাট নির্মিত হচ্ছে। আশা করা যায় আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৩ সম্পন্ন হবে ।
পরিত্যক্ত ভবন নং-৬৬ পাঁচলাইশ এলাকায় ১২ তলা ভবনে থাকছে ৪৪টি ফ্ল্যাট, পরিত্যক্ত ভবন নং-১৩৩ ও আর নিজাম উদ্দিন রোডে ১০ তলা ভবনে ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। এ প্রকল্পের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পরিত্যক্ত ভবন নং- ২২ বি-১ নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ১১ তলা ভবনে ৩০ টি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ বাড়িটির দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বাড়ির কাজ এখনো পর্যন্ত শুরু হয়নি। পরিত্যক্ত ভবন নং-৪৯ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ১৪ তলা ভবনে ৫২টি ফ্ল্যাট নির্মিত হওয়ার কথা। বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আঞ্চলিক অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার কারনে এ বাড়িটিতে আর ফ্ল্যাট নির্মানের কাজ হচ্ছেনা। পরিত্যক্ত ভবন নং-৩ সার্সন রোডের এ বাড়িটি ৯ম তলা করার এবং ২৪টি ফ্ল্যাট নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেটেলমেন্ট জোনাল অফিসের কার্যক্রম চলছে এ বাড়িতে। এ বাড়িটিতেও ফ্ল্যাট নির্মিত হচ্ছেনা। পরিত্যক্ত ভবন নং-৩২ পাঁচলাইশ ১৫ তলা ভবনে ৪২টি ফ্ল্যাট নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ বাড়িটিতে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের দখলে থাকায় বাড়িটিতে কাজ শুরু করা যায়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে । প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এ বাড়ির কাজ শুরু হবে। পরিত্যক্ত ভবন নং-১০৩৩ জাকির হোসেন রোডের এ বাড়িটিতে নির্মিত হবে ১০তলা ভবন। এ ভবনে থাকছে ১৮টি ফ্ল্যাট। এ বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবার এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা বসবাস করায় বাড়িটি এখনো বুঝে না পাওয়ায় কাজ শুরু হয়নি।
গর্ণপূত প্রকৌশলীরা জানায়, গণপূর্ত অধিদপ্তর বহুতল ভবন নির্মাণে ভবনের চারপাশে বিশেষ নজর রাখে। ভবনে বসবাসকারী বাসিন্দাদের বিনোদন, খেলাধুলা কিংবা শরীর চর্চার জন্য ফাঁকা জায়গা রাখে। গাছপালা লাগানো, ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্টেশন এবং ওয়ার্কওয়েসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা নিশ্চিত করে ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ভবন নির্মাণে ইঞ্জিনিয়ারিং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা শতভাগ বাস্তবায়ন করছে। গণপূর্তের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রকৌশলীরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তর অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। অধিদপ্তরে যেসব প্রকৌশলীরা আসেন তারা মেধাবী ও অভিজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ধরে রাখার আলোকেই তারা কাজ করছেন। স্থাপত্য অধিদপ্তরও কাজ করছে। অন্য কোনো সংস্থায় এমন সুযোগ থাকে না। বেসরকারি ভবন মালিকেরা অনেক সময় মাটি পরীক্ষা করাতে চান না, যা ভবন নির্মাণের পর ঝুঁকি বাড়ে। সেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তর ভবন নির্মাণের আগে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে মাটি পরীক্ষা করা হয়। মাটি পরীক্ষায় অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। তাই গণপূর্ত অধিদপ্তর শুধু কনক্রিটের দেয়াল তৈরি করে না, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করছে।