ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে চলছে অস্থিরতা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পণ্য ও পরিষেবার দাম। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আক্রমণাত্মকভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় বিশ্ব অর্থনীতিতে উচ্চ মন্দার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। পাশাপাশি আগামী কয়েক বছর ধীর জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, ২০২০ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সংকোচনের পর গত বছর ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। তবে চলতি বছর ২ দশমিক ৭ এবং ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৬ শতাংশের ধীর প্রবৃদ্ধি হবে। চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা প্রতিবন্ধকতা জেঁকে বসেছে। কোভিডজনিত প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ টালমাটাল এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর মধ্যে মার্চ-এপ্রিলে চীনে নতুন করে কোভিডজনিত লকডাউন সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরো বিপর্যয়ে ঠেলে দিয়েছে। একই সময়ে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্য ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের ইকোনমিক রিসার্চ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক সারা জনসন বলেন, বিশ্বের জনসংখ্যা বার্ষিক প্রায় ১ শতাংশ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথাপিছু প্রকৃত জিডিপি ইতিবাচক পর্যায়ে থাকবে। ফলে বৈশ্বিক মন্দা এড়ানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও বৃহৎ অর্থনীতিগুলোয় মন্দার ঝুঁকি ৪০-৫০ শতাংশের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক জিডিপি সংকুচিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে একে মন্দার সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। নতুন কোনো বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি না হলে চলতি বছরের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে ২ শতাংশের কম গতিতে হলেও বিশ্ব অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে ফিরবে বলে মনে করা হচ্ছে।
লকডাউনের পর চীনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অর্থনীতি হিমশিম খেলেও এশিয়া প্যাসিফিকের উদীয়মান অর্থনীতিগুলো শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির দেখা পাচ্ছে। কোভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে ভ্রমণ, পর্যটন এবং অন্যান্য ভোক্তা পরিষেবা খাত শক্তিশালীভাবে পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। কোনো কোনো খাত এরই মধ্যে কোভিডপূর্ব পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। যদিও ২০২০ সালের মন্দায় ভোক্তানির্ভর এ খাতগুলো স্থবিরতার মধ্যে পড়েছিল।
এদিকে ক্রমবধর্মান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়াতে শুরু করেছে। বাকি ব্যাংকগুলো এমন পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। ফলে ভোক্তা ব্যয় নিম্নমুখী হওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। সুতরাং মূল্যস্ফীতির গতিও নিম্নমুখী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছর বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে আগামী বছর ৪ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়াবে। পরের বছর ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতির হার ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ২০২২ ও ২০২৩ সালে টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। এ সময়ে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের অর্থনীতি সম্ভবত ৫-৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি পাবে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, দক্ষ সরবরাহ ব্যবস্থা, প্রতিযোগিতামূলক ব্যয় এবং স্থিতিশীল প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহ এ অঞ্চলের অর্থনীতি প্রসারিত করতে সহায়তা করছে। অঞ্চলটি চিপ ও গাড়ির শক্তিশালী চাহিদা থেকে উপকৃত হচ্ছে। কোভিডের কয়েকটি ধাক্কা কাটিয়ে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল এখন শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।