জয়পুরহাটের পাঁচবিবির ঐতিহাসিক লকমা রাজবাড়ি ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এক দাপটশালী জমিদার হাদী মামুন চৌধুরীর প্রাসাদসম বিলাস-বহুল বাড়ি, হাতি-ঘোড়া, লোক-লস্কর, সৈন্য-সামন্ত আর বিশাল এলাকাজুড়ে ছিল রমরমা জমিদারি। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে একেবারে ভারত সীমান্তঘেঁষা লোকমা গ্রামে অবস্থিত প্রতাপশালী হাদী মামুন চৌধুরীর জমিদারের বাড়িটি, যার বয়স প্রায় ৫শ’ বছরের বেশি।
কালের বিবর্তনের সেই জমিদার নেই, তার রাজবাড়িও নেই। আছে শুধু তার ঐতিহাসিক সেই স্মৃতিটুকু। এখানে বেড়াতে আসেন নিদর্শন প্রেমী দেশ-বিদেশের পর্যটক আর দর্শনার্থীরা। এ ঐতিহাসিক রাজবাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হয়েছে অপরাধী ও মাদকসেবীদের আনাগোনা।
জমিদার বাড়িটি নিজ মালিকানায় হলেও তার উত্তরসূরি, এলাকাবাসী, দর্শনার্থীরাও চান রাস্তাঘাট সহ রাজবাড়িটি দ্রুত সংস্কার করলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে ও দেশের পর্যটন শিল্প হিসাবে গড়ে উঠবে। এক সময় টিকিট কেটেই এ নিদর্শন দেখতে হত কিন্তু আজ অযত্ন অবহেলায় সংশ্লিষ্টদের মনিটরিং না থাকায় হারাতে বসেছে প্রাচীন এ রাজবাড়িটি।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ১৫ বিঘা জমি আছে। উক্ত জমিতে বিভিন্ন শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি ফল ও ফুলের বাগান দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন জানান, দালান দুটির একটি ঘোড়াশাল এবং অপরটি হাতীশাল ছিল। তার একটু সামনে মাটির একটি ঢিবি রয়েছে যেখানে ইউ আকৃতির বহু পুরোনো দ্বিতল ভবনের অবস্থান।
জনশ্রুতি আছে যে, ভবনের কিছু অংশ মাটির নিচে ডেবে গেছে। লকমা রাজবাড়ির পূর্ব পার্শ্বে কবরস্থান ও কর্মচারীদের ঘর রয়েছে। কথিত আছে এই বংশের জমিদারগণ ছিলেন অত্যন্ত অত্যাচারী ও ভোগী প্রকৃতির। কোন একদিন গায়েব থেকে নির্দেশ জারি হয় আজ সূর্যাস্তের মধ্যে এই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে অন্যথায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। নির্দেশ অনুসারে সেদিন জমিদার বাড়ি থেকে সবাই বের হয়ে আসে। আর কেউ ঢুকতে পারেনি। আজও ওইভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট ১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. সামছুল আলম দুদু বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে রাজবাড়িটি তালিকাভুক্ত করেছে। রাস্তার বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ রাজবাড়ি সংস্কার করলে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠবে।