ড. আতিউর রহমান
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই মহাপ্রয়াণের দিনে তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অংশ হিসেবেই বাঙালির জাতিরাষ্ট্র গঠনের পেছনের প্রধান প্রধান স্বপ্নও বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরি মনে করছি। তিনি বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সে জন্য তিনি সোনার মানুষের সন্ধান করতেন। এই মানুষ হবে দেশপ্রেমিক এবং সৎ। অনাচার, অন্যায্যতা এবং দুর্নীতি তাদের স্পর্শ করবে না। সারা জীবন তিনি দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এমনকি জেলখানাতে বসেও সেখানকার দুর্নীত বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন। জেলখানায় যে ডাক্তার রোগীদের ঠিকমতো ওষুধ না দিয়ে তা বাইরে বিক্রি করতেন তাদের চিহ্নিত করতেন। যখনই ক্ষমতায় গেছেন এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। এমনকি পাকিস্তানি গোয়েন্দারা পর্যন্ত লিখেছেন বঙ্গবন্ধু মূলত তাঁর বাবা, মা এবং স্ত্রীর দেওয়া সামান্য অর্থেই চলতেন। আর সেই মানুষটির বিরুদ্ধেই কিনা সামরিক শাসক আইয়ুব খানের প্রভাবে দুর্নীতি দমন ব্যুরো দুর্নীতির মামলা দিয়েছিল। ১৯৫৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই মামলার কারণে তিনি ভীষণভাবে আহত হয়েছিলেন। তিনি গোয়েন্দাদের জানিয়েছিলেন, তিনি প্রাদেশিক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে নীতিগত লড়াই করে পূর্ববাংলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি কিছু শিল্প স্থাপনের ব্যবস্থা করেছিলেন। বাঙালি উদ্যোক্তা গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি তাঁর পরিবার ও সন্তানদের বঞ্চিত করে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করেছেন। আর তার বিনিময়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির মামলা দেওয়া হয়েছে। সে জন্য তিনি এতটা মর্মাহত হয়েছিলেন যে, এক পর্যায়ে রাজনীতির ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি সরকার পক্ষ। তাই ১৯৫৯ সালের ৩ জুনের গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় তিনি ওই মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান। এর পরেও তাঁর মুক্তি মেলেনি। ভিন্ন আরেক মামলায় তাঁকে আটক রাখা হয়। ১৯৫৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি সরকারকে জেলারের মাধ্যমে লিখেছিলেন যে, তাঁর কোনোই ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই। বিশ হাজার টাকার একটি জীবন বীমা ছিল। তাও বাতিল হয়ে গেছে।
যখন তিনি জেলে তাঁর পরিবার নিদারুণ অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। তাঁর মহীয়সী স্ত্রী চার সন্তান এবং বিরাট রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে সাহসের সাথে জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন। সেসব দিনের কথা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে সম্প্রতি এক দীর্ঘ লেখায় দেশবাসীকে জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন যে, বঙ্গবন্ধু আমেরিকা থেকে যে ফ্রিজটি এনেছিলেন তাও বঙ্গমাতা বিক্রি করে দিয়েছিলেন সংসার চালানোর জন্য। সন্তানদের বুঝিয়েছেন যে, ঠাণ্ডা পানি খেলে সর্দি-কাশি হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও লিখেছেন- ‘এমনও দিন গেছে বাজার করতে পারেননি। আমাদের কিন্তু কোনোদিন বলেননি আমার টাকা নাই, বাজার করতে পারলাম না। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেছেন, আচার দিয়ে বলেছেন প্রতিদিন ভাত ভালো লাগে নাকি? আজকে আমরা গরিব খিচুড়ি খাব। এটা খেতে খুব মজা। আমাদের সেভাবে তিনি খাবার দিয়েছেন। একজন মানুষ তার চরিত্র দৃঢ় থাকলে যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করার ক্ষমতা ধারণ করতে পারেন।’ সব কিছুতেই সন্তানদের সংযতভাবে চলতে শিখিয়েছেন। পারিবারিক এই শিষ্টাচার এবং সহজ-সরল জীবন চলা থেকেও বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর পরিবার কতটা সৎ এবং স্বচ্ছ জীবনযাপন করতেন। আর তাই তো ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে পা রেখেই রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেছিলেন, ‘সকল রকমের ঘুষ লেনদেন বন্ধ করতে হবে।’ এই কথা তিনি আজীবন সুযোগ পেলেই বলে গেছেন। সংবিধান প্রণয়নের সময় যে কমিটি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল তার কাছেও তিনি তাঁর দুর্নীতিবিরোধী মনোভাবের কথা বলেছেন। তাই তো আমাদের সংবিধানে এমন সামাজিক পরিবেশ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে যাতে অনুপার্জিত আয় করার সুযোগ না থাকে। অভিজন ও অভাজনে জীবনচলায় বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও কায়িক শ্রম যারা করেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব গড়ার কথা শিক্ষা কমিশনে বলা হয়েছে। এমনই গভীর ছিল তাঁর অন্তর্দৃষ্টি।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি। বরং স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল এদেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও থেকেছেন একই রকম অবিচল। আর তিনি জানতেন এই লক্ষ্য অর্জনের পথেও প্রধানতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে দুর্নীতি, অভিজনের ক্ষমতার অপব্যবহার আর স্বজনপ্রীতি। পুরো পাকিস্তান আমলে যে দুর্নীতির কারণে পূর্ববাংলার মানুষ অর্থনৈতিকভাব লাগাতার বঞ্চিত হয়ে এসেছে, স্বাধীন দেশকে সেই দুর্র্নীতির করালগ্রাস থেকে মুক্ত করতে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ জন্য তিনি যথার্থভাবেই উৎপাদনের প্রক্রিয়াগুলোর ওপর জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকেই প্রধান কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই (৯ মে ১৯৭২) তাই রাজশাহীর মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এক বিশাল জনসভায় তিনি দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেন- ‘এই সম্পত্তি আমার বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি লোকের সম্পত্তি। কোনো লোক একশ বিঘার ওপর জমি রাখতে পারবে না। এতে যে জমি উদ্বৃত্ত হবে তা ভূমিহীন গরিবদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হবে। খাসমহলের জমি গরিবদের ছাড়া আর কাকেও দেওয়া হবে না।’ প্রত্যাশিত সামাজিক রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উৎপাদনের প্রক্রিয়াগুলোর সামাজিক মালিকানার রূপরেখা হাজির করেছিলেন।
তবে মনে রাখতে হবে সময়টা ছিল তখন ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ছিল খাদ্যাভাব। ছিল অভাব। ছিল দারিদ্র্য। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম এবং পাশাপাশি তেল ও খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল। তাই খাদ্যসহ জনগণের নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম হয়ে উঠেছিল আকাশছোঁয়া। মূল্যস্ফীতি ছিল বাড়ন্ত। ঘাটতির অর্থনীতিতে চোরাকারবারি, মজুদদার এবং দুর্নীতিবাজরা ছিল সক্রিয়। আর উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং পাকিস্তানি নষ্ট কূটনীতিতে প্রভাবিত বিশ্ব মোড়লদের একাংশের খাদ্য সাহায্যকে ঘিরে চলছিল ভয়ঙ্কর সব ভূরাজনৈতিক খেলা। বঙ্গবন্ধুর নিজের দলের ভেতরেও ছিলেন খন্দকার মোশতাকের মতো চক্রান্তকারীরা। অন্যান্য বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিকরাও বিপ্লবউত্তর একটি দেশের পুনর্নির্মাণে সহযোগিতার বদলে সর্বক্ষণ সমালোচনা করে চলছিলেন। অশান্তির বীজ বুনছিলেন। কোমলমতি অস্থির তরুণদের আরও অস্থির করে তুলছিলেন। আর আমলাতন্ত্র ও সামরিক বাহিনীর অন্দরমহলে তো চলছিল ষড়যন্ত্রের নানা কসরত।
পাকিস্তানি ও প্রভাবশালী একটি পরাশক্তির গোয়েন্দাদের এসবে মদদ তো ছিলই। ফলে নিজের মধ্যকার দেশপ্রেম ও একনিষ্ঠতাকে সাধারণের মধ্যে সঞ্চারিত করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের যে গতি বঙ্গবন্ধু প্রত্যাশা করছিলেন তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু নিজেই বাকশালের কেন্দ্রীয় সদস্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এম. সাইদুজ্জামানকে বলেছিলেন- ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে গত তিন বছর আমি বেশি কিছু করতে পারিনি। এটা আমাকে খুব দুঃখ দেয়।’ (এম. সাইদুজ্জামান, ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও তার উন্নয়ন দর্শন’, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাসিক মুখপত্র উত্তরণ-এর ডিসেম্বর ২০২০ সংখ্যায় সঙ্কলিত, পৃষ্ঠা ৪৯)।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি অপশাসনের কবল থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করাটাকে প্রথম বিপ্লব হিসেবে দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সরকার পদ্ধতি, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, ভূমি, উৎপাদন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচারব্যবস্থা, প্রচারমাধ্যম ইত্যাদির মৌলিক পরিবর্তন সাধন করে নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এটিকেই বঙ্গবন্ধু তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করেন। বঙ্গবন্ধু অনুভব করেছিলেন ওই সময়ে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা দেশের প্রকৃত সমস্যাগুলো সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছিল। অর্থাৎ প্রান্তিক মানুষের কাছে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তাঁর ভাষায় ‘সিস্টেম’ পরিবর্তন করার জন্য এই দ্বিতীয় বিপ্লব দরকার ছিল, যাতে করে ‘শোষিত’ মানুষের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় (রওনক জাহান, ইধহমষধফবংয চড়ষরঃরপং : চৎড়নষবসং ধহফ ওংংঁবং, পৃষ্ঠা ১৫৩)। আন্তর্জাতিক মহলও বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিকে মূলত দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং রাজনৈতিক সহিংসতার মতো দুর্যোগগুলো থেকে দেশকে রক্ষার জন্য একটি মরিয়া চেষ্টা হিসেবেই চিহ্নিত করেছিল (টাইম সাময়িকী, ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫)।
বঙ্গবন্ধু নিজে দুর্নীতিকে দেশের অগ্রযাত্রার পথে প্রধানতম অন্তরায় মনে করতেন। দুর্নীতি দমন দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির কেন্দ্রীয় জায়গায় ছিল। এ প্রসঙ্গে মহান জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ তারিখে তিনি বলেন- ‘আজকে করাপশনের কথা বলতে হয়। এ বাংলার মাটি থেকে করাপশন উৎখাত করতে হবে। করাপশন আমার বাংলার কৃষকরা করে না। করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ, যারা ওদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি। ... বাংলার মাটি থেকে এদের উৎখাত করতে হবে।’ এর পর জনগণের কাছে দ্বিতীয় বিপ্লবের দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচির যৌক্তিকতা তিনি তুলে ধরেন ২৬ মার্চ ১৯৭৫ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায়। সেদিন তিনি বলেন, ‘সমাজ ব্যবস্থায় যেন ঘুণ ধরে গেছে। এই সমাজের প্রতি চরম আঘাত করতে চাই- যে আঘাত করেছিলাম পাকিস্তানিদের। সে আঘাত করতে চাই এই ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থাকে। আমি আপনাদের সমর্থন চাই।’ জনগণকে সাথে নিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্নত রেখে সকল দুর্র্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর এ সময়কার লক্ষ্য। এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের ওপর তাঁর ছিল অগাধ আস্থা। ন্যায়ের প্রশ্নে আপসহীন এই মেহনতি মানুষদের ত্যাগ অল্প কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে বৃথা যাচ্ছিল। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, ‘আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ?- না। আমার শ্রমিক?- না। তা হলে ঘুষ খায় কারা? ব্ল্যাকমার্কেটিং করে কারা? বিদেশি এজেন্ট হয় কারা? ... শতকরা পাঁচজন শিক্ষিত, এই আমাদের মধ্যেই ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ। আমাদের চরিত্র সংশোধন করতে হবে।’ জনগণের যারা সেবক হবেন বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন তারা যেন জনগণকে প্রকৃত অর্থেই সম্মান করেন এবং জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। তাই ওই জনসভায় তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় গরিব কৃষক, আপনার মাইনে দেয় এ গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। ... ওদের সম্মান করে কথা বলুন। ইজ্জত করে কথা বলুন।’ এ জন্য পুরো প্রশাসনের খোলনলচে বদলে, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে, সর্বোপরি একটি বিকেন্দ্রায়িত এবং প্রকৃত অর্থে অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থার দিকেই এগোচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশ তার সুফলও পেতে শুরু করেছিল। কিন্তু চক্রান্তকারীরা তাঁকে শারীরিকভাবে আমাদের কাছ থেকে ছিন্ন করায় সেই অভিযাত্রা থমকে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো দেশ। তাও ভালো, বহু সংগ্রামের পর আবার এ দেশ সে পথে যাত্রা করছে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
যে চ্যালেঞ্জিং প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবিরোধী একটি শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, সে সময় যে লক্ষ্য ও কৌশলগুলো তিনি বেছে নিয়েছিলেন সেগুলো কিন্তু বর্তমান বাস্তবতাতেও অনেকখানি প্রাসঙ্গিক। এখনো দুর্নীতি ও সুশাসনসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়নের সুফল সকল মানুষের কাছে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। সরকার প্রাণান্ত চেষ্টা করছে একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক সামাজিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে দেশকে এগিয়ে নিতে। তবে কাজটি এককভাবে সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। বরং বৃহত্তর সমাজকেও একইভাবে সচেষ্ট হতে হবে দুর্নীতিবিরোধী এই সামাজিক আন্দোলনে। আমাদের সামষ্টিক উদ্যোগ সফল হবেই। কারণ আমাদের সামনে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া দুর্নীতিবিরোধী অগ্রযাত্রার রূপরেখা।
লেখক: অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর