সিনেমা নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ কবে দেখেছেন দর্শক—তা হয়ত মনে করা কঠিন। কোরবানির ঈদে মুক্তি পাওয়া তিন সিনেমা নিয়ে প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে যে কাদা-ছোড়াছুড়ি চলছে তা নজিরবিহীন বলা যায়। প্রত্যেকে নিজের ছবিকে সেরা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে ‘এক নাম্বার’ সিনেমার তকমা কোন সিনেমার কপালে জুটল—সেটাই এখন খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
বলে রাখা ভালো, সর্বোচ্চ সংখ্যক সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ‘দিন: দ্য ডে’। প্রথম সপ্তাহে ১০৭ সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে এক শ কোটির বাজেটের ছবিটি। আর ১৭ সিনেমা হলে ‘সাইকো’। সর্বনিম্ন কম সিনেমা হল পেয়েছে ‘পরাণ’। এই ছবির ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ১১টি সিনেমা হল। হিসাব অনুযায়ী এবার ঈদে ১৩৫ সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে তিন সিনেমা। এর বাইরে অন্তত অর্ধশত সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হচ্ছে পুরোনো ছবি। তথ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শক ও পরিবেশক সমিতির।
প্রথম সপ্তাহে কম সিনেমা হলে মুক্তি পেলেও দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘পরাণ’-এর সিনেমা হলের সংখ্যা বেড়েছে। সিনেপ্লেক্সেও বাড়ানো হয়েছে শো। পাশাপাশি হল কমেছে বাকি দুই সিনেমার। দেশের কোথায় কোন সিনেমা ভালো চলছে—এ বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক ও পরিবেশক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন। কথা বলেছেন সিনেমা হল মালিকদের সঙ্গে। সবার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও নিজের পর্যালোচনা থেকে কোরবানির ঈদের সেরা সিনেমা হিসেবে ‘পরাণ’কে নির্বাচিত করেছেন।
মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, দর্শকের কাছে গল্প ভালো লাগলে, সেই সিনেমা লুফে নেন। মানুষ সাধারণ গল্পের ছবি দেখতে চান। ‘পরাণ’-এর গল্প ভালো। দর্শক পছন্দ করেছেন। ‘দিন: দ্য ডে’ শতাধিক সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ায় আয়ের দিক থেকে এগিয়ে। ‘সাইকো’ মোটামুটি। তবে সিনেমা হিসেবে এক নাম্বারে ‘পরাণ’। প্রথমে সিনেমাটি কম সিনেমা হলে মুক্তি পেলেও পরে কিন্তু বেড়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও বাড়বে বলে জানতে পেরেছি। আসলে বাজেট বেশি হলেই যে, সিনেমা ভালো হবে—এটা না।
হাউসফুল দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাউসফুল সহজ কথা নয়। যারা বলছেন, তারা এটা সম্পর্কে বোঝেন কি না—আমার জানা নেই। কোনো সিনেমা হাউসফুল হয়নি। এই যে, ‘পরাণ’ এক নাম্বার সিনেমা, এটাও কিন্তু হাউসফুল হয়নি। এসব মিথ্যা বলে সিনেমার প্রচারণা করা অসততা। মানুষ বোকা নন। তারা সত্য বুঝতে পারেন।
মিয়া আলাউদ্দিন জানান, ‘দিন: দ্য ডে’ নিয়ে তার প্রত্যাশা ছিল বেশি। কিন্তু সিনেমাটি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তার ধারণা, এই ছবির গল্প দর্শক বুঝতে পারেননি, তাই হয়ত সব শ্রেণির কাছে এটি ভালো লাগেনি। এ কারণে অনেক সিনেমা হল থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে ছবিটি। তার বদলে শাকিব খানের পুরোনো সিনেমা প্রদর্শন করা হচ্ছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল ‘দিন: দ্য ডে’কে ভালো ছবি বললেও, সেরার ভোট দিলেন ‘পরাণ’ সিনেমাকে। বেশি সিনেমা হল পাওয়ায় ‘দিন: দ্য ডে’ মোটামুটি ভালো ব্যবসা করেছে। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই অনেক সিনেমা হল থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে এই ছবি। বিপরীতে ‘পরাণ’-এর হলসংখ্যা বেড়েছে। দর্শকের আগ্রহ বাড়ছে সিনেমাটি নিয়ে। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ শুরুতে একদম কম সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল। পরে সেটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। হয়ত ‘পরাণ’ সে পথে হাঁটবে না। তবে এবার ঈদের সেরা সিনেমা এটি। ‘দিন: দ্য ডে’ দ্বিতীয় অবস্থানে। আর ‘সাইকো’ সিনেমাকে তৃতীয়তে রাখব। এটা আসলে আমার ব্যক্তিগত মত নয়, অন্যান্য সিনেমা হল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা বলছি।
রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সেও কমেছে ‘দিন: দ্য ডে’র শো। দর্শকের চাপে ‘পরাণ’-এর শো বাড়ানো হয়েছে। তবে সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর মধ্যে সেরার তালিকা করতে চাইলেন না। তার কাছে প্রদর্শিত দুটি সিনেমাই সেরা।
মেজবাহ উদ্দিন আহমেদের কথায়, প্রথমে ‘পরাণ’-এর শো কম ছিল। ‘দিন: দ্য ডে’র বেশি ছিল। পরে দর্শকের আগ্রহে বাড়ানো হয়েছে ‘পরাণ’-এর শো। তার মানে এই নয় যে, ‘দিন: দ্য ডে’ খারাপ ছবি। দুটি সিনেমার ভালো দর্শক পাচ্ছি আমরা। এখানে যদি তালিকা করি, তাহলে এটা আমাদের সিনেমার জন্য ভালো হবে না। মানুষ সিনেমা দেখছেন, আলোচনা করছেন। আমি মনে করি, এসব খুব ভালো দিক।
তবে সিনেমা নিয়ে একে অন্যকে যেভাবে হেয় করা হচ্ছে তাতে চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে বাধা সৃষ্টি করবে। এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখায় জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।