এক ব্যক্তি হাতে সকল ক্ষমতা, তিনি যা বলবেন
সেটাই আইন। এটা কখনোই গণতন্ত্র হতে পারে না, এভাবে গণতান্ত্রিক চর্চা হতে পারে না বলে
মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
শনিবার (২৭ আগস্ট) জাপার বনানী কার্যালয়
মিলনায়তনে সুনীল শুভরায় প্রণীত “ছোটদের পল্লীবন্ধু” গ্রন্থের প্রকাশনা
উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। “ছোটদের পল্লীবন্ধু” বইয়ের মোড়ক
উন্মোচণ করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহবায়ক
শেরিফা কাদের।
তিনি আরও বলেন, এক ব্যাক্তির হাতে সকল
ক্ষমতা থাকলে গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক
প্রতিপক্ষরা অনেক মিথ্যাচার করেছে কিন্তু সফল হয়নি। দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ের
মনিকোঠায় এরশাদ অক্ষয় হয়ে আছেন। এখন রাজনৈতিক বাস্তবতা হচ্ছে, গণতন্ত্র নিপাত যাক
আর স্বৈরতন্ত্র চালু থাক।
তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে যারা
অন্যায়ভাবে স্বৈরাচার উপাধি দিয়েছেন. তারাই ১৯৯০ সালের পর সংবিধানে কাটাকাটি করে
স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার সংবিধান সংশোধন করে, দেশে
সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-কে ছোট
করতে অসংখ্য মিথ্যাচার করেছে প্রতিপক্ষরা। তারা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দুর্ণীতিবাজ
বলে মিথ্যাচার করেছে। কিন্তু ক্লিনহার্ট আর ওয়ান ইলেভেনের এর সময় দুর্নীতিবিরোধী
অভিযানে বা জাতীয় পার্টির কোন নেতার বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। আবার ১৯৯০ সালে যে
১ কোটি ৯০ লাখ টাকার জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দণ্ডিত করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে আদালতই
রায় দিয়েছেন ঐ টাকা জাতীয় পার্টির দলীয় টাকা। সেই টাকা জাতীয় পার্টিকে ফেরত দিতে
নির্দেশও দিয়েছে আদালত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ৯০ সালের পর থেকে ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি
করছে। ক্ষমতা হারালে প্রতিপক্ষ দুর্নীতির মামলা দেয়। পরবর্তীতে ক্ষমতায় গিয়ে সেই
মামলা তুলে ফেলেন। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে দুর্নীতির
যে মামলাগুলো হয়েছিলো, ক্ষমতায় এসে তারা সেই মামলাগুলো তুলে ফেলেছে।
তিনি বলেন, এখন দেশে এমন কোন সেক্টর নেই
যেখানে দুর্নীতি নেই। দুর্নীতি দেশের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে। পদ্মাসেতু অর্ধেকটা
উদ্বোধন হয়েছে কিন্তু এখনো রেলসেতু চালু হয়নি। পদ্মাসেতুতে বিদেশী ঋণ আছে, এটি নিজস্ব
অর্থায়নে তৈরী হয়নি। পদ্মায় রেলসেতু উদ্বোধন করতে আরো অনেক অতিরিক্ত টাকা ব্যায়
করতে হবে।
তিনি বলেন, গবেষণায় উঠে এসেছে, আওয়ামী
লীগের হাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বেশি জমিজমা দখল হয়েছে। আবার বিএনপির হাতেও
দখল হয়েছে সংখ্যালঘুদের জমিজমা। গ্রামাঞ্চলে এখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতিত
হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের হাতে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক
মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ইতিহাস থেকে এরশাদকে মুছে ফেলা যাবে না। ষড়যন্ত্রকারীরা
ব্যার্থ হয়েছে। এরশাদ দেশের উন্নয়ণ, সংস্কার আর মানবিকতার ইতিহাসে উজ্জল তারকা হয়ে
থাকবেন। এদেশের উন্নয়নে তার কীর্তির মাঝে অসংখ্য ব্রীজ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে লালমনিরহাটের বিশিষ্ট সমাজবেক
ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ এম.জি. গোলাম ও বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ব্যাংকার এ এ এম ওয়াহেদুল
ইসলাম জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি’র হাতে ফুল দিয়ে
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য শাহীনারা
সুলতানা রীমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফিরোজ
রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, ফখরুল
ইমাম এমপি, সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সোলায়মান আলম শেঠ, আতিকুর রহমান
আতিক, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি, মনিরুল ইসলাম মিলন, তথ্য ও গবেষণা
বিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু, কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ,
লে: কর্ণেল (অব.) তসলিম উদ্দিন, রাকিন আহমেদ, মহিত হাওলাদার, ফারিন হাসান।
উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল
ইসলাম সেন্টু, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মমতাজ উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম
শফিক, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, জসীম উদ্দিন ভূঁয়া, ফখরুল আহসান
শাহজাদা, এডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাষাণী, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন মুক্তি, সম্পাদকমন্ডলীর
সদস্য নাসির উদ্দিন সরকার, হুমায়ন খান, এনাম জয়নাল আবেদীন, এম এ রাজ্জাক খান প্রমুখ।