মিয়ানমারের এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানিয়েছে,
দেশটির সেনাবাহিনী শান রাজ্যের এক মঠে হামলা চালিয়ে ৩০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।
কারেনি ন্যাশনালিটিস ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ)
জানিয়েছে, সেনারা শনিবার নান নেইন গ্রামে গোলাবর্ষণ করেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, দুই বছর আগে এক সামরিক
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের জান্তা ক্ষমতা দখল করার পর থেকে দেশটির সামরিক বাহিনী
ও সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রাণঘাতী লড়াইয়ের ঘটনা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে তীব্র কিছু লড়াই হয়েছে
শান রাজ্যে, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদো ও প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের সঙ্গে রাজ্যটির সীমান্ত
আছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
কেএনডিএফ জানিয়েছে, গোলাবর্ষণের পর শনিবার
স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে জান্তার বিমান বাহিনী ও গোলন্দাজ বাহিনী গ্রামটিতে প্রবেশ
করে এবং মঠে লুকিয়ে থাকা গ্রামবাসীদের খুঁজে বের করে এনে হত্যা করে।
তারা অন্তত ৩০ বেসামরিক ও তিনজন বৌদ্ধ
ভিক্ষুকে হত্যা করেছে বলে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে।
স্থানীয় সংবাদপত্র কান্তারাওয়াদ্দি টাইমসের
প্রতিবেদনে দেওয়া উদ্ধৃতিতে কেএনডিএফ এর মুখপাত্র বলেছেন, “সামরিক বাহিনীর
তাদের মঠের সামনে এনে লাইন ধরে দাঁড়াতে বাধ্য করে তারপর ভিক্ষুদেরসহ সবাইকে নৃশংসভাবে
গুলি করে হত্যা করে।”
কেএনডিএফ এর এক ভিডিওতে অন্তত ২০টি মৃতদেহ
দেখা গেছে। লাশগুলো মঠের পাশে স্তূপ করে রাখা ছিল। নিহতদের কয়েকজনের পরনে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের
ব্যবহৃত কমলা রঙের পিরান দেখা গেছে।
মৃতদেহগুলোর শরীরে বন্দুকের গুলির আঘাতের
মতো অনেক চিহ্ন দেখা গেছে। ভিডিওতে মঠের দেয়ালে গুলির আঘাতে তৈরি হওয়া গর্তও দেখা গেছে।
মঠের চারপাশের কয়েকটি ভবন ও বাড়ি পুড়িয়ে
দেওয়া হয়েছে, এগুলো গ্রামটিতে সামরিক বাহিনীর হামলার নজির বলে জানিয়েছে কেএনডিএফ।
মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে
সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর যে বাহিনীগুলো যোগ দিয়েছে কেএনডিএফ তাদের মধ্যে একটি।
বিবিসি জানিয়েছে, ঘটনাটির বিস্তারিত যাচাই
করা কঠিন হলেও মিয়ানমারের এই অংশে নিরস্ত্র বেসামরিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বর্বরতার
ঘটনা নতুন নয়। অভ্যুত্থানের পর থেকে এখানে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে প্রবল প্রতিরোধের
কিছু ঘটনা ঘটেছে।
ওই এলাকার অন্যান্য গ্রামে সামরিক বাহিনীর
অভিযান অব্যাহত আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন।
মিয়ানমারের জান্তা সরকার চলতি বছর একটি
নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা করছে। এটি তাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কিছু বৈধতা এনে দেবে বলে
মনে করছে তারা।
কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাপক বিমান
হামলা সত্ত্বেও তাদের শাসনের বিরোধীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা, এতে নির্বাচন করা
প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরেই গৃহযুদ্ধ চলছে,
এ যুদ্ধ ২০২১ এর সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এসব লড়াইয়ের ঘটনায় ১৫
লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ৪০ হাজার বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ৮০ লাখ শিশু স্কুল
ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এবং প্রায় দেড় কোটি লোক খাদ্যের অভাবের মুখোমুখি হয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে
আছেন।
ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে জান্তার দমনপীড়নে
এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে দেশটির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী
অ্যসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স গোষ্ঠী জানিয়েছে।