প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখনকার ডিপ্লোমেসি (কূটনীতি) পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি নয়, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি হবে। সব দূতাবাসকে রপ্তানি বাণিজ্য, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, আমরা কী রপ্তানি করতে পারি বা কোথা থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি- এসব দিকে দৃষ্টি দেওয়ার নিদের্শ দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাষ্ট্রে গিয়েছি। ওইসব রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে সেভাবে ব্রিফ করেছি। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সেটা বলে দেওয়া আছে। দূতাবাস চেষ্টা করবে, দেখবে কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে। আমরা সেটাই রপ্তানি করতে চেষ্টা করব। এভাবেই বাণিজ্য বৃদ্ধি করব।
রোববার (১ জানুয়ারি) পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রপ্তানিযোগ্য কিছু পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। সেটাকে বহুমুখী করার কথা, আমি বার বার এ কথা বলে যাচ্ছি, এখনও বলছি, যত বেশি পণ্য বহুমুখী করতে পারব; যত বেশি নতুন নতুন বাজার পাব, তত বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পারব। মানুষের যাতে কর্মক্ষমতা বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সেজন্য আমি সবাইকে আহ্বান করেছি- এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে। একশ অঞ্চলে আপনারা নানা ধরনের ব্যবসা করেন, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করেন। আমরা মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছের চাহিদা এখন অনেক বেশি। এমনকি কাঁচা কাঁঠালের কী পরিমাণ চাহিদা বেড়েছে এটা আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না। অবশ্যই একটা ভালো সুখবর আছে, বার মাস যাতে কাঁঠাল উৎপাদন হয় আমাদের গবেষকরা তার ব্যবস্থা করেছেন। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল।
তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত কৃষিপণ্য, পাট, চা, তরি-তরকারি, শাক-সবজি, ফল-মূল যাই আমাদের উৎপাদন হচ্ছে সেগুলো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রক্রিয়াজাত করা। খাদ্যের চাহিদা আমার মনে হয় কখনও বন্ধ হবে না। সারাবিশ্বে খাদ্যে মন্দা এবং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ রয়েছে। আপনারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলুন। তাতে আমাদের দেশীয় উৎপাদকরা যেমন লাভবান হবে, কর্মসংস্থানও হবে। পাশাপাশি রপ্তানির জন্য নতুন পণ্য হবে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম সবকিছু আমরা উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। যত বেশি খাদ্য রপ্তানি হবে তত বেশি সুবিধা হবে। এভাবে কাজ করলে আমরা আরও বেশি রপ্তানি বাড়াতে পারব। আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনারা কাজ করবেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বিদ্যুৎ আর গ্যাস যদি একেবারে নিরবচ্ছিন্নভাবে চান, এগুলো ক্রয় করতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই খরচের দামটা দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে। ভর্তুকি তো জনগণের টাকা, এত বেশি দেওয়াও যায় না। ব্যবসায়ী বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। এই মেলায় আমাদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উৎপাদিত পণ্যের সমরোহ ঘটবে। দেশি-বিদেশি পণ্য নিয়ে সবাই আসবে। আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। সেদিক থেকে আমি মনে করি মেলা সফল হবে। সারাবিশ্বে একটা মন্দা চলছে, তার প্রভাবটা আমাদের বাণিজ্যে কিছুটা আসবে। আমাদের দেশে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। আমরা সেভাবে একটা বিরাট মার্কেট তৈরি করতে পারি।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইস্ট-ওয়েস্ট, নর্থ-সাউথের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। এই সুযোগটা নিয়েই বেশি বেশি পণ্য উৎপাদন করতে পারব, রপ্তানি করতে পারব, বাণিজ্য করতে পারব। এছাড়া সেবা খাতের উন্নতি করতে পারব। আমরা পর্যটক টানতে পারব। অনেক সুবিধা আমাদের সামনে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান।