কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনার পরও কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার নির্বাচনী এলাকা ছাড়েননি। প্রতিদিনই তিনি নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সেফবাড়ি এলাকায় তার বাসা ও রামঘাট এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বসে ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসির নির্দেশনার পরও এমপি বাহারের এলাকা না ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা।
এদিকে, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলছেন, এমপি বাহার ‘কুমিল্লার অভিভাবক’। মনিরুল হক সাক্কু ইসিতে অভিযোগ দিয়ে তাকে এলাকা ছাড়া করতে চায়।
এর আগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার জন্য গত বুধবার (৮ জুন) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্দেশ দেয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছিল।
নির্দেশনার পরদিন বৃহস্পতিবার (৯ জুন) তিনি নির্বাচনী এলাকার বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কাবিলা এলাকার হোটেল নূর মহলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করেন বাহার। বিকাল ৪টার পর থেকে তিনি নগরীর রামঘাট এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবস্থান করেন। পরদিন শুক্রবার (১০ জুন) অন্যান্য কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাদ জুমা তিনি নগরীর চর্থা এলাকায় একটি জানাজায় অংশ নেন।
এদিকে, শনিবার (১১ জুন) সকালে নগরীর রাণীর দিঘির পাড়স্থ নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত।
এ সময় এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের নির্বাচনী এলাকা না ছাড়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র প্রার্থী রিফাত বলেন, হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার শুধু কুমিল্লা সদর আসনের এমপিই নন, তিনি কুমিল্লার অভিভাবক। তিনি কুমিল্লায় অবস্থান করলেও আমার নির্বাচনী কোনো কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছেন না, শুধু কিছু ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করছেন।
রিফাত সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, এমপি বাহারকে নিয়ে সাক্কুর এতো ভয় কেন? সে ইসিতে অভিযোগ করে তাকে এলাকা ছাড়া করতে চায়। নির্বাচন কমিশন যে আদেশ দিয়েছে তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। দু’য়েক দিনের মধ্যে হয়তো রায় হবে। তখন যদি তাকে এলাকা ছাড়তে হয়, তিনি ছেড়ে দিবেন।
এ দিকে নির্বাচনী প্রচারণাকালে ইসির নির্দেশনা সত্ত্বেও এমপি বাহারের এলাকা না ছাড়া নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।
নগরীর রাণীর বাজার এলাকায় প্রচারণাকালে মনিরুল হক সাক্কু সাংবাদিকদের বলেন, উনি (এমপি বাহার) এখনো এলাকা ছাড়েননি। তিনি যদি এলাকা না ছাড়েন, তাহলে নির্বাচন কমিশনের কাজ কী? তাকে কেন চিঠি দেওয়া হয়েছিল? আমি শুনছি, উনি একটা রিট করছে। এটার শুনানি চলছে। তার মানে তো এই না যে, উনি এলাকায় থাকতে পারবেন। আইন অনুযায়ী উনি এখন এলাকায় থাকতে পারেন না। কিন্তু আছেন। তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো থাকল না।
মনিরুল হক সাক্কু অভিযোগ করেন, কুমিল্লার আশপাশের ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এনে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কেন্দ্রের পাশে জড়ো করা হয়েছে। আমার ভোটারদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে, বহিরাগত ও নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, আমার সব খোঁজ-খবর রাখছি। ভোটের আগে থেকেই বাইরে থেকে কেউ এসে যেন কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহরে ১৫টি স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বিশটির বেশি টিম টহল কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে না বলে আশা করছি।