ঠাকুরগাঁও থেকে মহশীন আলী
"আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার"- এই শ্লোগানকে ধারণ করে গৃহীত আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার যেখানে চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিটি গৃহ ও ভূমিহীন মানুষকে আশ্রয়ের জন্য একটি করে মডেল গৃহ উপহার দেওয়ার, সেখানে কতিপয় কুচক্রী ও অসাধু মহলের নিকট যেন বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সরকারের এই মহতী প্রকল্প।
আজ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের প্রয়াগপুর গ্রামের বোঁচাপুকুরে অবস্থিত আশ্রয়ন প্রকল্প ১ ও ২ এ নির্মিত গুচ্ছগ্রামে রাণীশংকৈল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইন্দ্রজিত সাহা ও তাঁর দল কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে দেখা যায় এরকম কিছু অবৈধ দখলদার ও তাদের কর্মকাণ্ড।
অভিযান পরিচালনার সময় দেখা যায়, উক্ত গুচ্ছগ্রামে ২০ টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৩ টি গৃহে মানুষ পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, বাকি ০৭ টি গৃহে বরাদ্দপ্রাপ্ত কোন লোকজন থাকছেন না।
উক্ত গুচ্ছগ্রামে জনৈক মকবুল হোসেনের নামে একটি গৃহ বরাদ্দ থাকলেও সে গৃহে তিনি থাকছেন না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায় নাই। তার গৃহের ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় , তার গৃহের পার্শ্ববর্তী বাবুল হোসেন মকবুল হোসেন কে তাড়িয়ে দিয়ে বাবুল হোসেন সেই বাড়িটি অবৈধভাবে দখল করে আছেন। অভিযান পরিচালনা কালে ঘরের ভিতরে থাকা মাল-সামানা এসিল্যান্ডের নির্দেশক্রমে বাবুল হোসেন নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেন এবং ভবিষ্যতে এরকম কোন কিছু না করার শর্তে এসিল্যান্ড তাকে সতর্ক করেন। এবং পরে বাড়িটিতে তালাবদ্ধ করেন।
আরো কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে অভিযান চলাকালে দেখা যায়, জনৈক আলাউদ্দিন, চেমঠু, সুব্রত ওরফে বিহারু নেংড়া নিজ নামে বাড়ি বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে তারা কেহই সেই বাড়িতে থাকছেন না। তাই সেই বাড়ি গুলোতেও এসিল্যান্ডের নির্দেশক্রমে তালা দিয়ে রাখা হয়। অপরদিকে কোনো ঘরবাড়ি না থাকায় জনৈক রেহানা বেগম নামে এক বিধবা মহিলা দুই পুত্র সন্তান সহ নিদারুণভাবে কষ্টে থাকার কারণে উপস্থিত ইউপি সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধক্রমে এসিল্যান্ড ইন্দ্রজিৎ সাহা অস্থায়ীভাবে আপাতত একটি বাড়িতে বসবাসের সুযোগ করে দেন।
তিনি (এসিল্যান্ড) জানান, এই গুচ্ছগ্রামে যারা গৃহ বরাদ্দ নিজ নামে নিয়েছেন তাদের অনেকের বসতভিটা ও ঘড়বাড়ি রয়েছে এবং গুচ্ছগ্রামে প্রাপ্ত বাড়িতে তারা থাকছেন না, দু'একটি বাড়ি দাপুটে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন- এমন তথ্য প্রাপ্তির ভিত্তিতে তাঁদের এই অভিযান। অভিযানে তিনি ও তাঁর দল মিলে অবৈধভাবে দখলে থাকা ব্যক্তিদের নিকট হতে ঘর গুলি উদ্ধার করে তালা দিয়েছেন। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতঃ এবং সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে প্রকৃত গৃহ ও ভূমিহীনদের মাঝে উক্ত ঘরগুলি প্রদান করবেন বলে প্রতিবেদক সহ উপস্থিত সবাইকে অবহিত করেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গৃহীত পদক্ষেপকে তিনি একটি মহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট ও বদ্ধপরিকর। সেই কারণে তাঁর এলাকায় ছয় মাস অন্তর অন্তর প্রতিটি গুচ্ছগ্রামে তিনি এরকম অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখবেন এবং প্রকৃত দুঃস্থ, অসহায়, গৃহ ও ভূমিহীনদের মাঝে এই প্রকল্পের আওতায় গৃহ বরাদ্দ করবেন বলে তাঁর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এসময় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা বাবু ভূপাল চন্দ্র রায় যোগ করে বলেন, যারা এখানে পরিবার নিয়ে রান্নার চুলা জ্বালিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন তারাই কেবল এই ঘর বরাদ্দ পাবেন।
পরবর্তীতে সত্যতা যাচাই বাছাই করতে আলাউদ্দিনের বসবাসরত পৈতৃক ভিটায় এসিল্যান্ড ও তাঁর দল সহ অনেকেই যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলাউদ্দিনের পাকা বাড়ি সহ সব কিছুই রয়েছে যাতে করে আলাউদ্দিন বা তার পরিবারের কেউ উক্ত আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন বাড়ি বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, জনৈক লাঠুয়া নামে ইউপি মেম্বার বড় রকমের একটা উৎকোচ নিয়ে তৎকালীন ভূমি অফিসার কে ম্যানেজ করে আলাউদ্দিনের মত ব্যক্তিদেরকে ঘর পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখেন।যার কারণে আলাউদ্দিনের মত লোকেরা উক্ত ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর সেখানে অবস্থান না করে তারা এখন ঘর বিক্রির ধান্ধায় রয়েছেন বলে জানা যায়।
অভিযান পরিচালনার সময় উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইউপি সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, মিডিয়ার লোকজনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।