আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে কোভিডজনিত বিধিনিষেধ অব্যাহত রেখেছে চীন। করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় লকডাউন আরোপ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভোক্তারা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করছেন। এমন পরিপ্রেক্ষিতে চীনের জাতীয় দিবসের ছুটিতে ভ্রমণ ও ব্যয় কমে গিয়েছে। এতে এশিয়াজুড়ে ভোক্তা ব্যয় ধীর হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১ অক্টোবর শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী জাতীয় দিবসের ছুটিতে চীনে ৪২ কোটি ২০ লাখ পর্যটকের ভ্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে। এ সংখ্যা গত বছরের ছুটির মৌসুমের তুলনায় ১৮ দশমিক ২ শতাংশ কম। কোভিডজনিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে চলতি বছরও দেশটির অভ্যন্তরীণ পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি জানিয়েছে, চলতি বছরের জাতীয় দিবসের ছুটিতে ভ্রমণকারীর সংখ্যা মহামারীপূর্ব ২০১৯ সালের পর্যায়ের ৬০ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, এ সময়ে অভ্যন্তরীণ পর্যটন আয় ২৮ হাজার ৭২০ কোটি ইউয়ানে (৪ হাজার ৩৭ কোটি ডলার) দাঁড়িয়েছে। এ খাতে আয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ২ শতাংশ কম। পাশাপাশি এটি প্রাক-মহামারী ২০১৯ সালের স্তরের মাত্র ৪৪ দশমিক ২ শতাংশে রয়ে গিয়েছে। এদিকে চায়না স্টেট রেলওয়ে গ্রুপের প্রাথমিক পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে আরেক রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন জানিয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত রেলে বুক করা ট্রিপের সংখ্যা ৬ কোটি ৮৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ কম। গত বছরের জাতীয় দিবসের ছুটিতে ১১ কোটি টিকিট বুক করা হয়েছিল।
অনলাইন টিকিট পরিষেবা দেয়া মাওয়ান ইন্টারটেইনমেন্টের মতে, চলতি বছরের ছুটির মৌসুমে (গত শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত) সিনেমার টিকিট বিক্রিও কমেছে। এ সময়ে অর্থের হিসাবে টিকিট বিক্রি ১৪০ কোটি ইউয়ানে (২৮ কোটি ২০ লাখ ডলার) পৌঁছেছে। এটি গত বছরের সাতদিনের ছুটিতে টিকিট বিক্রির তুলনায় এক-তৃতীয়াংশেরও কম। ২০২০ সালের ছুটির মৌসুমেও প্রায় ৪০০ কোটি ইউয়ানের সিনেমা টিকিট বিক্রি হয়েছিল।
দুর্বল ব্যয়ের পরিসংখ্যান চীনের ভোক্তা ব্যয় পুনরুদ্ধার নিয়ে হতাশাজনক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। আবার একই সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিয়েও ঝুঁকি বাড়ছে। দেশটির রিয়েল এস্টেট বাজারের মন্দা সহজ হওয়ারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি চীনা পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা কমছে এবং ডলারের বিপরীতে মুদ্রার বিনিময় হার নিম্নমুখী রয়েছে। বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বলছেন, ২০২৩ সালের মার্চের আগে জিরো কভিড নীতি সহজ করার সম্ভাবনা নেই বেইজিংয়ের।
চীনা অর্থনীতিতে এমন অবনতি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি থেকে সেমিকন্ডাক্টর ও অনলাইন কেনাকাটা পর্যন্ত এশিয়াজুড়ে বিস্তৃত মন্দার চিত্র তুলে ধরে। এছাড়া আগামীতে এ চিত্র আরো দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো মুনাফা কমার খবর দিয়েছে। চিপের ক্রয়াদেশে তীব্র পতন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বাড়ানোর কারণে ভোক্তা মনোভাবে আঘাত করার জন্য এটিকে সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত কয়েক দিন চীনে আবারো কোভিডের সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে। পার্টি কংগ্রেসের আগে সংক্রমণ মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। জাতীয় দিবস বা গোল্ডেন উইক চলাকালীন বাড়িতে থাকার অনুরোধ সত্ত্বেও চীনারা ভ্রমণ অব্যাহত রেখেছে। ছুটিতে পর্যটন গন্তব্যগুলো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে এবং দক্ষিণের ইউনান থেকে উত্তরে ইনার মঙ্গোলিয়া এবং পশ্চিমে জিনজিয়াং পর্যন্ত নতুন করে লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সত্ত্বেও বেইজিং মহামারীর শুরু থেকেই এমন কঠোর নীতি অব্যাহত রেখেছে।