অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাস। শুধু হত্যা নয়, তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ারও অভিযোগ রয়েছে। সে সম্পদের একটি বড় অংশ রয়েছে তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। প্রদীপ গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি হলেও তার স্ত্রী চুমকির খোঁজ মিলছিল না। প্রদীপপত্নী দেশে আছেন না বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল আলোচনা সমালোচনা। এর মধ্যে সোমবার (২৩ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন চুমকি কারণ। প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন কোথায় ছিলেন তিনি?
সকালে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে চুমকি জামিন আবেদন করলে সেই আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ। মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন প্রদীপ কুমার দাস। তখন থেকেই পলাতক তার স্ত্রী চুমকী। প্রদীপ গ্রেফতারের পর একবারের জন্যও আদালত প্রাঙ্গণে বা কারাগারে তাকে স্বামীকে দেখতে যাননি চুমকি। আবার প্রদীপের চট্টগ্রামের বাড়িতেও দেখা মেলেনি তার।
এমনকি চুমকির বাবা এতদিন দাবি করে এসেছেন, তার মেয়ের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। চুমকি কোথায় আছেন, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তখন অনেকে ধারণা করেছিলেন চুমকি দেশত্যাগ করে অন্য দেশে চলে গেছেন। কিন্তু সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করলে অনেকে ধারণা করছেন বিদেশে নয়, পরিবারের কারও সহযোগিতায় এতদিন দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন চুমকি।
দুদকের করা এ মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকি কারণের বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাসের স্ত্রী চুমকি কারণের নামে মৎস্য খামার, বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, বিপুল পরিমাণ কৃষি-অকৃষি জমি রয়েছে। প্রদীপ তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে বিপুল টাকাও রেখেছেন। আবার বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে এই দম্পতির বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, প্রদীপের স্ত্রী চুমকি গৃহিণী। ফলে তার কোনো আয়ের উৎস নেই। কিন্তু তার নামে রয়েছে মাছের খামার। দুদকে জমা দেয়া হিসাব বিবরণীতে প্রদীপ দম্পতি দেখিয়েছেন, খামারে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন তারা। সেখান থেকে চুমকি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। সেই খামার থেকে আয়ের টাকায় কিনেছেন চট্টগ্রামে জমি, গাড়ি ও বাড়ি।
হিসাব বিবরণীতে চুমকির স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- বন্দর নগরির পাথরঘাটা এলাকায় চার শতক জমি। যার মূল্য ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ওই জমিতে গড়ে তোলা ছয়তলা ভবনের মূল্য এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার। পাঁচলাইশে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা হয় ৬ গণ্ডা এক কড়া এক দন্ত জমি। যার দাম এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা। ২০১৭-১৮ সালে কেনা হয় কক্সবাজারে ঝিলংজা মৌজায় ৭৪০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। যার দাম ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
সব স্থাবর সম্পদের মূল্য দেখানো হয়েছে তিন কোটি ৫৯ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা। এছাড়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দেখানো হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা দামের প্রাইভেটকার, সাড়ে ১৭ লাখ টাকা দামের মাইক্রোবাস, ৪৫ ভরি স্বর্ণ। ব্যাংকে গচ্ছিত আছে ৪৫ হাজার ২০০ টাকা।